আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০২/০৪/২০২৫ ১:৩৭ পিএম

মিয়ানমারে গত শুক্রবার (২৮ মার্চ) ভয়াবহ ভূমিকম্পে সাগাইং অঞ্চলের তিনটি মসজিদ মুহূর্তেই ধসে পড়ে। এ সময় মসজিদে নামাজ আদায় করছিলেন শত শত মুসলমান। এ ঘটনায় সবচেয়ে বড় মসজিদ মায়োমার ভেতরে থাকা প্রায় সব মুসল্লি মারা যান। মায়োমা মসজিদের সাবেক ইমাম সোয়ে নাই ১৭০ জন প্রিয় মানুষকে হারানোর শোক পালন করছেন যা তাকে বাকরুদ্ধ করেছে।



গত শুক্রবার মিয়ানমারের সাগাইং অঞ্চলে আজান দেয়ার সাথে সাথে শত শত মুসলিম রমজান মাসের শেষ জুমার নামাজ আদায় করবেন বলে মধ্য মিয়ানমারের পাঁচটি মসজিদে ছুটে যান।

স্থানীয় সময় ১২টা ৫১ মিনিটে একটি মারাত্মক ভূমিকম্প আঘাত হানে মিয়ানমারে। মুহূর্তেই তিনটি মসজিদ ধসে পড়ে, যার মধ্যে সবচেয়ে বড় মসজিদটি ছিল মায়োমা, যার ভেতরে থাকা প্রায় সবাই মারা যান

শত শত কিলোমিটার দূরে থাই সীমান্তবর্তী শহর মায়ে সোতে বসে মায়োমা মসজিদের সাবেক ইমাম সোয়ে নাই ভূমিকম্পটি অনুভব করেছিলেন।

এরপর সময় বাড়ার সাথে সাথে তিনি জানতে পারলেন যে তার প্রায় ১৭০ জন আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব এবং তার সাবেক সহকর্মী মারা গেছেন ভূমিকম্পে। যাদের বেশিরভাগই সেই সময়টাতে মসজিদে ছিলেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ শহরের মুসলিম সম্প্রদায়ের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন।

সোয়ে নাই বিবিসিকে বলেন, ‘প্রাণ হারানো সবার কথা আমার মনে পড়ছে। তাদের ক্ষতিগ্রস্ত সন্তানদের কথাও। তাদের মধ্যে ছোট ছোট শিশুরাও আছে যারা তাদের পরিবারকে হারিয়েছে। এ বিষয় নিয়ে যখনই কথা বলছি আমার চোখের পানি আটকে রাখতে পারছি না।’

শুক্রবার মিয়ানমারের সাগাইং এবং দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়ের কাছে ভূমিকম্প আঘাত হানে। এখন পর্যন্ত ভূমিকম্পে ২,৭০০ জনেরও বেশি মানুষ মারা গেছেন বলে জানা গেছে। উদ্ধারকারীরা ধ্বংসস্তূপ থেকে এখনও মৃতদেহ খুঁজতে অভিযান চালাচ্ছেন। তাই সময় বাড়ার সাথে সাথে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, যদিও এই অঞ্চলটি তার প্রাচীন বৌদ্ধ মন্দিরের জন্য পরিচিত ছিল, তারপরও শহরগুলোতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মুসলিম জনগোষ্ঠীও বাস করতেন।

সোমবার দেশটির নেতা মিন অং হ্লাইং-এর দেয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মসজিদে নামাজ পড়ার সময় ভূমিকম্পের আঘাতে আনুমানিক ৫০০ মুসলিম মারা গেছেন।



সাগাইংয়ের প্রত্যক্ষদর্শীরা বিবিসিকে জানিয়েছেন যে, শহরের যে রাস্তায় মসজিদগুলো ছিল, সেই রাস্তা এবং মায়োমা স্ট্রিট সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাস্তার ওপর অনেক বাড়িঘর ধসে পড়েছে।

শুধুমাত্র মায়োমাতেই ধসে ৬০ জনেরও বেশি মানুষ চাপা পড়েন বলে জানা গেছে, অন্যদিকে মায়োডাও এবং মোয়েকিয়া মসজিদেও আরও অনেকে মারা গেছেন। মঙ্গলবারও মৃতদেহ উদ্ধার করার কাজ চলেছে।

সোয়ে নাই এর মতে, মসজিদের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা এ ঘটনার পর পালানোর চেষ্টা করেছিলেন বলে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। তার সম্প্রদায়ের বেঁচে থাকা সদস্যদের কাছ থেকে একাধিক প্রতিবেদনে খবর পেয়েছেন বলে জানান সোয়ে।



তিনি জানান, প্রধান প্রার্থনা কক্ষের বাইরে, যেখানে মুসল্লিরা ওযু করেন সেখানে অনেকের মৃতদেহ পাওয়া গেছে। কিছু মৃতদেহ অন্যদের হাত ধরে থাকতে দেখা গেছে, যা দেখে মনে হচ্ছে ভেঙে পড়া ভবন থেকে তাদের টেনে বের করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

ভূমিকম্পে যারা মারা গেছেন তাদের মধ্যে সোয়ের স্ত্রীর ভাই এবং ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের মধ্যে সাবে সহকারী ইমামও ছিলেন, যাকে তিনি তার দৃঢ় কর্মনীতি এবং কোরআন তেলাওয়াতে অসাধারণ প্রতিভার জন্য স্মরণ করেছেন।

সোয়ে বলেন, যখন সম্প্রদায়ের কারও মৃত্যুর খবর তিনি শুনেছেন তখনই তিনি শোকের সাগরে ডুবে গেছেন। বিধ্বস্ত বোধ করেছেন।



তিনি বলেন, ‘তাদের মধ্যে অনেকে আছেন যারা নিকটাত্মীয় ছিলেন না, তবুও তারা আমাকে সর্বদা স্বাগত জানাতেন। আমাকে অনুসরণ করতেন এবং আমরা একসাথে প্রার্থনা করতাম।’

পরে নিহতদের মৃতদেহ মান্দালয়ের বৃহত্তম মসজিদে দাফনের জন্য রেখে দেয়া হয়।

সূত্র: বিবিসি

পাঠকের মতামত

কক্সবাজারের সাবেক জেলা জজ-ডিসিসহ পাঁচজনের বিচার শুরু

কক্সবাজারের মাতারবাড়ি কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত নথি জালিয়াতির মামলায় কক্সবাজারের সাবেক জেলা প্রশাসক ...

প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ

সম্প্রতি একটি সংবাদমাধ্যমে আমার নামে “সাত হাজার পিস ইয়াবাসহ একজন আসামিকে ক্যাম্পে এনে পরবর্তীতে আর্থিক ...

নাইক্ষ্যংছড়িতে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের কলেজ নেতা আবরার গ্রেফতার

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি থেকে নিষিদ্ধ ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের এক নেতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) ...