প্রকাশিত: ০৯/০১/২০১৭ ৭:৩২ এএম

চকরিয়া প্রতিনিধি::
সিলেটে কথিত ছাত্রলীগ নেতা বখাটে বদরুলের হাতে নৃশংসতার শিকার খাদিজা আক্তারের মতো আরেকটি ঘটনা ঘটেছে কক্সবাজারের চকরিয়ায়। প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় এবার ব্লেড দিয়ে ক্ষত-বিক্ষত করা হয়েছে এক মাদরাসা ছাত্রীকে। এতে ঐ ছাত্রীর দুই হাতের একাধিক রগ কেটে গেছে। এই অবস্থায় ওই ছাত্রীকে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরে উন্নত চিকিৎসার (অস্ত্রোপচার) জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গতকাল রবিবার সন্ধ্যায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ওই ছাত্রী হাসপাতালের বিছানায় যন্ত্রণাকাতর ছিলেন। এর আগে ৫ জানুয়ারি সকালে মাদরাসায় যাওয়ার পথে উপজেলার কোনাখালীর এক বখাটে তাকে লাঞ্ছিত করার পর ব্লেড দিয়ে উপর্যুপুরি হাতের রগ কেটে দেয়। এতে সে ঘটনাস্থলেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে এবং এতে তার অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়। পরে স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।

অভিযোগ উঠেছে, এ ধরনের চাঞ্চল্যকর ঘটনাকে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। ঐ বখাটেকে আটকের পর স্থানীয় লোকজন পুলিশে সোপর্দ করার চেষ্টা করলেও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান তাকে ছাড়িয়ে নেন এবং পরে সালিশ বৈঠকে এর বিচার হবে বলে ছাত্রীর পরিবারকে আশ্বাস দেন। এদিকে ঘটনার তিনদিন পেরিয়ে গেলেও গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত থানায় কোন মামলা দায়ের করা হয়নি। পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি ছড়িয়ে পড়লে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশে গতকাল বিকেল থানার ওসি মো. জহিরুল ইসলাম খান ও পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) কামরুল আজমসহ বিপুল সংখ্যক পুলিশ বখাটেকে ধরতে নিষ্ফল অভিযান চালায়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কামরুল আজম গতকাল সন্ধ্যায় দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘ইতোমধ্যে ছাত্রীর পরিবারের সদস্য এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলেছি। ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। ছাত্রীর পরিবারকে থানায় মামলা দায়েরের জন্য লিখিত এজাহার জমা দিতে বলেছি। বখাটেকে আটক করা গেছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে কামরুল আজম বলেন, ‘বিপুল সংখ্যক পুলিশ তাকে ধরতে অভিযান চালিয়েছে। কিন্তু আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় তাকে ধরা সম্ভব হয়নি। তবে অচিরেই তাকে পুলিশ আটক করতে সক্ষম হবে।’

হামলার শিকার ঐ ছাত্রীর বাড়ি কোনাখালী ইউনিয়নে এবং সে স্থানীয় দাখিল মাদরাসার ছাত্রী। আর বখাটের নাম মিনহাজ উদ্দিন (১৮)। সে একই ইউনিয়নের তিন নম্বর ওয়ার্ডের খাতুর বাপের পাড়ার আবুল কাশেমের ছেলে ও স্থানীয় একটি স্কুলের এসএসসি পরীক্ষার্থী।

এদিকে সিলেটের খাদিজার মতো চকরিয়ায় ঐ ছাত্রীর উপর হামলার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। ইতোমধ্যে চকরিয়ার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন স্বাধীন মঞ্চ ও পিস ফাইন্ডারসহ একাধিক সংগঠন ওই হামলায় জড়িত বখাটে মিনহাজকে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে।

আহত ছাত্রীর পরিবারের সদস্যরা জানান, লেখাপড়া করে আলোকিত হতে চেয়েছিল মেয়েটি। একমাত্র মেয়ে হিসেবে মা-বাবার স্বপ্ন ছিলো তাদের মেয়েটি শিক্ষিত হয়ে ঘরে ‘আলো’ জ্বালাবে। মা-বাবার সেই স্বপ্নপূরণ করতে মেয়েও পড়ালেখায় বেশ মনোনিবেশ করে। কিন্তু মেয়েটির স্বপ্নপূরণের পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় বখাটে মিনহাজ।

চিকিৎসকরা জানান, ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত ছাত্রীর দুই হাতের পাঁচটি রগ কেটে গেছে। প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। এ কারণে তিনদিন চিকিৎসার পরও অনেকটা সংজ্ঞাহীন সে। মাঝে মাঝে চেতন হলেও যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে সে। তাই জরুরিভিত্তিতে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন।

আহত ঐ ছাত্রীর বাবা মুদি দোকানদার। তিনি মেয়ের এমন অবস্থায় ভেঙে পড়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমার একমাত্র মেয়ের সাথে যারা এমন নিষ্ঠুর কাজ করেছে তাদের উপযুক্ত শাস্তি চাই। এছাড়া মেয়ের অস্ত্রোপচার করতে অনেক টাকার প্রয়োজন হবে। এতো টাকা কোত্থেকে জোগাড় করবো তা নিয়ে এখন অনেক দুশ্চিন্তায় আছি।

ছাত্রীর বাবা অভিযোগ করেন, ‘ঘটনার পরই হামলাকারী বখাটে মিনহাজকে প্রত্যক্ষদর্শীরা আটক করে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের কাছে হস্তান্তর করে। কিন্তু চেয়ারম্যান সালিশ-বৈঠকে বিষয়টির সমাধান করা হবে জানিয়ে তাকে ছেড়ে দেন। পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় মেয়েকে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে মিনহাজের বাবা আবুল কাশেম ঘটনাটি মিমাংসা করার জন্য সাদা কাগজে স্বাক্ষর দিতে চাপ প্রয়োগ করেন। কিন্তু আমি স্বাক্ষর না দেওয়ায় তিনি আমাকেও দেখে নেওয়ার হুমকি দেন।’ ছাত্রীর বাবা আরো অভিযোগ করেন, ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে মিনহাজের পরিবার মোটা অংকের মাধ্যমে চেয়ারম্যান ও স্থানীয় ওয়ার্ড সদস্যকে ম্যানেজ করেছে।

অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে কোনাখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান দিদারুল হক সিকদার বলেন, ‘আমি বিষয়টি জানার পর ঐ ছাত্রী সুস্থ হলে সালিস-বৈঠকের মাধ্যমে জড়িত বখাটের শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছি। তাছাড়া বখাটের পরিবারের কাছ থেকে কিছু টাকাও ঐ ছাত্রীর চিকিৎসার জন্য ব্যবস্থা করে দিয়েছি। তবে আমার বিরুদ্ধে আনা ঘটনা ধামাচাপা দেওয়া এবং মোটা অংকের টাকা নেওয়ার অভিযোগ মোটেও সত্য নয়।’

চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাহেদুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি জানার পর বখাটে মিনহাজকে ধরতে পুলিশকে বলেছি এবং ওই ছাত্রীর চিকিৎসার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেছি।’

পাঠকের মতামত

মিয়ানমারের আরেক গুরুত্বপূর্ণ শহর বিদ্রোহীদের দখলে

মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা দেশটির আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ শহরের দখল নিয়েছে। মিয়ানমারের জান্তাবিরোধী সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী তা’আং ...

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ও দূরপাল্লার ট্রেন পটিয়া স্টেশনে যাত্রা বিরতির দাবি

চট্টগ্রাম–কক্সবাজার ও দূরপাল্লার ট্রেন পটিয়া স্টেশনে যাত্রা বিরতিসহ বিভিন্ন দাবিতে রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিমকে স্মারকলিপি দিয়েছেন ...