প্রকাশিত: ১০/০৯/২০১৭ ৭:৩৮ এএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ১:৪৭ পিএম

উখিয়া নিউজ ডেস্ক::
নির্যাতন ও হত্যার পর ভিটেমাটি ছেড়ে দলে দলে রোহিঙ্গারা চলে আসছে বাংলাদেশে। পেছনে ফেলে আসছে কয়েক পুরুষের ভিটেবাড়ি আর হাজারো স্মৃতি। কিন্তু প্রাণ সবার আগে। আর তাই জীবন বাঁচাতে এই আপ্তবাক্য মেনে হাতের কাছে যা পাওয়া যায়, সেই যৎসামান্য নিয়েই প্রাণ বাঁচাতে ভিনদেশে ছুটছে রোহিঙ্গারা।

পথে কত বিপদ। রাখাইন রাজ্যে পদে পদে সেনাবাহিনীর গুলির ভয়। আর সীমান্তে কী পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় সেই আতঙ্ক তো রয়েছেই। ক্ষুধা, পথশ্রমের ক্লান্তি আর হাজারো অপমানের ভয়। এত কিছুর পরও নিজের কিছু জিনিস সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশের সীমান্তে পৌঁছাচ্ছে রোহিঙ্গারা।

সংবাদমাধ্যম এবিসি নিউজ জানিয়েছে, সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের অনেকেই সঙ্গে নিয়ে এসেছে জরাজীর্ণ মোবাইল ফোন, মেমোরি কার্ড, এমনকি সেই ফোনে চার্জ দেওয়ার জন্য সোলার প্যানেলও। টর্চলাইট আছে অনেকের কাছে। মোবাইল ও টর্চলাইট বহনে অনেকেই ব্যবহার করছে পলিথিনের ব্যাগ।
পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা বাঁশের ঝুড়িতে করে এনেছে নানা খাবারও। নিজের জমিতে উৎপাদিত সবজি, শুকনো খাবার, মসলা, মরিচ নিয়ে এসেছে তারা। অনেকের কাছেই আছে নিত্যপ্রয়োজনীয় তৈজষ যেমন হাঁড়ি, কলসি ইত্যাদি।

পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের কজন জানান, পথে অনেকেরই মোবাইল ফোনও কেড়ে রেখে দিয়েছেন সেনাবাহিনী কিংবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। স্থানীয়দের অনেকেও পথে লুটতরাজ চালাচ্ছে। ওই দুর্বৃত্তরা প্রধানত মোবাইলের খোঁজ করে।
অনেক রোহিঙ্গাই এ কারণে মোবাইল হারালেও মোবাইল থেকে মেমোরি কার্ড আলাদা করে লুকিয়ে আনতে পেরেছে। তবে সেই মেমোরি কার্ডে তাদের স্বজনদের ছবি, ভিডিও মুছে ফেলছে। পরিবারের অন্য সদস্যদের খুঁজে বের করতে পারে।

এছাড়া ঘরহীন এই রোহিঙ্গাদের অনেকের কাছেই দেখা গেছে নানা দলিল-দস্তাবেজ ও অন্যান্য দরকারি কাগজ। জাতীয় পরিচয়পত্রও রয়েছে অনেকের কাছে। আছে বিদ্যালয় ও শিক্ষাগত সনদ। মিয়ানমারে আবার ফিরে গিয়ে নিজেদের জায়গা ফিরে পাওয়ার আশায় তারা জমির দলিল নিয়ে এসেছে বলে জানিয়েছে এবিসি নিউজ।
দীর্ঘ পথের ক্লান্তি আর বিপদ পাড়ি দিয়েও রোহিঙ্গারা অনেকে নিয়ে এসেছে পোষা হাঁস-মুরগি, পাখি। এগুলোর মধ্যে রয়েছে মুরগি, হাঁস, রাজহাঁসও।

কাঁধে বাঁশের দুই পাশে বস্তায় বেঁধে কিংবা বাঁশের ঝুড়িতে করে এসব সামগ্রী নিয়ে এসেছে রোহিঙ্গারা। এদের কেউ এসেছে নদীপথে, আবার কেউ বনজঙ্গলের মধ্য দিয়ে পায়ে হেঁটে পালিয়ে এসেছে।

গত ২৪ আগস্ট রাতে রাখাইন রাজ্যে একসঙ্গে ২৪টি পুলিশ ক্যাম্প ও একটি সেনা আবাসে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। ‘বিদ্রোহী রোহিঙ্গাদের’ সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (এআরএসএ) এই হামলার দায় স্বীকার করে। এ ঘটনার পর মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী নিরস্ত্র রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ-শিশুদের ওপর নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ চালাতে থাকে।
মিয়ানমার সরকারের বরাত দিয়ে জাতিসংঘ গত ১ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করে, মিয়ানমারে সহিংসতা শুরুর পর গত এক সপ্তাহে ৪০০ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৩৭০ জন ‘রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী’, ১৩ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, দুজন সরকারি কর্মকর্তা এবং ১৪ জন সাধারণ নাগরিক।

মিয়ানমার সরকারের আরো দাবি, ‘বিদ্রোহী সন্ত্রাসীরা’ এখন পর্যন্ত রাখাইনের প্রায় দুই হাজার ৬০০ বাড়িঘরে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। তাদের ধরিয়ে দেওয়ার জন্য এখনো রাখাইন রাজ্যে থাকা মুসলিমদের মধ্যে মাইকে প্রচার চালাচ্ছে সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

পাঠকের মতামত

সাবেক ৩০ ডিসি-ইউএনওসহ টেকনাফের সাবেক ইউএনওকে তলব, নির্বাচন সংস্কার কমিশনের বৈঠক আজ

বিগত সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত দশম, একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রশ্নবিদ্ধ তিনটি নির্বাচনে কারচুপির তথ্য ...

দেশীয় অস্ত্র নিয়ে কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের গাড়িবহরে হামলার অভিযোগ

ঢাকা থেকে বান্দরবান যাওয়ার পথে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের গাড়িবহরে হামলার অভিযোগ উঠেছে। রোববার ...

নিয়োগ দিচ্ছে ওয়ার্ল্ড ভিশন, ছুটি সপ্তাহে ২দিন

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। সংস্থাটি অ্যাসোসিয়েট সিস্টেম স্ট্রেংথেনিং অফিসার ...