প্রকাশিত: ১৪/০৯/২০১৭ ৭:৪৩ এএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ১:৩৫ পিএম

উখিয়া নিউজ ডেস্ক::
রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো বর্মী বাহিনীর নিষ্ঠুরতার চিহ্নগুলো স্বচক্ষে দেখলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত বিদেশি কূটনীতিকরা। বর্বরতার শিকার রোহিঙ্গা নারী-পুরুষরা দুনিয়াকে দেখালেন তারা কতটা নির্মমতার শিকার। সীমান্তের বাসিন্দা, মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তা এবং ত্রাণকর্মীরাও জানালেন মৃত্যুকূপ থেকে পালিয়ে আসা কয়েক লাখ রোহিঙ্গাকে নিয়ে কতটা সংকটে রয়েছে বাংলাদেশ। নির্যাতিত রোহিঙ্গারা তাদের ভাষায় কূটনীতিকদের সামনে তুলে ধরেছেন মিয়ানমার বাহিনীর বর্বরতার চিহ্ন। বলেছেন, ‘চঁন, আরার ওয়র হনডইল্লা জুলুম অইয়ে’। নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের দুর্দশা দেখার পাশাপাশি বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা দেখলেন কিভাবে মিয়ানমারের সংখ্যালঘু এ সম্প্রদায়কে জাতিগতভাবে নির্মূলে রাষ্ট্রীয় মদতে তাদের আবাসস্থল, গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত এবং সেখানে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগের চিত্র দেখে আবেগাপ্লুত হন কূটনীতিকরা। তারা অভিন্ন সুরে মানবতার এ সংকটের রাজনৈতিক সমাধান চাইলেন। বললেন- এটি চলতে পারে না। মানবতার এ সংকটের রাজনৈতিক সমাধান আজ জরুরি হয়ে পড়েছে। তারা এ-ও বললেন, মিয়ানমারকে অবশ্য সহিংসতা বন্ধ করতে হবে। রাখাইনে তাদের নাগরিকদের ফেরা এবং নাগরিকত্বসহ শান্তিপূর্ণ বসবাসের সব রকম সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। ৪৩ দেশের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার, চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স এবং জাতিসংঘসহ ৪টি আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধান গতকাল সকাল থেকে দুপুর অবধি ছিলেন রোহিঙ্গা অধ্যুষিত কক্সবাজারের উখিয়া, কতুপালং এবং বান্দরবান সীমান্তের তুমব্রু ও কোণাপাড়ায়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আমন্ত্রণে রোহিঙ্গাদের অবস্থা সরজমিনে দেখতে গিয়েছিলেন তারা। সেখানে কূটনীতিকরা প্রত্যক্ষ করেন, মিয়ানমারের রাখাইনে চলমান সহিংসতা থেকে প্রাণে বাঁচতে বাংলাদেশে আসা ৩ লাখ ৭০ হাজার রোহিঙ্গা কিভাবে, কোন অবস্থায় রয়েছেন। একেবারে সীমান্ত লাগোয়া রাখাইনের গ্রামগুলো কিভাবে পুড়ে ছারখার করে দেয়া হয়েছে। নো ম্যান্‌স ল্যান্ডে অবস্থানরত হাজার হাজার রোহিঙ্গা কিভাবে, কোন অবস্থায় রয়েছেন। তাদের বাংলাদেশে পুশ করতে বর্মী বাহিনী কিভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। তাদের ফেরত যাওয়ার পথ বন্ধ করতে সীমান্ত এলাকায় মিয়ানমারের পুঁতে রাখা মাইন বিস্ফোরণে রোহিঙ্গারা কিভাবে আক্রান্ত হচ্ছেন- সেটাও তাদের সামনে তুলে ধরা হয়। এ সময় কূটনীতিকদের সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, সচিব মো. শহীদুল হকসহ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন উইংয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন শ্রীলঙ্কা, লিবিয়া আর উত্তর কোরিয়া ছাড়া বাংলাদেশে থাকা সব কূটনৈতিক মিশনের প্রধানরা রোহিঙ্গা পরিস্থিতি সরজমিনে দেখতে কক্সবাজার যান। সেখানে বন্ধু রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, ক্যাম্প এবং রাস্তার দুই পাশে অস্থায়ী আশ্রয়ে থাকা রোহিঙ্গারা নীরবে কতটা দুর্ভোগ সইছে তা আপনারা স্বচক্ষে দেখলেন। আপনারা দেখলেন তারা কিভাবে বাংলাদেশ বর্ডারের নো ম্যানস ল্যান্ডে রয়েছেন। এতদিন মিডিয়ায় দেখেছেন। আমরা আপনাদের ব্রিফও করেছি। এবার বাস্তব পরিস্থিতি নিজের চোখে দেখলেন। আপনারা দেখেছেন রাখাইনের গ্রামগুলো এখনও কিভাবে জ্বলছে। বাংলাদেশ বর্ডার থেকেই আপনারা অনেকেই ধোঁয়ার কুণ্ডুুলি দেখেছেন। দেখেছেন সেখানকার গাছপালা কিভাবে পুড়ে গেছে। আন্তর্জাতিক সমপ্রদায় সব সময় বাংলাদেশের পাশে ছিল। আমাদের প্রত্যাশা, মাঠপর্যায়ের বাস্তব পরিস্থিতি (গ্রাউন্ড রিয়েল সিচুয়েশন) দেখার পর এবার পরবর্তী পদক্ষেপের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক মহল আরো সরব হবে। আরো জোরালোভাবে বাংলাদেশের পাশে থাকবে। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীও এমনটাই আশা করেন। বলেন, মিয়ানমারের নাগরিকদের নিজ দেশে ফেরত যাওয়া এবং রাখাইনে তাদের নিজ নিজ বাড়িতে বসবাসের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করাই যে রোহিঙ্গা সংকটের একমাত্র সমাধান বিশ্ব সম্প্রদায় এটি এখন এখনও ভালোভাবে উপলব্ধি করবে এটাই কামনা করি। একই সঙ্গে কূটনীতিকদের সরজমিনে অবস্থা দেখা আমাদের পরবর্তী কূটনৈতিক কার্যক্রমেও সহায়ক হবে। রোহিঙ্গা পরিস্থিতি সরজমিনে দেখানোর আয়োজনের জন্য বিদেশি সব কূটনীতিকের পক্ষ থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং সরকারকে ধন্যবাদ জানান ঢাকাস্থ ডাচ রাষ্ট্রদূত লিওনি মার্গারেথা কুয়েলিনারি। রোহিঙ্গা পরিস্থিতিকে ‘ভয়াবহ’ আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, গ্রাউন্ড সিচুয়েশন আমরা দেখলাম। ক’মাস আগেও আমি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গিয়েছিলাম। আমার বিবেচনায় পরিস্থিতির আগের চেয়ে অনেক অবনতি হয়েছে। এ অবস্থায় আমাদের দুটি বিষয় বিবেচনায় নিতে হবে। প্রথমত: যারা আশ্রয় নিয়েছে তাদের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান জরুরি প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশ সরকার কাজ করছে। সঙ্গে রয়েছে আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলো। নেদারল্যান্ডস সরকার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে মিলে তাদের জীবন বাঁচাতে পাশে রয়েছে। আমরা মনে করি, সেখানে সহিংসতা বন্ধ হতে হবে। দ্বিতীয়ত: এ সংকটের একটি সমাধান হওয়া উচিত। মানবতা এখানে আক্রান্ত। এটি চলতে পারে না। আমরা মনে করি এর একটি রাজনৈতিক সমাধান হওয়া জরুরি। নো-ম্যানস ল্যান্ডে থাকা রোহিঙ্গাদের অবস্থা পরিদর্শনকালে এবং পরে কক্সবাজারে কথা বলেন বৃটিশ হাইকমিশনার অ্যালিসন ব্লেইক। অনেকটা আবেগাপ্লুত কণ্ঠে তিনি বলেন, আমি দেখেছি মানবতা এখানে কিভাবে সংকটে আছে। আমরা চাই এই সংকটের সমাধান হোক। তাদের আশ্রয় দেয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ। ধন্যবাদ স্থানীয় প্রশাসন এবং মানবতার ডাকে সাড়া দেয়া হৃদয়বান ব্যক্তিদের। রাখাইনে সহিংসতা বন্ধে বৃটেন বরাবরই সোচ্চার। এখনও বলছি, আজ আমরা স্বচক্ষে দেখেছি, তারা কতটা সংকটে রয়েছে। অবশ্য সহিংসতা বন্ধ হওয়া উচিত। এটি বন্ধ করতে হবে। নিজ দেশে তাদের ফেরত এবং শান্তিপূর্ণ বসবাসের সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করতে মিয়ানমারকে কাজ করতে হবে। রেডক্রসসহ অনেকে ত্রাণকার্যক্রমে রয়েছে, বৃটেনও আক্রান্ত মানবতার পাশে রয়েছে। ইতালির রাষ্ট্রদূত মারিও পালমা বলেন, ১৯৮২ সাল পর্যন্ত মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বসহ তাদের সমাজের পূর্ণ সদস্য হিসাবে স্বীকার করতো। এখন তাদের সেটি করেন না। এটি করতে হবে। তাদের নাগরিকত্ব নিয়ে মিয়ানমার আজ যে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে সেটি কাটিয়ে ওঠতে হবে। তাদের নিজ দেশে স্বেচ্ছায় ফেরত যাওয়ার সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। চীনের রাষ্ট্রদূত মা মিং কিয়াংয়ের কাছে গণমাধ্যমের প্রশ্ন ছিল তিনি যা দেখেছেন তাতে পরিস্থিতি সম্পর্কে তার মূলায়ন কি? এ সংকটের সমাধান নিয়ে তারা কি ভাবছেন? জবাবে তিনি বলেন, সমাধান হতে হবে, সমাধান সামনে আছে বলেই মনে করি। মার্কিন ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জোয়েল রিফম্যান রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে অংশীদার হিসাবে বাংলাদেশের পাশে থাকার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। বলেন, আমরা মানবতার এ সংকটের সমাধান চাই। সুত্র : মানবজমিন

পাঠকের মতামত

দুই রোহিঙ্গা জাতীয় পরিচয়পত্র বানাতে ভৈরবে এসে আটক

জাতীয় পরিচয়পত্র বানাতে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে এসেছিলেন দুজন রোহিঙ্গা। ...

মিয়ানমারের আরেক গুরুত্বপূর্ণ শহর বিদ্রোহীদের দখলে

মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা দেশটির আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ শহরের দখল নিয়েছে। মিয়ানমারের জান্তাবিরোধী সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী তা’আং ...

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ও দূরপাল্লার ট্রেন পটিয়া স্টেশনে যাত্রা বিরতির দাবি

চট্টগ্রাম–কক্সবাজার ও দূরপাল্লার ট্রেন পটিয়া স্টেশনে যাত্রা বিরতিসহ বিভিন্ন দাবিতে রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিমকে স্মারকলিপি দিয়েছেন ...