
ডেস্ক রিপোর্ট::
চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে টেকনাফ পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের নির্বাচিত কাউন্সিলর মো. একরামুল হকের কথিত ক্রসফায়ারে মৃত্যুতে প্রশ্ন উঠেছে। স্থানীয়রা দাবি করেছেন, তার বিরুদ্ধে মাদককারবারির অভিযোগ নেই। এলাকায় সজ্জন হিসেবেই তিনি বেশি পরিচিত। ২০০৮ সালের একটি ষড়যন্ত্রমূলক মামলার রেশ ধরে তাকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তালিকাভুক্ত করা হয়।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি অংশ বলছে, একটি সুন্দর উদ্যোগ নষ্ট করতে সরকারের ভেতর কূচক্রী মহল কলকাঠি নাড়ছে। এ ক্রসফায়ারের ঘটনায় স্থানীয় সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি নেপথ্যে থেকে কলকাঠি নেড়েছেন। বদির সঙ্গে রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের বলি হয়েছেন একরামুল। নিহত একরামুল টেকনাফ উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি ও টেকনাফ বাস স্টেশন ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ছিলেন। এ ছাড়া ছিলেন টেকনাফ হাইয়েস মাইক্রো শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক আহ্বায়ক।
দেশব্যাপী চলমান মাদকবিরোধী অভিযানের মধ্যে শনিবার গভীররাতে র্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন কক্সবাজারের টেকনাফ পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের তিনবার নির্বাচিত কাউন্সিলর মো. একরামুল হক। স্থানীয় অনেকে একরামুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ বলে দাবি করলেও র্যাব বলছে, একরামুল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী এবং তার বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের একটি ইয়াবা মামলা রয়েছে। রাজধানী ঢাকায় তার বাড়ি, ফ্ল্যাট ও গাড়ি রয়েছে বলেও দাবি করেছে র্যাব।
গত রাত ১০টায় টেকনাফ মডেল হাইস্কুল মাঠে একরামুল হকের জানাজা অনুষ্ঠিত হয় হয়। জানাজায় প্রায় ৩০ হাজার মানুষ অংশ নেয়।
‘বন্দুকযুদ্ধে’ একরামুল নিহতের ঘটনায় গতকাল প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বরাবর আবেগঘন খোলা চিঠি দিয়েছেন কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মাহবুবুর রহমান চৌধুরী। চিঠিতে তিনি বলেছেন, ‘ইয়াবাবিরোধী অভিযানের দোহাই দিয়ে প্রশাসনে ঘাপটি মেরে বসে থাকা একাত্তরের দোসররা আপনার সন্তানকে হত্যা করেছে।’
এদিকে মাদকবিরোধী অভিযানে শনিবার রাত থেকে রবিবার ভোর পর্যন্ত কথিত বন্দুকযুদ্ধে আরও ১০ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে চট্টগ্রামের সীতাকু-, কুষ্টিয়া, নোয়াখালী, খুলনা, ময়মনসিংহ, চাঁদপুর, বাগেরহাট ও ঠাকুরগাঁওয়ে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ আটজন নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে ঝিনাইদহ ও মেহেরপুরে মাদককারবারিদের নিজেদের মধ্যে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ দুজন নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে পুলিশ।
এ নিয়ে গত ১৩ দিনে র্যাব ও পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে এবং মাদক ব্যবসায়ীদের নিজেদের মধ্যে গোলাগুলিতে নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৬।
বিভিন্ন জেলা থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরÑ
কক্সবাজার : টেকনাফ উপজেলা সদর ইউনিয়নের নোয়াখালীপাড়া এলাকার মেরিন ড্রাইভ সড়কের পাশে রাত সাড়ে ১২টার দিকে র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে পৌর কাউন্সিলর মো. একরামুল হক নিহত হন। তিনি টেকনাফ পৌর এলাকার কায়ুখালীপাড়ার মৃত আবদুল সাত্তারের ছেলে।
চট্টগ্রাম : সীতাকু- উপজেলার মুরাদপুর ইউনিয়নের গুলিয়াখালী সাগর উপকূলীয় বেড়িবাঁধ এলাকায় রাত ১টার দিকে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ এক ব্যক্তি নিহত হন। এ সময় তার তিন সহযোগীকে আটক করা হয়। নিহতের নাম রেহান উদ্দিন (২৮)। তিনি উপজেলার গোলাবাড়িয়া গ্রামের মৃত মালিউল হকের পুত্র। তার বিরুদ্ধে হত্যা, ডাকাতি ও ইয়াবা পাচারসহ সাতটি মামলা রয়েছে।
মেহেরপুর : গাংনী উপজেলার কাথুলি ইউনিয়নের গাঁড়াবাড়িয়া বাথান মাঠ এলাকায় রাত ২টার দিকে দুদল মাদককারবারির মধ্যে গোলাগুলিতে হাফিজুল ইসলাম ওরফে হাফি (৪৫) নামে একজন নিহত হন। পুলিশের ধারণা, নিজেদের মধ্য মাদকের ভাগাভাগি নিয়ে এ ঘটনা ঘটতে পারে। হাফিজুল ইসলাম গাংনী চৌগাছা গ্রামের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা হারেজ উদ্দীনের ছেলে।
ঝিনাইদহ : ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়া মহাসড়কের শৈলকুপা উপজেলার বড়দা জামতলা নামক স্থানে রাত আড়াইটার দিকে দুদল মাদককারবারির মধ্যে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ লিটন মোল্লা ওরফে গাঁজা লিটন (৩৫) নামে এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হন। লিটন উপজেলার শেখপাড়া এলাকার আবদুল হাকিম মোল্লার ছেলে। তার বিরুদ্ধে ১০টি মাদকের, একটি চাঁদাবাজি ও একটি পুলিশ অ্যাসল্ট মামলা রয়েছে।
কুষ্টিয়া : শহরের নিশান মোড় হাউজিং ‘ডি’ ব্লকের মাঠে রাত দেড়টার দিকে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ হালিম ম-ল (৩৫) নামে এক ব্যক্তি নিহত হন। হালিম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী এবং সদর উপজেলার বড়িয়া এলাকার সলিম ম-লের পুত্র।
নোয়াখালী : সোনাইমুড়ী উপজেলার বগাদিয়া ইজতেমা মাঠে রাত সাড়ে ১২টার দিকে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ হাসান ওরফে ইয়াবা হাসান নামে এক মাদককারবারি নিহত হন। হাসান উপজেলার বানুয়াই গ্রামের মৃত হাফিজ মিয়ার ছেলে। তার বিরুদ্ধে মাদক আইনে ২১টি এবং অস্ত্র আইনের তিনটি মামলা রয়েছে। শনিবার বেলা ১১টার দিকে সোনাইমুড়ী বাজার এলাকা থেকে ইয়াবা হাসানকে আটক করা হয়েছিল।
খুলনা : দীঘলিয়া উপজেলার বারাকপুর গ্রামের মজুদখালী শ্মশানঘাট এলাকায় রাত পৌনে ৩টার দিকে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে আবুল কালাম মোল্লা নামে এক মাদককারবারি নিহত হন। কালামের বাড়ি যশোরের অভয়নগর উপজেলার সিদ্দিপাশা গ্রামে। তার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য আইনে ৫টি মামলা রয়েছে।
চাঁদপুর : মতলব দক্ষিণ উপজেলার হাজীর ডোন এলাকায় রবিবার ভোরে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে সেলিম (৩৭) নামে এক মাদককারবারি নিহত হন। তিনি উপজেলার উপাদী ইউনিয়নের সালামত উল্লাহর ছেলে। তার বিরুদ্ধে সাতটি মাদক মামলা রয়েছে।
বাগেরহাট : চিতলমারী উপজেলার কলাতলা ইউনিয়নের চিংগুড়ি গ্রামে শনিবার গভীর রাতে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মিতুল বিশ্বাস (৪৫) নামে এক মাদককারবারি নিহত হন। মিতুল চিংগুড়ি গ্রামের খোকা বিশ্বাসের ছেলে। তার বিরুদ্ধে নয়টি মাদক, একটি হত্যা ও পুলিশের ওপর হামলার তিনটিসহ মোট ২০টি মামলা রয়েছে।
ঠাকুরগাঁও : রানীশংকৈল উপজেলার নেকমরদ-মহারাজা সড়কের দুর্লভপুর নামক স্থানে রবিবার ভোরে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে রফিকুল ইসলাম ওরফে তালেবান (৫২) নামে এক মাদককারবারি নিহত হন। তিনি উপজেলার ভোরনিয়া শেয়ালডাঙ্গী গ্রামের হুমায়ুন কবিরের ছেলে। তার বিরুদ্ধে রানীশংকৈল ও বালিয়াডাঙ্গী থানায় ৮টি মামলা রয়েছে।
ময়মনসিংহ : শহরের বলাশপুর মরাখোলা এলাকায় রবিবার ভোরে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ সঞ্জয় সরকার (৩০) নামে এক ব্যক্তি নিহত হন। সঞ্জয় শহরের সেহড়া মুন্সিবাড়ির নারায়ণ সরকারের পুত্র।
পাঠকের মতামত