উখিয়া নিউজ ডেস্ক::
অভিবাসন বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা আই ও এম বলছে, মিয়ানমার থেকে গত কয়েক সপ্তাহে প্রায় ২১ হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে, যাদের এক বড় অংশই হচ্ছে নারী ও শিশু ।
মিয়ানমারে-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিম এলাকাগুলোতে সরকারি বাহিনীর সশস্ত্র অভিযান শুরু হবার পর থেকে সেখান থেকে হাজার হাজার লোক ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে। এদের সংখ্যার ব্যাপারে জাতিসংঘ এর আগে যে হিসেব দিয়েছিল, আই ও এমের দেয়া এ সংখ্যা তার দ্বিগুণেরও বেশি।
পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা পরিবারগুলো বেশির ভাগই বাংলাদেশের টেকনাফে এসে আশ্রয় নিচ্ছে। এরকম ১৩ জনের একটি দলের দেখা পেয়েছি আমি, যাদের সবাই নারী ও শিশু।
শুরুর দিকে তারা স্থানীয় একটি বাংলাদেশী পরিবারে আশ্রয় পেয়েছিলেন, কিন্তু এখন আবার তাদের ঠাঁই হয়েছে রাস্তায়।
টেকনাফের একটি অস্থায়ী ক্যাম্পে গিয়ে দেখলাম, সরু রাস্তার দু ধারে ছোট ছোট মুদি দোকান। দোকানগুলোর এক পাশে বসে আছেন নারী-শিশু মিলিয়ে ১২ জন। তাদের সাথে একজন পুরুষ।
তারা বলছেন, তাদের পরিবারের সব পুরুষ লোককে হত্যা করার পর, আরেকজন পুরুষের সহযোগিতায় তারা বনে জঙ্গলে রাত কাটিয়ে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছেন।
এই ব্যক্তির নাম মোহাম্মদ সলিম। সলিমের মত আরো শত শত মানুষ রয়েছেন এই ক্যাম্পে।
সলিম বলছিলেন, ঠিক তের দিন আগে রাখাইন রাজ্যের সিস্ধাপাড়া এলাকাতে হামলা হলে সলিম তার পরিবার নিয়ে পালিয়ে আসেন। সাথে নিয়ে আসেন অন্য একটি পরিবারের শিশু, নারী মিলে ছয়জনকে।
এই দুই পরিবারের তিনজন পুরুষ সদস্যকে এক হামলায় হত্যা করা হলে সলিম পরিণত হন তাদের দলের একমাত্র পুরুষে। ১৩ জনকে সাথে নিয়ে পালিয়ে তিনি প্রথম কেরিপাড়া নামক স্থানে যান।
সেখানে দুইদিনের মাথায় আবারো হামলা হয়, বাড়ি ঘরে চালানো হয় ভাংচুর। সেলিমের মা হামিদা বলছিলেন, সেখান থেকে “লুডাইং নামক এলাকার একটি জঙ্গলে তিন দিন ছিলেন। খাবারদাবার ছাড়া অনাহারে কাটাচ্ছিলেন তারা।
সেখানেও সেনাবাহিনী তাদের ঘিরে ফেলে। হামিদা বলছিলেন “মহিলাদের কাছে থাকা সোনার গহনা কেড়ে নেয়া হয়”।
লুডাইং জংগল থেকে এবারে তারা যান জিম্বুলখালি এলাকাতে। সেখানকার বিভিন্ন জংগলে পাঁচদিন ঘোরেন। এর পাশের এলাকাতে আবারো হামলা হয়েছে শুনতে পেয়ে তারা আসেন কুরখালি এলাকায়। এর মধ্যে ১০ দিন পার হতে চলেছে।
সন্ধ্যের দিকে চারদিকে অন্ধকার নেমে এলে তারা একটা ছোট নৌকায় করে বাংলাদেশের টেকনাফ সীমান্তে এসে পড়েন। রাত তখন অনেক।
নৌকার মাঝি তীরে না নামিয়ে তাদের নদীর তীরে মাছের ঘেরে নামিয়ে দেয়। সলিমের বোন আম্বিয়া বলছিলেন, কিভাবে তারা নদী পাড়ি দিলেন।
আম্বিয়া বলছিলেন “সেখানে গলা পর্যন্ত পানি। অত রাতে বাচা-কাচ্চা নিয়ে কিভাবে ঐ পানি পার হয়েছি, সে কষ্ট ভাষায় প্রকাশ করার মত না। একবার মনে হল, আমার বাচ্চাটা বুঝি পানিতে ভেসে গেল”।
নদীর পাড়ি দিয়ে কয়েকটি পরিবারের আশ্রয় চান তারা। কিন্তু প্রাণ বাঁচানোর জন্য ১০ দিন বিভিন্ন বন-জংগলে ঘুরে অবশেষে টেকনাফে পৌঁছালেও কেউ তাদের আশ্রয় দেয় নি।
পরিবার দুটি গত তিনদিন টেকনাফে একটি পরিবারে আশ্রয় পেয়েছিলো, কিন্তু এখন তারা আশ্রয়হীন। এই প্রতিবেদন তৈরি করা পর্যন্ত টেকনাফের অস্থায়ী একটি ক্যাম্পের মধ্যে রাস্তার পাশে বসে ছিলেন তারা।
মিয়ানমারের রাখাইন স্টেটের হামলা ও নির্যাতনের যে অভিযোগ এই দুটি পরিবার করেছে তার সত্যতা নিরপেক্ষভাবে যাচাই করা সম্ভব হয় নি, কারণ সেখানে কোন সংবাদদাতা বা মানবাধিকার কর্মী প্রবেশ করতে পারছে না।
পাঠকের মতামত