
করোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে কক্সবাজারের টেকনাফের শামলাপুরে তৈরি হল ৬০ শয্যার আইসোলেশন ও চিকিৎসা কেন্দ্র (আইটিসি)। আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটির (আইআরসি) উদ্যোগে নির্মিত এই কেন্দ্রটি চালু করা হচ্ছে আগামী সপ্তাহেই।
কোভিড-১৯ (করোনাভাইরাস) স্বাস্থ্যসুবিধা সম্পর্কে শরণার্থীদের মধ্যে কোনো আশঙ্কা ও দ্বিধা না থাকে, সেটা কাটাতে বাছাই করা শরণার্থীদের আইটিসি দেখানোর জন্য নিয়ে যাওয়া হল শুক্রবার (১৯ জুন)।
জাতিসংঘের অভিবাসন বিষয়ক সংস্থা আইওএম-এর সাইট ম্যানেজমেন্ট এবং সাইট ডেভেলপমেন্টের (এসএমএসডি) উদ্যোগে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতি দলে ২০ জন করে ১৩টি ছোট ছোট দলে বিভক্ত করা হয় তাদের। এদের মধ্যে ছিলেন শামলাপুর শরণার্থী শিবিরের ধর্মীয় নেতা, মাঝি বা কমিউনিটি নেতা, চরম বিপদাপন্ন ব্যক্তি (ইভিআই), নারী এবং কিশোরী, যুবক এবং শিক্ষাকেন্দ্রের শিক্ষক।
ছোট ছোট এই দলগুলো আইটিসির সবকিছু ঘুরে ঘুরে দেখেন। আইওএম, আইআরসি এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)-এর কর্মীরা তাদের কাছে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের সবকিছু তুলে ধরেন। তাদের নানান জিজ্ঞাসার জবাবও দেন। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়ের পক্ষে ক্যাম্প ইনচার্জ পুলক কান্তি চক্রবর্তী এই পরিদর্শন কার্যক্রম মনিটর করেন। তিনি নিজেও ক্যাম্পে এ ধরনের সচেতনতামূলক কার্যক্রমের প্রশংসা করেন।
কোভিড-১৯ সম্পর্কিত স্বাস্থ্যসেবার জন্য বাংলাদেশের কক্সবাজারে মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে নিয়োজিত সংস্থাগুলো তাদের কর্মকাণ্ডের পরিধি বাড়াচ্ছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলো নতুনভাবে সজ্জিত করা এবং নতুন নতুন সিভিয়ার একিউট রেস্পিরেটরি ইনফেকশন (এসএআরআই-গুরুতর তীব্র শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ) আইসোলেশন অ্যান্ড ট্রিটমেন্ট সেন্টার (আইটিসি) নির্মাণ করা হচ্ছে। পাশাপাশি শরণার্থী এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীদের এসব সেবা ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য গুজব এবং ভুল তথ্য দূর করার প্রচেষ্টা বাড়ানোও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বসবাসরত মমতাজ বললেন, ‘এর আগে, আমরা জানতাম না আইসোলেশন ও চিকিৎসা কেন্দ্রের ভেতরে কী কী আছে। কেন এই কেন্দ্রটি তৈরি করা হয়েছিল— এটাও আমাদের জানা ছিল না।’
কিন্তু সম্প্রতি জাতিসংঘের অভিবাসন বিষয়ক সংস্থা আইওএম আয়োজিত আইটিসি সেবা দেখার পর সেই মমতাজই এখন বলছেন, ‘আইটিসি কী জিনিস, সেটা এখন আমাদের কাছে স্পষ্ট। এটি আমাদের খুব উপকারে আসবে। আমি আমার পরিবার, আত্মীয়স্বজন এবং প্রতিবেশীদের কাছেও বিষয়গুলো বলবো, যাতে তাদের ধারণাও স্পষ্ট হয়।’
শিবিরের রোহিঙ্গা ধর্মীয় নেতা ওমর বললেন, ‘স্বাস্থ্যসেবার উদ্যোগটি খুবই ভালো লেগেছে। এই কেন্দ্রটি রোগী রাখা এবং সেবা প্রদানের জন্য যথেষ্ট ভালমানের।’
আইওএম কক্সবাজারের সাইট ম্যানেজমেন্ট এবং সাইট ডেভেলপমেন্ট কো-অর্ডিনেটর (টেকনাফ) কোনি তাংগারা বলেন, ‘আইটিসি-টি চালু হওয়ার আগে সাধারণ মানুষকে প্রথম দেখার সুযোগ দেওয়ার জন্য সফরটির আয়োজন করা হয়েছিল। সাধারণ মানুষকে অবহিত করা, আইটিসি-এর ভেতরে আইসোলেশন পদ্ধতি বোঝানো এবং তাদের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানার মাধ্যমে জবাবদিহিতা বাড়ানোর জন্যও এটি গুরুত্বপূর্ণ ছিল।’
পাঠকের মতামত