উখিয়া নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০২/১১/২০২৪ ৯:৪৭ এএম

# ‘কিছুটা বিপর্যস্ত’ ফজলে করিম
# ‘মনোবল শক্ত’ লতিফের
#​​​ বদি থাকেন চুপচাপ

মাসখানেকের ব্যবধানে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এমপি-মন্ত্রীরা এখন ১৪ সিকের বাসিন্দা। সরকার পতনের আগেও যারা বিলাসবহুল জীবন এবং বিলাসিতায় মগ্ন ছিলেন তারা এখন দিন কাটাচ্ছেন চার দেয়ালকে সঙ্গী করে। চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে ‘হাজতি’ তিন সাবেক সংসদ সদস্যের অবস্থাও তেমনই। ‘ভিআইপি’ হিসেবে বিবেচ্য হলেও সম্প্রতি বাতিল হয়েছে তাঁদের ডিভিশন সুবিধা। নিজেদের তৈরি আলিশান বাড়ি-ফ্ল্যাট কিংবা বিলাসবহুল পাঁচ তারকা হোটেলের মতো নরম বিছানা সেখানে নেই। ফলে, সাধারণ হাজতির মতোই দিনযাপন করতে হচ্ছে তাঁদের। তবে মাঝেমধ্যে একটু বাড়তি আবদার রাখছেন তাঁরা কারা কর্তৃপক্ষের কাছে।

লতিফ-করিম ও বিষণ্ণ বদির নিউজের ভিডিও
বর্তমানে সাবেক এমপিদের মধ্যে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনের এম এ লতিফ, চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনের ফজলে করিম চৌধুরী এবং কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ)আসনের আবদুর রহমান বদি।

কারা সূত্রে জানা গেছে, তারা তিনজন দুটি পৃথক সেলে রয়েছেন। একই সেলে আছেন দুজন, অন্যজন আলাদা সেলে। তবে কে কোন সেলে রয়েছেন—তা জানা যায়নি। ডিভিশন বাতিল হয়ে যাওয়ায় তাঁরা নানাভাবে কারাগারে দায়িত্বরতদের কাছ থেকে ‘বাড়তি সুবিধা’ নেয়ার চেষ্টা করলেও শীর্ষ কর্মকর্তাদের কঠোর নির্দেশনায় তা পারছেন না। বাইরে থেকে আনা খাবার ভেতরে নিয়ে যেতে দেয়া হচ্ছে না। তবে অসুস্থতাজনিত কারণে এমএ লতিফ এবং ফজলে করিম প্রায়ই আবদার করছেন গরম পানির।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাউজানের স্বঘোষিত ‘বাদশা’ ফজলে করিমের দিন কাটছে বিষণ্ণতায়। তাঁর ‘স্ত্রী’ রিজওয়ানা ইউসুফ আইনজীবী হওয়ার সুবাদে নিয়মিত দেখা-সাক্ষাত করছেন। তাঁর সঙ্গে স্বজনরাও যাচ্ছেন বেশিরভাগ সময়ে। শারিরীক মানসিকভাবেও কিছুটা বিপর্যস্ত ফজলে করিম। গ্রেপ্তারের পর কিছুদিন ডিভিশন পেলেও কদিন আগে তা বাতিল হয়েছে। এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরীর বিরুদ্ধে চট্টগ্রামে মামলা হয়েছে ১৪টি। ১২ সেপ্টেম্বর সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া সীমান্তের আবদুল্লাহপুর এলাকা থেকে এ বি এম ফজলে করিমসহ তিনজনকে আটক করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। ফজলে করিম আখাউড়া সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন বলে বিজিবি জানিয়েছে।

অন্যদিকে ৮ অক্টোবর সন্ধ্যায় ওজু করতে গিয়ে কারা শৌচাগারে পা পিছলে পড়ে চট্টগ্রাম-১১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এম এ লতিফ ২০ দিন ছিলেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রিজন সেলে। সেখান থেকে ২৮ অক্টোবর চিকিৎসা শেষে তাঁকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে নেওয়া হয়েছে। গত বুধবার তাঁর তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। তবে পুলিশ ওই দিন থেকে ৭ দিনের মধ্যে ‘সুবিধাজনক সময়ে’ তাঁকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করবে বলে জানা গেছে।

হাসপাতালের প্রিজন সেলে থাকাকালীন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এ নেতা নিয়মিত তাহাজ্জুদ নামাজ, দোয়া-কালামে মশগুল ছিলেন। সেখানে তার নিকটাত্মীয় পরিচয়ে একজন দেখা করলেও স্বজনরা মামলার ভয়ে গা ঢাকা দিয়েছেন। তবে পরিস্থিতি অনুযায়ী মানসিকভাবে লতিফ বেশ ‘সুস্থ’ রয়েছেন বলে তাঁর সঙ্গে দেখা করা ওই নিকটাত্মীয় সূত্রে জানা গেছে। নেতাকর্মী ও আত্মীয়স্বজনকে মনোবল শক্ত রাখতেও বলেছেন তিনি। মনোবল না হারিয়ে আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে পরিস্থিতি সামলে নেওয়ার পরামর্শ তাঁর। অন্যান্যদের মতো লতিফের ডিভিশনও বাতিল হয়েছে। তবে জেল কোড অনুযায়ী, সব সুবিধা তিনি পাচ্ছেন।

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার পর নগরের মাদারবাড়ি এলাকার এক আত্মীয়ের বাসায় ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য লতিফ। স্থানীয় মসজিদে জুমার নামার শেষে বের হওয়ার সময় বিএনপি নেতাকর্মী ও স্থানীয়দের তোপের মুখে পড়েন তিনি। এরপর আবার গিয়ে ওই আত্মীয়ের বাসায় উঠলে সেই বাড়িও ঘিরে রাখে বিক্ষুব্ধ জনতা। ওইদিন সন্ধ্যায় সেনাবাহিনীর একটি টিম গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়।

এরপর ১৭ আগস্ট নগরের বায়েজিদ বোস্তামী মাজার গেট এলাকা থেকে এম এ লতিফকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তাঁকে ডবলমুরিং থানার একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। তাঁর বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলি করে হত্যার মামলাসহ মোট ১২টি মামলা হয়েছে।

এছাড়া নানা ‘ব্যঙ্গাত্মক’ বক্তব্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া উখিয়া-টেকনাফ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির মন বেশ বিষণ্ণ বলে জানা গেছে। কারাগারে একেবারে চুপচাপ থাকেন তিনি। তবে কারা ডিভিশন না পেলেও নিজ গরজে ম্যানেজ করে নিচ্ছেন কিছু সুবিধা।

‘আঁই তোয়ারে ডরাই, অভাই আঁই তোয়ারে ডরাই’, তুমি হয়তো বুঝোনা তোমার বয়স কম— এমন অসংখ্য রসাত্মক বক্তব্যে রাজনীতির ময়দান চাঙ্গা রাখা বদিকে কক্সবাজারের টেকনাফে একটি হত্যাচেষ্টা মামলায় গত ২১ আগস্ট চট্টগ্রামের জিইসি মোড় এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছিল র্যাব-৭। পরে কক্সবাজার আদালতে নেওয়া হলে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হামিমুন তামজিদের আদালত তাকে কারাগারে পাঠান। ৬ সেপ্টেম্বর রাতে তাঁকে কক্সবাজার থেকে কড়া পুলিশ পাহারায় চট্টগ্রামে নিয়ে আসা হয়।সূত্র সিভয়েস২৪

পাঠকের মতামত

দৈনিক যুগান্তরের প্রতিবেদন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে শতকোটি টাকার প্রতারণা কমলের

জসিম উদ্দিন, কক্সবাজার:: কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু-ঈদগাঁও) আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ...

টেকনাফে ফের অপহরণ, নিখোঁজ ৩

কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ঢালায় অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ট্রাকের ছয় শ্রমিককে অপহরণ করে নিয়ে ...