
উখিয়া নিউজ ডেস্ক::
দেশের সব বিদ্যুৎ গ্রাহককে ইউনিফায়েড প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনতে কাজ করছে সরকার। অর্থাৎ কোম্পানিভেদে সারা দেশের গ্রাহকদের এখন পৃথক ক্যাটাগরির মিটার থাকলেও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সবাইকে একই ধরনের ইউনিফায়েড প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনা হবে। এ বিষয়ে ইতোমধ্যেই উদ্যোগ নিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ।
বিদ্যুৎ বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, ব্যবহৃত বিদ্যুতের চেয়ে বেশি বিল, বিল পরিশোধে ভোগান্তি, বিদ্যুৎ চুরি এবং বকেয়া বিলসহ নানা অনিয়ম-হয়রানি দূর করতে দেশের সব বিতরণ কোম্পানির আওতাধীন গ্রাহকদের ইউনিফায়েড প্রিপেইড মিটার দেওয়া হবে। বিদ্যুতের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে এটাই সবচেয়ে ভালো সমাধান। কর্মকর্তারা জানান, সব ধরনের ভোগান্তি দূর করে যদি প্রিপেইড মিটার ব্যবহারে গ্রাহকদের অভ্যস্ত করে তোলা যায়, তবে বিদ্যুৎ খাতে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হবে।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, দেশে বর্তমানে বিদ্যুতের গ্রাহকসংখ্যা ২ কোটি ৪০ লাখেরও বেশি। এর মধ্যে ৪ লাখ ৩৩ হাজার গ্রাহককে প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনা হয়েছে। ২০২১ সালের মধ্যে বিদ্যমান ও নতুন মিলিয়ে ২ কোটি ৪০ লাখ গ্রাহককে ইউনিফায়েড প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। বিদ্যুৎ চুরি ও বিলখেলাপি রোধে সবচেয়ে উপযুক্ত উপায় হিসেবে সরকার এটি বাস্তবায়ন করতে চাইছে।
ইউনিফায়েড প্রিপেইড মিটার নিয়ে ঢাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহকারী দুটি বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিÑ ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) এবং ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানির (ডেসকো) দুই কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, গ্রাহকদের আমরা প্রিপেইড মিটার দিয়েছি; কিন্তু বেশকিছু সমস্যার কারণে গ্রাহকরা সন্তুষ্ট নন। তারা জানান, অপ্রতুল ভেন্ডিং স্টেশনের কারণে বিল পরিশোধে হয়রানির শিকার হতে হয় গ্রাহকদের। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অতিরিক্ত চার্জ নেওয়া হচ্ছেÑ এমন অভিযোগও রয়েছে গ্রাহকদের। গ্রাহকরা এখনো প্রিপেইড মিটারে অভ্যস্ত হতে পারছেন না।
কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলো বিভিন্ন কোম্পানির প্রিপেইড মিটার ইউনিফায়েড সিস্টেমে ইন্টারফেজিং করছে। তবে সম্প্রতি বিদ্যুৎ বিভাগ গ্রাহকসেবা বৃদ্ধি ও ভেন্ডিং কাজ সহজ করার লক্ষ্যে স্মার্ট প্রিপেইড মিটার ক্রয়ের নির্দেশনা দিয়েছে। সে ক্ষেত্রেও কিছু সমস্যা তৈরি হয়েছে। স্মার্ট প্রিপেইড মিটার ব্যবহারে ইউনিফায়েড সফটওয়্যার ‘এপিআই’ আপডেট করার পাশাপাশি বিভিন্ন ডিভাইস আপডেটের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। কারণ একই সার্ভার থেকে ৫ হাজারের বেশি মিটার সংযোগ দেওয়া যাচ্ছে না।
বিদ্যুৎ বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, বর্তমানে প্রিপেইড মিটারিং কার্যক্রমটি বেসরকারি সংস্থা মেসার্স আইডিয়াল এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড করছে। তবে বিদ্যুৎ বিভাগ নির্দেশনা দিয়েছে প্রিপেইড মিটারের সফটওয়্যার আপটেড করাসহ বিভিন্ন টেকনিক্যাল কাজে বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলো যেন নিজস্ব লোকবল তৈরি করে, সে সংক্রান্ত নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এদিকে সম্প্রতি বিদ্যুৎ বিভাগের পরার্মশক সংস্থা পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইনের সভাপতিত্বে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে ডিপিডিসি, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি), নর্থ ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) এবং ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ওজোপাডিকো) প্রতিনিধিরা প্রিপেইড মিটার স্থাপনের ক্ষেত্রে উদ্ভূত সমস্যাগুলোর কথা তুলে ধরেন।
এ প্রসঙ্গে মোহাম্মদ হোসাইন আমাদের সময়কে বলেন, যে কোনো নতুন বিষয় গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রথমে কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে। এগুলোর সমাধান করে একটি সিস্টেম পুরোপুরি ব্যবহারে অভ্যস্ত হতে হয়। তিনি বলেন, ইউনিফায়েড প্রিপেইড মিটার স্থাপনের পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে বিদ্যুৎ খাতে একটি বড় অগ্রগতি হবে। ২০২১ সালের মধ্যে সব গ্রাহককে ইউনিফায়েড প্রিপেইড মিটার সরবরাহের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।
পাঠকের মতামত