ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: ১৭/০২/২০২৪ ১০:১৮ পিএম

চাহিদা মতো ঘুষ না দেওয়ায় চাঁদাবাজি কেন্দ্রিক আদালতে গায়েবি ও হাস্যকর প্রতিবেদন দাখিলের অভিযোগ উঠেছে গিয়াস উদ্দিন নামে এক তদন্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে করা মামলায় ১০ লাখ টাকা চাঁদা না পেয়ে একটি নির্মাণাধীন ভবন থেকে তিন সংবাদকর্মীসহ চার যুবক ১০০ ব্যাগ সিমেন্ট ও দুই টন রড নিয়ে গেছে উল্লেখ করে তদন্ত প্রতিবেদন দিয়ে রীতিমতো হাস্যরসের জন্ম দিয়েছেন তিনি। অভিযুক্ত তদন্ত কর্মকর্তা কক্সবাজার গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের ইন্সপেক্টর হিসেবে কর্মরত আছেন।

তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করেন, ‘দৈনিক খোলা কাগজ’ পত্রিকার উখিয়া প্রতিনিধি মুসলিম উদ্দিন।

তার অভিযোগ, ভূমি কেন্দ্রিক একটি চাঁদাবাজি মামলার বিষয়ে ডিবি কর্মকর্তা গিয়াস উদ্দিন তার কাছ থেকে ১ লাখ টাকা অফিস খরচ দাবি করেন। ৩০ হাজার টাকা পরিশোধ করার পর বাকি টাকা না পেয়ে তদন্ত কর্মকর্তা রড-সিমেন্ট নিয়ে গেছে বলে মনগড়া প্রতিবেদন দিয়েছেন।

এ বিষয়ে প্রতিকার পেতে তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রালয়-আইজিপি-ডিআইজিসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন।

অভিযোগ তিনি দাবি করেন, দুর্ধর্ষ শিবির ক্যাডার, রাষ্ট্রদ্রোহী, হত্যা, সন্ত্রাসী, নাশকতা, বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলা সহ দেশজুড়ে অগণিত মামলার অভিযুক্ত আসামি বশির আহমদ ওরফে বশির জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে গত ২৯ ডিসেম্বর চারজনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে কক্সবাজার আদালতে একটি মিথ্যা ও সাজানো মামলা দায়ের করেন। আদালত উক্ত মামলা কক্সবাজার জেলা গোয়েন্দা পুলিশকে তদন্তের দায়িত্ব দিলে দায়িত্বপ্রাপ্ত তদন্ত কর্মকর্তা মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন বাদী বশিরের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা, ভিত্তিহীন, বানোয়াট, বিতর্কিত একটি গায়েবি রিপোর্ট আদালতে দাখিল করে আদালত পাড়ায় হাস্যরসের জন্ম দিয়েছেন।

অভিযোগ আরো উল্লেখ করা হয়েছে, জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে উখিয়ার রাষ্ট্রদ্রোহী, হত্যা, সন্ত্রাসী, নাশকতা, বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলা সহ অগণিত মামলার অভিযুক্ত আসামি দুর্ধর্ষ শিবির ক্যাডার বশির আহমদ ওরফে বশির মাহমুদ দায়ের করা মিথ্যা ও সাজানো চাঁদাবাজি মামলা দাখিলের ক্ষেত্রে বিতর্কিত ভূমিকা রাখেন তদন্ত কর্মকর্তা। এমনকি আসামিদের সাথে গোপন বৈঠক করে অনৈতিক প্রস্তাব দেন বলেও অভিযোগে দাবি করা হয়।

ভুক্তভোগীদের পক্ষে সংবাদকর্মী মুসলিম উদ্দিন জানান, আমি জাতীয় দৈনিক ‘খোলা কাগজ’ পত্রিকার একজন নিয়মিত সাংবাদিক। সংশ্লিষ্ট এই মামলায় অভিযুক্ত অপরাপর আসামীরাও স্থানীয় সংবাদকর্মী হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছেন। অন্যদিকে অভিযোগকারী মামলার বাদী একজন ধূর্ত প্রকৃতির কুখ্যাত শিবির ক্যাডার ও রাষ্ট্র বিরোধী। তার কথিত মামলায় মানিত সাক্ষীরা সকলেই আমার বোনকে হত্যা চেষ্টা মামলার মামলার আসামি। এসব তথ্য জানা থাকার পরও তদন্ত কর্মকর্তা মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন আমাদের তাঁর কার্যালয়ে ডেকে নেন। অফিস খরচের কথা বলে টাকার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসিয়ে রেখে সেখানে নানা ধরণের বেআইনি প্রস্তাব দেন। তিনি তদন্ত প্রতিবেদন আসামিদের পক্ষে দিবেন মর্মে এক লক্ষ টাকা দাবি করেন। ওই সময় তিনি বলেন টাকা না দিলে চাঁদাবাজির প্রতিবেদন দাখিল করলে মামলায় আট বছর থেকে শুরু করে সর্ব নিম্ন চাঁদাবাজি মামলায় পাঁচ বছর সাজা হবে। কি করবেন দেখেন বলেন, অন্যথায় ১মাসের মধ্যে জেলের ভাত খাওয়াবে বলে হুমকি দেন।

এছাড়াও মামলার খরচ আছে দাবি করলে, আমার বন্ধু সাইফুলের মাধ্যমে ধার করে টাকা এনে খামে ভরে ৩০ হাজার টাকা দিই। এরপরে আরও ৫০ হাজার টাকা দাবি করলে আমি অপারগতা প্রকাশ করি। তার পরেও আমি সেখানে সাফ জানিয়ে দিই- ঘুষ হিসেবে কোনো টাকা দিতে পারবো না। অভিযোগের বিষয়ে যা সত্য তাই প্রতিবেদন দিবেন। এটাই আপনার পেশাদারিত্ব। কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তা গিয়াস উদ্দিন উক্ত প্রতিবেদনে আমাদের পূর্বের মামলার আসামিদের ‘নিরপেক্ষ সাক্ষী’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এবং প্রতিবেদনটিতে বাদীর আর্জির পুনরাবৃত্তি করেছেন। বাদী তার আর্জিতে অভিযোগ করেছে, আমরা নাকি বাদীর কাছে চাঁদা না পেয়ে রাত ১১টায় বাদীর বসত ঘর থেকে ২টন রড আর ১শ ব্যাগ সিমেন্ট নিয়ে এসেছি। যা হাস্যকর কথা।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে যাদের নিরপেক্ষ সাক্ষী বানানো হয়েছে তারা মামলার অভিযুক্ত মুসলিম উদ্দিনের দায়ের করা জিআর- ৪৮৩/১৯ইং ও তার বাবা বাদী হয়ে দায়ের করা জিআর- ৩৮৯/১৯ইং মামলার আসামি যা আইন সংগত নয়। এছাড়াও উক্ত মামলার বাদীর সাথে পূর্ব বিরোধের কারণে বিভিন্ন সময় ভুক্তভোগী মুসলিম উদ্দিনসহ তার পরিবারকে হত্যা, খুন,গুম, মিথ্যা-বানোয়াট মামলা, হামলার হুমকি দেওয়ার কারণে মুসলিম উদ্দিন বাদী হয়ে গত ২৮ ডিসেম্বর-২৩ইং থানায় সাধারণ ডায়েরি লিপিবদ্ধও করি। যার নং- ৬৪৪/২৪ইং।

ভুক্তভোগীর এমন অভিযোগের ভিক্তিতে (ভুক্তভোগীর দাবিকৃত মিথ্যা মামলার) বাদীর ফৌঃ দরখাস্ত ও তদন্ত কর্মকর্তার প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বশির আহম্মদ বাদী হয়ে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত চাঁদাবাজি ও চুরির অভিযোগ তুলে গত ৩১ ডিসেম্বর মামলাটি দায়ের করেন। আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য জেলা গোয়েন্দা পুলিশকে নির্দেশ দেন। তদন্তের জন্য মামলাটি আদালত থেকে গোয়েন্দা কার্যালয়ে পৌঁছলে অফিসার ইনচার্জ গত ০৫ জানুয়ারি হাওলা করেন। অফিসার ইনচার্জ তদন্তকারী কর্মকর্তাকে মামলা হাওলা করার মাত্র ২৫দিনের মধ্যে তদন্ত কর্মকর্তা গিয়াস উদ্দিনও বাদীর অভিযোগের সাথে মিল রেখে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন- ‘অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে’ বলে টাকা না পেয়ে বাদীর কাছ হতে অন্যায় সুবিধা গ্রহণ করে বিত্তহীন একটা প্রতিবেদন দাখিল করেছেন।

মামলায় উল্লেখ করা নির্মাণাধীন ভবনের আশেপাশে বসবাসকারী মোমেনা খাতুন, রাশেদা, মিসবাহ আজাদ, শাকুর মাহমুদ, ছকিনা খাতুনসহ স্থানীয়রা বলেন, এলাকায় চাঁদা দাবি কিংবা চাঁদা না পেয়ে লোহার রড-সিমেন্ট নিয়ে যাওয়ার মতো কোন ঘটনা ঘটেনি। এছাড়াও ১শ ব্যাগ সিমেন্ট ও ২ টন লোহার রড নিয়ে যেখানে ১০ থেকে ১২ জন শ্রমিকের বেগ পেতে হয়; সেখানে শুধুমাত্র ৪ জনই এত ভারী মালামাল নিয়ে যাওয়ার গল্প পাগল-শিশুও বিশ্বাস করবেনা।

তাদের মতে, তদন্ত কর্মকর্তা রহস্যজনক কারণে অতি উৎসাহী হয়ে একটি সাজানো মামলার অদ্ভুত প্রতিবেদন দিয়ে হাস্যরসের জন্ম দিয়েছেন। এই ধরনের কর্মকর্তাদের কারণে ভবিষ্যতে যে কেউ যে কারো বিরুদ্ধে সাজানো মামলা করতে উদ্বুদ্ধ করবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

রিপোর্টার্স ইউনিটি কক্সবাজারের সভাপতি ও নাগরিক আন্দোলনের সদস্য সচিব এইচ এম নজরুল ইসলাম বলেন, উখিয়ায় সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে একটি পরিকল্পিত সাজানো মামলায় সিমেন্ট আর লোহার রড নিয়ে যাওয়ার মতো একটি বিষয়ে দুইজন তরুণ সংবাদকর্মীকে যেভাবে জড়িয়ে তদন্ত কর্মকর্তা তদন্ত রিপোর্ট জমা দিলেন তা হাস্যকর লাগল। ঘটনাস্থলের আশপাশের কেউ দেখল না জানল না সাংবাদিকরা সিমেন্ট আর লোহার রড মাথায় করে নিয়ে যেতে কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তা সেটি দেখেছে মতো করে রিপোর্ট দিলেন যা দুঃখজনক বিষয়।মনে হচ্ছে উক্ত তদন্ত কর্মকর্তা সাংবাদিকদের উপর পূর্বের কোন ক্ষোভ থেকে নয়তো প্রতিপক্ষ থেকে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে প্রতিহিংসা মূলত রিপোর্ট দিয়েছে। বিষয়টি আমি আরো অধিকতর তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।

তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে অ্যাডভোকেট সাইফুদ্দিন খালেদ বলেন, এখন ডিজিটাল যুগ। মামলায় অভিযুক্তরা ঘটনাস্থলে ছিল কিনা সহজে লোকেশন শনাক্ত করা যায়। লোকেশন সংশ্লিষ্টের উপস্থিতি আদৌ আছে কিনা নিশ্চিত হওয়া তদন্ত অফিসারের দরকার। এছাড়াও ১শ ব্যাগ সিমেন্ট ২ টন রড ৪ জন কীভাবে নিয়ে যায়? সেটিও হাস্যকর। মিথ্যা রিপোর্ট দিয়ে হয়রানি করলে তদন্ত অফিসারকে আদালতে জবাবদিহিতা করতে হবে।

এ ব্যাপারে তদন্ত কর্মকর্তা মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তিনি তদন্তে যা পেয়েছেন তাই আদালতে জমা দিয়েছেন

পাঠকের মতামত

মিয়ানমারের আরেক গুরুত্বপূর্ণ শহর বিদ্রোহীদের দখলে

মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা দেশটির আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ শহরের দখল নিয়েছে। মিয়ানমারের জান্তাবিরোধী সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী তা’আং ...

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ও দূরপাল্লার ট্রেন পটিয়া স্টেশনে যাত্রা বিরতির দাবি

চট্টগ্রাম–কক্সবাজার ও দূরপাল্লার ট্রেন পটিয়া স্টেশনে যাত্রা বিরতিসহ বিভিন্ন দাবিতে রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিমকে স্মারকলিপি দিয়েছেন ...