কক্সবাজার প্রতিনিধি :
টেকনাফের পাচারকারীরা যে কতবড় শক্তিশালী তা জানান দিতে গোয়েন্দা পুলিশের উপর হামলা চালিয়েছে ইয়াবা কারবারীরা। গত বৃহস্পতিবার (১৮ মে) রাত সাড়ে ৯ টার সময় টেকনাফের নাজিরপাড়া গ্রামে ঘটিয়েছে এ ঘটনা। এ সময় কক্সবাজার গোয়েন্দা পুলিশ’র (ডিবি) দু’এএসআই সহ ৪ পুলিশ সদস্য ও গাড়ী চালক আহত হয়। ভাংচুর করা হয় তাদের ব্যবহৃত গাড়ী। এ সময় একজনকে আটক করে টেকনাফ থানায় স্শ্লংষ্ট ধারায় মামলা রুজু করে গোয়েন্দা পুলিশ। ইয়াবা পাচারকারীরা এ ধরনের শক্তি কোন জায়গা থেকে পেলো তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরী বলে মত দিয়েছেন কেউ কেউ। জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাতে ইয়াবা পাচারের সংবাদ পেয়ে কক্সবাজার গোয়েন্দা পুলিশের একটি টিম এসআই সুমনের নেতৃত্বে টেকনাফ সদর ইউনিয়নের নাজির পাড়া গ্রামের ইউপি সদস্য এনামুল হকের বাড়ী ঘেড়াও করে। এ খবরটি স্থানীয় মসজিদের মাইকে ঘোষনা দেয় তার সর্মথকরা। মাইকে বলা হয়, স্থানীয় ভুট্টো বাহিনীর লোকজন ডিবি দিয়ে এনাম মেম্বারকে তুলে নিতে আসে। মাইকে আওয়াজ শুনে শত শত নারী পুরুষ ঘেড়াও করে ডিবি’র গাড়ীতে হামলা চালায়। এতে প্রাইভেট নোয়া মাইক্রোটি (চট্টমেট্্েরা-চ-১১-১৬৮৬)তছনছ হয়ে যায়। আহত হয় পুলিশের এএসআই আসাদুজ্জামান,ফিরোজ মিয়া , কনেস্টবল আল আমিন , সুমাইয়া সুলতানা ও গাড়ী চালক বাপ্পি। পরে টেকনাফ মডেল থানা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে পুরস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। গাড়ীসহ ডিবি সদস্যদের উদ্ধার করে। এ ঘটনায় এসআই সুমন বাদী হয়ে এনামুল হককে প্রধান আসামী করে ৯ জন নামীয় ও ১৫০ জন অজ্ঞাত আসামী করে টেকনাফ মডেল থানায় মামলা দায়েক করে। এ ঘটনায় পুলিশ নাজিরপাড়া গ্রামের আব্দুল হাকিমের ছেলে শামসুল আলম নামের এক যুবককে আটক করে আদালতে সোর্পদ করেছে বলে জানিয়েছেন টেকনাফ মডেল থানার ওসি মোঃ মাঈন উদ্দিন খান। গোয়েন্দা পুলিশের এসআই সুমন জানান, গোয়েন্দা সংবাদের ভিত্তিতে শীর্ষ ইয়াবা পাচারকারী এনামুল হকের বাড়ী ঘেড়াও করার সাথে সাথে মাইকে ঘোষনা দিয়ে শত শত উশৃংখল নারী পুরুষ ইট পাটকেল ও লাঠি নিয়ে হামলা চালায় আমাদের উপর, ভাংচুর করা হয় গাড়ী। এ ঘটনায় ডিবি পুলিসের ৪ জন ও গাড়ী চালক আহত হয়। তিনি আরো জানান, শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী এনাম ও তার বাহিনীর সদস্যরা ২০১৫ সালের ২ এপ্রিলও টেকনাফে র্যাব সদস্যদের উপর হামলা চালায়। তার বিরুদ্ধে এ ঘটনার আগে ইয়াবা, সরকারী কাজে বাধাসহ ৯টি মামলা রয়েছে। খোজঁ নিয়ে জানা যায়, এলাকায় ইয়াবা পাচার ও সামাজিক আধিপত্য নিয়ে আপন চাচাতো ভাই নুরুল হক ভুট্রো বাহিনীর সাথে বিরুধ চলে আসছে এনাম বাহিনীর। গত কয়েকদিন আগে এ ঘটনায় পরস্পর বিরুধী মামলাও হয়েছে। এর জের ধরে দু’প্রুফের মধ্যে চলছে চরম উত্তেজনা। তবে গোয়েন্দা পুলিশ মনে করছে দু’প্রুফের মধ্যে বিরুধ থাকলেও ডিবি’র উপর হামলার ঘটনায় দু’পক্ষের লোকজন জড়িত রয়েছে। তাই মামলাতে দু’বাহিনী প্রধানকেও আসামী করা হয়েছে । এ প্রসংগে এনামুল হক বলেন, সব মামলায় জামিনে থাকার পরও কেন আমার উপর এ ধরনের আচরণ করা হচ্ছে বোধগম্য নয়। একটি ষড়যন্ত্রকারী মহল প্রশাসনিক ভাবে হয়রানি করতে অপতৎপরতা চালাছে। এ ঘটনা তারই ধারাবাহিকতা। তবে নুরুল হক ভুট্রো বলেন, হামলা করলো কারা আর আসামী করা হলো আমাকে তা কিভাবে সম্ভব । তিনি এ বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত দাবী করেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ৬ মে কক্সবাজারের এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইয়াবা ব্যবসায়ী যতবড় শক্তিশালী হোক ছাড় দেওয়া হবেনা এমন ঘোষনা দেন। এরপর নতুন করে তৎপর হয়ে ওঠে আইনশৃংখলা বাহিনী। ইতিমধ্যে পুলিশ ও বিজিবি’র বিভাগীয় পর্যায়ের কর্মকর্তারা সংশ্লিষ্টদের সাথে বসে ইয়াবা উদ্ধার ও পাচারকারীদেরে ধরতে বিভিন্ন কৌশল নির্ধারন করে। জোরদার করে ইয়াবা বিরুধী অভিযান। যদিওবা বড় ধরনের সাফল্য এখনো দেখাতে পারেনি পুলিশ। তবে বেশ কয়েকটি ইয়াবার চালান আটক করে কর্মকান্ড জিইয়ে রেখেছে। এ সময়ে আগামী ২৪ মে টেকনাফ সফর করার কথা রয়েছে পুলিশ প্রধান এ কে এম শহিদুল হকের। এরফলে গোটা কক্সবাজারে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট ইয়াবা উদ্ধারে ব্যাপক তৎপরতা শুরু করে। যদিওবা এসব অভিযান নিয়ে নানা বদনামও ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে চিহ্নিত ইয়াবা কারবারীদের ধরে মোটা অংক নিয়ে ছেড়ে দেওয়ার মত গুরতর বদনাম পুলিশের পিছু ছাড়ছেনা। যদিও বা পুলিশ এসব ইয়াবা বিরুধী কর্মকান্ডকে ব্যহত করার অপপ্রয়াস বলে দাবী করে আসছেন। টেকনাফ মডেল থানার ওসি মোঃ মাঈন উদ্দিন খান বলেন, “পুলিশ অভিযান না করলেও বদনাম, করলেও বদনাম। এরপরও টেকনাফ মডেল থানার পুলিশ সদস্যরা বেশ কিছু বড় ইয়াবার চালান উদ্ধার করেছে। এবং বেশ কয়েকজন পাচারকারীকে আটক করে আদালতে সোর্পদও করেছে। ” তিনি আরো বলেন, এখানে ইয়াবা পাচারকারী সিন্ডিকেট বেশ শক্তিশালী। চেনা যায় না কে পাচারকারী, কে পাচার বিরুধী। অনেকে আবার জনপ্রতিনিধি হয়ে সমাজে খবরদারীও করে চলেছেন। যার কারনে অভিযান পরিচালনা কঠিন হয়ে পড়েছে। টেকনাফ উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী বলেন, “ইয়াবা কারবারে জড়িত গডফাদারদের চিহ্নিত করা অনেকটা সহজ এখানে। এ পর্যন্ত যে সমস্ত পাচারকারী ইয়াবাসহ আটক হয়েছে, এরা কার নিকট আত্বীয়, এদের তদ্ধিরকারক কে, কারা এদের পৃষ্টপোষক, কে কার কাছে ইয়াবা গুলো নিয়ে যাচ্ছে ইত্যাদি রির্পোট গুলো পর্যালোচনা করলেই তো গড ফাদারের তালিকা বের হয়ে আসে। আর এসব গড ফাদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া না হলেও ইয়াবা পাচার বন্ধ কিভাবে হবে। ” তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গোষনাকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, নেত্রী বুঝতে পেরেছেন ইয়াবা ব্যবসার সাথে বড় বড় রাগব বোয়ালরা জড়িত। তাই তিনি ঘোষনা দিয়েছেন তাদের শায়েস্তা করতে হবে, প্রশাসনকে এ ব্যাপারে জিরো ট্রলারেন্স অবস্থান নিতে হবে।সুত্র, টেকনাফ ভিশন
কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার সদর ইউনিয়নের ডেইলপাড়ার বাসিন্দা মো. আমিন। টেকনাফ ও চট্টগ্রাম নগরে তাঁর জমি ...
পাঠকের মতামত