
চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়কের লোহাগাড়ায় নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে অবাধে চলছে নিষিদ্ধ যানবাহন। যার ফলে ছোট–বড় দুর্ঘটনা বাড়ার পাশাপাশি হচ্ছে বিদ্যুতের অপচয়। এছাড়া মহাসড়কস্থ প্রতিটি স্টেশনে প্রতিনিয়ত সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট। ঈদের আগে দোহাজারী হাইওয়ে থানা মহাসড়কে নিষিদ্ধ যান চলাচল বন্ধের জন্য কয়েক দফা মাইকিং করে। কিন্তু এসব যানের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে দেখা যায়নি।
জানা যায়, ২০১৫ সাল থেকে দেশের ২২টি মহাসড়কে তিন চাকার যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু আইনে নিষিদ্ধ হলেও সেই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে মহাসড়কে চলছে সিএনজি টেক্সি, ব্যাটারি রিকশা, টমটম, মালবাহী নসিমন ও লেগুনা। এই মহাসড়কে স্বল্প দূরত্বে চলাচলের গণপরিবহন না থাকায় এসব নিষিদ্ধ যানবাহন ব্যবহার করেন যাত্রীরা। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে কিছু দালাল চক্র টোকেন দিয়ে মহাসড়কে এসব নিষিদ্ধ যান চলাচল করছে বলে অভিযোগ সচেতন মহলের। ২০২০ সনের ২১ মার্চ মহাসড়কে উপজেলার চুনতি জাঙ্গালিয়া এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় লেগুনার ১৫ যাত্রী ঘটনাস্থলে নিহত হয়েছিল। এছাড়া গত ১১ এপ্রিল মহাসড়কে আমিরাবাদ ইউনিয়নের বার আউলিয়া কলেজের সামনে বাসের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষে সিএনজি টেক্সির ৫ যাত্রী আহত হন।
গতকাল শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) সরেজমিনে দেখা যায়, নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে আইন–শৃঙ্খলা বাহিনীর সামনেই মহাসড়কে দাপটের সাথে অবাধে চলাচল করছে নিষিদ্ধ যান সিএনজি চালিত টেক্সি, ব্যাটারি চালিত রিকশা, টমটম, মালবাহী ভ্যান, নসিমন ও লেগুনা। স্বল্প দূরত্বের জন্য মহাসড়কে সহজলভ্য যান হিসেবে এসব নিষিদ্ধ যান বেশ জনপ্রিয়। পরিবহন স্বল্পতায় অনেকটা বাধ্য হয়ে এসব যানে চলাচল করছে যাত্রীরা। আর এতে অকালে মহাসড়কে ঝরে যাচ্ছে প্রাণ। এসব নিষিদ্ধ যানের কারণে উপজেলা সদর বটতলী স্টেশন, পদুয়া স্টেশন, আধুনগর স্টেশন ও চুনতি স্টেশনে প্রতিনিয়ত যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। দুর্ভোগ পোহাতে হয় স্থানীয়সহ দূরপাল্লার যাত্রীদের। এসব নিষিদ্ধ যানের অধিকাংশ চালক অপ্রাপ্ত বয়স্ক ও অদক্ষ। যার ফলে মহাসড়কে প্রায় সময় দুর্ঘটনা ঘটে থাকে।
স্থানীয় সচেতন মহল জানান, এমনিতেই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে তিন চাকার এসব গাড়ি মহাসড়কে চলাচল করছে। এরমধ্যে প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে অন্য যানবাহনের সাথে ধাক্কা লেগে দুর্ঘটনা ঘটে, অনেক সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায়। এতে যান থেকে ছিটকে পড়ে অধিকাংশ যাত্রী আহত হন। কোনো নিয়ন্ত্রণ না থাকায় মহাসড়কে তিন চাকার নিষিদ্ধ যান রীতিমতো দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এসব নিষিদ্ধ যানের চালকরা কোনো নিয়মের ধার ধারেন না। বিশেষ করে ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর কিছুদিন হাইওয়ে ও ট্রাফিক পুলিশ দায়িত্ব পালনে বিরত থাকার সুযোগে বেপরোয়াভাবে তিন চাকার নিষিদ্ধ গাড়ি মহাসড়কে চলাচল শুরু করে। এরপর থেকে এসব যানের লাগাম ধরা হয়নি। ফলে মহাসড়কে নিষিদ্ধ যান আগের চেয়ে দ্বিগুণ হয়েছে।
সিরাজুল ইসলামসহ একাধিক দূরপাল্লার গাড়ি চালক জানান, মহাসড়কে তিন চাকার যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। এতে গাড়ি চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এছাড়া অভ্যন্তরীণ সড়ক থেকে বিভিন্ন স্থানে সামনে–পেছনে না দেখে হঠাৎ এসব যান মহাসড়কের উঠে পড়ে। ফলে দূরপাল্লার যানবাহনের চালকেরা অনেক সময় নিয়ন্ত্রণ হারান। এসব যানের কারণে ঘন ঘন ব্রেক কষতে হয়। মহাসড়ক সংলগ্ন প্রতিটি স্টেশনে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। অনেক সময় এসব নিষিদ্ধ যান মহাসড়কে চলার মধ্যে হঠাৎ মোড় নিতেও দেখা যায়।
নিরাপদ সড়ক চাই লোহাগাড়া শাখার সভাপতি মোজাহিদ হোসাইন সাগর জানান, মহাসড়কে তিন চাকার যান চলাচল নিষিদ্ধ করেছে সরকার। কিন্তু চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়কে দাপটের সাথে চলছে আগের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি সংখ্যক এসব নিষিদ্ধ যান। যার ফলে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। হচ্ছে প্রাণহানী। মহাসড়কস্থ প্রতিটি স্টেশনে সৃষ্টি হচ্ছে ব্যাপক যানজট। নিষিদ্ধ এসব যান মহাসড়কে চলাচল বন্ধ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান তিনি।
লোহাগাড়া ট্রাফিক পুলিশ বক্সের ইন্সপেক্টর (টিআই) মো. হাসানুজ্জামান হায়দার জানান, তিন চাকার যানের বিরুদ্ধে প্রতিদিন মামলা দেয়া হচ্ছে। কেবল গত ছয় মাসে প্রায় ৯ শতাধিক মামলা হয় তিন চাকার যানের বিরুদ্ধে। এসব যানের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
দোহাজারী হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শুভ রঞ্জন চাকমা জানান, মহাসড়কে চলাচলকারী নিষিদ্ধ তিন চাকার যানের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। জনবল সংকটের মধ্যেও প্রতিদিন ৪–৫টি যানের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। এছাড়া হাইওয়ে পুলিশের কোনো সদস্য টোকেন বাণিজ্যির সাথে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।
পাঠকের মতামত