উখিয়া নিউজ ডেস্ক::
কাদায় মুখ থুবড়ে পড়ে আছে ১০ মাসের ছোট্ট শিশু। এ যেন মুখ থুবড়ে পড়ে আছে মানবতা। প্রাণে বাঁচতে সীমান্ত পার হতে চেয়েছিল রোহিঙ্গা শিশুটি। কিন্তু তাকে একেবারে না ফেরার দেশেই পাঠিয়ে দিয়েছে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী পুলিশ-বিজিপি।
মিয়ানমার সীমান্তে নাফ নদীর তীরে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকা ওই রোহিঙ্গা শিশুর পরিচয় মিলেছে। মাত্র ১০ মাসের ছোট্ট শিশুটির নাম তোহাইত।
মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নৃশংসতা থেকে বাঁচতে রোহিঙ্গাদের ১৫ জনের একটি দল বাংলাদেশের দিকে আসার চেষ্টা করছিল। মংডুর এই রোহিঙ্গারা একটি নৌকায় চেপে বসে কিছুদূর যেতেই নাফ নদীতে নৌকাটি ডুবে যায়।
রোববার রাতের এই ঘটনায় দুই শিশুসহ এক ডজনেরও বেশি রোহিঙ্গার প্রাণহানি ঘটেছে বলে ধারণা ভূক্তভোগীদের। নিহতদের মধ্যে দুই শিশু ও এক নারীর মরদেহ ভাটার সময় নাফ নদীর মিয়ানমারের তীরের কাদায় আটকে যায়।
পরে নাফ নদীর মিয়ানমার অংশের তীরে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকতে দেখা যায় এক শিশুকে। হলুদ রঙের একটি শার্ট পরিহিত ছোট্ট এই শিশুর মুখ থুবড়ে পড়া ছবি ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল।
ছবিতে দেখা যাচ্ছে, শিশুটির নিথর দেহ পড়ে রয়েছে মাটিতে। কর্দমাক্ত দেহ উপুড় হয়ে পড়ে রয়েছে।
এই শিশুর সঙ্গে একই নৌকায় যাত্রী হয়েছিলেন টেকনাফে সোমবার সকালে উদ্ধার হওয়া রেহেনা বেগম। ছবি দেখানোর পর তিনি জানিয়েছেন, নিহত শিশুটির নাম তোহাইত। তার বয়স ১০ মাস।
তোহাইত মংডুর বড় গওজবিল এলাকার জাফর আলম ও ছেনুয়ারার সন্তান। সে সম্পর্কে রেহেনার খালাত ভাই। যে স্থানটি দেখা যাচ্ছে তা মিয়ানমারের ওপারের চিত্র।
সোমবার রাতে টেকনাফে এক বাড়িতে আশ্রয় নেয়া অবস্থায় সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান প্রাণে বেঁচে যাওয়া রেহেনা।
সেনা অভিযানে নিহত রোহিঙ্গাদের অনেকেই উত্তরাঞ্চলের মংডুর রাইম্মাবিল গ্রামের বাসিন্দা। গত ৯ অক্টোবর থেকে সেনাবাহিনীর রক্তাক্ত এ অভিযানে এখন পর্যন্ত আড়াই শতাধিক রোহিঙ্গার প্রাণহানি ঘটেছে।
গত বছরের শেষ দিকে যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়া থেকে বাঁচার আশায় বাবা-মায়ের সঙ্গে ছোট্ট নৌকায় চেপে বসেছিল তিন বছর বয়সী শিশু আয়লান কুর্দি। ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে আশ্রয়ের আশায় যেতে চেয়েছিল গ্রিসে। কিন্তু সাগরের উত্তাল ঢেউ কেড়ে নিয়েছে আয়লান কুর্দিকে। সাগর তীরে মুখ থুবড়ে পড়েছিল আয়লান কুর্দির নিথর দেহ।
সাগর তীরে শিশু আয়লানের পড়ে থাকা মরদেহ হয়ে ওঠে বিপন্ন মানবতার প্রতীক। এনিয়ে সেসময় বিশ্বজুড়ে তুমুল সমালোচনার ঝড় ওঠে।
এবার একই চিত্র আবারও ভেসে ওঠল মিয়ানমারের নাফ নদীর তীরে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘জাতিগত নিধনের’ শিকার রোহিঙ্গাদের প্রতীক তোহাইতকে বলা হচ্ছে ‘আয়লান রোহিঙ্গা’।
পাঠকের মতামত