প্রকাশিত: ০৪/১০/২০১৭ ৭:৩৬ এএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ১২:৪৩ পিএম

হাফেজ মুহাম্মদ কাশেম, টেকনাফ::
টেকনাফের হোয়াইক্যং উলুবনিয়া ও লম্বাবিল সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে হঠাৎ করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ হচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে। সোমবার রাতে দলে দলে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করে।

উল্লেখিত পয়েন্ট দিয়ে হঠাৎ করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঘটনায় পরস্পর বিরোধীসহ বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা জানান, মিয়ানমারের বাহিনী প্রথমে চলে আসার জন্য মাইকিং করলেও এখন বাধা প্রদান করছেন। আবার কেউ কেউ বলেছেন তাদের চলে আসার জন্য মিয়ানমারের বাহিনী সহযোগিতা করেছেন।

সেনা বাহিনী লম্বাবিল ও উলুবনিয়া রাস্তার মাথা পয়েন্টে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পে পৌছানোসহ বিভিন্ন সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছেন। চলমান সহিংসতায় রাখাইন থেকে নতুন করে পালিয়ে আসছে হাজার হাজার রোহিঙ্গা। টেকনাফের বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে তারা বাংলাদেশে ঢুকছে। সোমবার রাতেই টেকনাফের হোয়াইক্যং উলুবনিয়া সীমান্ত দিয়ে দশ হাজারের বেশী রোহিঙ্গা পালিয়ে এসেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

দীর্ঘ এক সপ্তাহ বন জঙ্গল পার করে রাখাইনের কোয়াংচিবং সীমান্ত দিয়ে তারা বাংলাদেশে আসে।

এছাড়া টেকনাফের নাইট্যংপাড়া ও শাহপরীরদ্বীপ পয়েন্ট দিয়েও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বেড়েছে।

পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারাদের অধিকাংশ রাখাইনের বুচিডং থানা এলাকার।

সরেজমিন পরিদর্শনে রোহিঙ্গাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রায় এক সপ্তাহ পূর্বে তারা ঘর থেকে বের হয়ে পাহাড়-জঙ্গল, খাল বিল পেরিয়ে এপারে ঢুকে। চলার পথে কখনো খেয়ে কখনো না খেয়ে পথ পাড়ি দিয়েছেন। নতুন করে রোহিঙ্গাদের পালিয়ে আসার কারণ সম্পর্কে জানা যায়, মূলত রোহিঙ্গা গ্রাম গুলোকে সেনারা অবরুদ্ধ করে রেখেছে কয়েক সপ্তাহ যাবৎ। গ্রাম থেকে তারা কোথাও বের হতে পারছেনা। কাজ কর্মে যেতে পারছেনা। পাশাপাশি মিয়ানমার ত্রাণ দেওয়ার কথা বলে সারিবদ্ধ করে প্রথমে ত্রাণ দিয়ে ভিডিও ছবি করা হয়। ভিডিও ছবি করা শেষে ত্রাণগুলো কেড়ে নেয়া হয়। ফলে তাদের গ্রামে খাদ্যাভাব দেখা দিয়েছে। আবার বাংলাদেশে পালিয়ে আসা আত্মীয়স্বজনের সাথে মোবাইলে আলাপ করে তারা জানতে পারে এপারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প গুলোতে পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী ও খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। তাই অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে ও খাদ্যাভাবের কারনে তারা মূলত পালিয়ে এসেছে।

রাখাইনের মংডু দাবাংসা এলাকার সত্তোর্ধ লায়লা খাতুন জানান, এক সপ্তাহ আগে রাতের অন্ধকারে গ্রামের কয়েকশো লোক একসাথে পালিয়ে হাটা শুরু করে। তারও এক সপ্তাহ আগে থেকে গ্রাম অবরুদ্ধ করে রেখেছিল সেনা ও বিজিপি সদস্যরা। বাড়িতে থাকা কর্মক্ষম এক ছেলে কাজে যেতে পারেনি সেনাদের ভয়ে। যারা গ্রাম থেকে বাহিরে যাচ্ছিল তাদের আর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। তাই গ্রামেই অবরুদ্ধ হয়ে থাকে তারা। গ্রামের বাহিরে ছিল সেনা টহল। এভাবে এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলে এক রাতে গ্রাম ছাড়ে তারা।

রাখাইনের লম্বাবিল এলাকার আবু শামা পরিবারের দশ সদস্য নিয়ে পালিয়ে এসেছেন। তিনি জানান, কয়েক সপ্তাহ ধরে অবরুদ্ধ তাদের গ্রাম। বাড়িতে কোন খাবার মজুদ ছিল না। তাই খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছিল। শেষে ক্ষুধার জালায় থাকতে না পেরে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছেন।

বুচিডং জব্বার পাড়ার আমিনা বেগম জানান, কয়েক সপ্তাহ ধরে সেনারা গ্রাম অবরুদ্ধ করে রেখেছে। মাঝে মধ্যে তাদেরকে ডেকে নিয়ে ত্রাণ দেওয়া হয়। ত্রাণ দেওয়ার দৃশ্য ভিডিও ধারন করে পরে আবার সে ত্রাণ কেড়ে নেয় সেনা ও তাদের সাথে থাকা মগ-নাডালা।

এছাড়া রোববার দিনগত রাত ১২ টার পর থেকে টেকনাফ পৌরসভার নাইট্যংপাড়া পয়েন্ট দিয়ে পালিয়ে আসে শত শত রোহিঙ্গা। মংডুর রইগ্যাবিল, বুচিডং এর থাইম্যাংখালীসহ কয়েকটি এলাকা থেকে পালিয়ে আসা এসব রোহিঙ্গারা জানান, তাদের গ্রামে অগ্নিসংযোগ কিংবা হতাহতের কোন ঘটনা না ঘটলেও খাদ্যাভাবে তারা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন। এখানে খাদ্যের কোন অভাব নেই বলে তারা আগে থেকে পালিয়ে আসা তাদের আত্মীয় স্বজনের কাছ থেকে শুনেছেন।

নাইট্যংপাড়া এলাকায় মংডু রইগ্যাবিল এলাকার মোঃ ছিদ্দিকের সাথে কথা বলে জানা যায়, পরিবারের ৮ সদস্য নিয়ে পালিয়ে এসেছেন সিদ্দিক। পরিবারে মা জুহুরা খাতুন, স্ত্রী তাসমিন আরা, বোন নুর তাহের ও দিল কায়েস, ভগ্নিপতি ইয়াছিন, ভাগিনা ইয়াছির আরাফাত ও নুর কায়েসসহ ৮ জন সদস্য রয়েছে। ৩ দিন আগে রাতের অন্ধকারে গ্রাম ছেড়েছিল তারা। ৩দিন হেঁটে রাখাইনের পেরামপুরু পৌঁছেন। গ্রামে খাবারের অভাব থাকলেও পথে খাবারের অভাব হয়নি। পথিমধ্যে জনশূন্য এমন গ্রাম পেয়েছেন যেসব গ্রামে লোকজন না থাকলেও তাদের বাড়িতে আলু চাল মজুদ ছিল। সেখান থেকে নিয়ে রান্না করে খাবার খেয়েছেন। সেখান থেকে নৌকায় নাফ নদী পেরিয়ে পৌেেছন টেকনাফের নাইট্যংপাড়া এলাকায়। এখানে পৌঁছার সাথে সাথে কিছু মৌলানা তাদেরকে দেড় হাজার টাকা করে প্রদান করে ও খাবার দেন। বাংলাদেশে পৌঁছতে পেরে ভালো লাগছে।

একই নৌকায় রাখাইনের পেরামপুরু হয়ে টেকনাফের নাইট্যংপাড়া পৌঁছেন বুচিডং থাইম্যাংখালীর সৈয়দুল ইসলাম। সাথে নিয়ে এসেছেন মা-বোনসহ ৬ জনকে। তাদের গ্রামে সেনারা অভিযান না চালালেও অবরুদ্ধ করে রেখেছিল। ফলে কাজকর্মের অভাবে গ্রামে খাদ্যাভাব দেখায় পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছে।

টেকনাফ-২ বিজিবির উপ-অধিনায়ক শরীফুল ইসলাম জোমাদ্দার জানিয়েছেন, উলুবনিয়া সীমান্ত থেকে প্রচুর রোহিঙ্গা ঢুকেছে। তবে নির্দিষ্ট সংখ্যা বলা যাচ্ছেনা। তাদেরকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাঠানো হচ্ছে। ##

পাঠকের মতামত

দুই রোহিঙ্গা জাতীয় পরিচয়পত্র বানাতে ভৈরবে এসে আটক

জাতীয় পরিচয়পত্র বানাতে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে এসেছিলেন দুজন রোহিঙ্গা। ...

মিয়ানমারের আরেক গুরুত্বপূর্ণ শহর বিদ্রোহীদের দখলে

মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা দেশটির আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ শহরের দখল নিয়েছে। মিয়ানমারের জান্তাবিরোধী সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী তা’আং ...

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ও দূরপাল্লার ট্রেন পটিয়া স্টেশনে যাত্রা বিরতির দাবি

চট্টগ্রাম–কক্সবাজার ও দূরপাল্লার ট্রেন পটিয়া স্টেশনে যাত্রা বিরতিসহ বিভিন্ন দাবিতে রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিমকে স্মারকলিপি দিয়েছেন ...