
উখিয়া নিউজ ডেস্ক:
বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে আবারও তোড়জোড় শুরু করেছে মিয়ানমার। নিজ দেশে ফিরে যেতে অধীর আগ্রহী অধিকাংশ রোহিঙ্গারাও। ইতিমধ্যে বেশ কিছু রোহিঙ্গা নিজ উদ্যেগে রাখাইন ফিরেও গেছে। কিন্তু ক্যাম্পগুলোতে প্রত্যাবাসন বিরোধী উগ্রতা ও উস্কানি দাতাদের নিবৃত করা সম্ভব না হলে ফের হোঁচট খাওয়ার শংকা থেকেই যাচ্ছে। আগামী ২২ আগষ্ট সাড়ে তিন হাজার রোহিঙ্গাকে প্রথম ধাপে স্হল ও নৌ পথে গ্রহণ করতে প্রস্তুতি নিয়েছে মিয়ানমার।
গত জুলাই মাসের ২৭-২৯ তারিখ মিয়ানমার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্হায়ী সচিব উ মিন্ট থু এর নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের ডেলিগেশন টিম বাংলাদেশ সফর করেন। টিমের সদস্যরা দুই দিনে কয়েক দফায় ক্যাম্প গুলোতে মুসলিম, হিন্দু ও খ্রিস্টান রোহিঙ্গাদের সাথে পৃথক পৃথক আলোচনায় অংশ নেন। মিয়ানমার সফরকারী টিমের সাথে যুক্ত হন আসিয়ানের – আহা সেন্টারের ৫ সদস্যর প্রতিনিধি দল।
রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ফিরে কি কি সুবিধা ভোগ করবে, জীবন জীবিকা কিভাবে নির্বাহ হবে ও অন্যান্য অবস্থার কি পরিবর্তন হয়েছে, যোগাযোগ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা সহ সরকারের পক্ষ থেকে গৃহীত পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন ডেলিগেশন টিম। এ সংক্রান্ত বিভিন্ন ধরণের লিফলেটও বিতরণ করা হয়।
ভয়েস অব রোহিঙ্গা নেতা সৈয়দুল আমিন জানান,মিয়ানমার টিমের সাথে আলোচনায় রোহিঙ্গারা নিজ জন্মভূমিতে ফেরার ব্যাপারে আশাবাদী হয়ে উঠে। বালুখালী ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নেতা জবর মুল্লুক জানান বর্ডার খোলা ফেলে যেভাব এসেছে সেভাবে রোহিঙ্গারা ফিরে যেতে উদগ্রীব। কিন্তু জানমালের নিরাপত্তার অভাবে কেউ মূখ খুলে বলতে পারছে না। কারণ ইতিপূর্বে এ ধরণের ফিরে যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করা বেশ কয়েক জন হত্যার শিকার হয়েছে।
থাইংখালী ক্যাম্পের রোহিঙ্গা মৌলভী হাফেজ আমির হোসেন জানান রাখাইনে যারা মুলা দেখিয়ে দেশান্তরিত হতে কাজ করেছিল, তারাই ক্যাম্প গুলোতে নানা নির্যাতন জুলুম করছে। এখানে (ক্যাম্পে) ছেলে মেয়েরা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, মহিলাদের কোন ইজ্জত নেই।জিম্মিদশায় প্রতিনিয়ত নারীর সম্ভ্রম হানি হচ্ছে। তাই অধিকাংশ রোহিঙ্গা যে কোন ভাবে রাখাইন ফিরে যেতে আগ্রহী।
কুতুপালং ক্যাম্পের রোহিঙ্গা মোঃ ইলিয়াছ জানান রোহিঙ্গাদের ফিরে যেতে যারা হুমকি, খুন,গুমের সঙ্গে জড়িত তারা সকলের চেনা জানা। তাদের নানা হুমকি উপেক্ষা করে নিজ উদ্যেগে অনেক রোহিঙ্গা গোপনে রাখাইন ফিরে যাচ্ছে। ক্যাম্প গুলোতে সন্ত্রাসীদের অত্যাচারে অতীষ্ঠ হয়ে গত ৯ আগষ্টও ২১ জন রোহিঙ্গা নারী,শিশু, পুরুষ মিয়ানমার ফিরে গেছে বলে অনেক রোহিঙ্গা জানান।
তবে বেশ কিছু রোহিঙ্গা বলেছে মিয়ানমার সরকারের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা ও নাগরিকত্বের স্বীকৃতির নিশ্চয়তা এবং তাদের উপর সংঘটিত নির্যাতনের বিচারের নিশ্চয়তা না পেলে রোহিঙ্গারা ফিরে যেতে রাজী নয়। এ অবস্থায় ফিরে না যেতে চাইলে এই দফার চেষ্টাও ফলপ্রসূ হবে কি না, তা এখনও অনিশ্চিত।
একই ভাবে গত বছরের ১৫ নভেম্বর উভয় দেশের ব্যাপক প্রস্ততি থাকার পরও রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো যায়নি। এ সময় কতিপয় দেশী বিদেশী এনজিওর গোপন ষড়যন্ত্র ও উস্কানি পেয়ে সন্ত্রাসী রোহিঙ্গাদের বাঁধার মূখে প্রত্যাবাসন কার্যক্রম পন্ড হয়ে যায়।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোঃ আবুল কালাম এনডিসি বলেন মিয়ানমার নিয়মিত তাদের নাগরিক রোহিঙ্গাদের যাচাই কৃত তালিকা দিচ্ছে। ২২ আগষ্ট মিয়ানমার সম্প্রতি ছাড়পত্র দেয়া ৩৪৫০ জন রোহিঙ্গাকে ফেরত নিতে যাচ্ছে। সবকিছু ঠিক থাকলে রোহিঙ্গাদের দ্বিমত না থাকলে সীমান্তের ঘুমধুম মৈত্রী সেতু দিয়ে স্হলপথে ও নাগাখুইয়া নৌ পথ দিয়ে রোহিঙ্গাদের প্রথম ব্যাচটি মিয়ানমার ফিরে যাওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে বলে তিনি জানান।
পাঠকের মতামত