প্রকাশিত: ১৪/০৭/২০১৬ ৭:২২ এএম

joggeউখিয়া নিউজ ডেস্ক::

বাংলাদেশের জঙ্গিপনার অন্যতম সহযোগী মিয়ানমারের উগ্রবাদী রাষ্ট্রবিহীন রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের হাত ধরে এ দেশের কথিত নামকরা জঙ্গি, সন্ত্রাসীরা ভয়ংকর পথে পা বাড়িয়েছে। কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে জঙ্গিদের নিরাপদ আস্তানায় পরিণত হয়েছে নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত শরণার্থী শিবিরগুলো। সাম্প্রতিক সময়ে টেকনাফের নয়াপাড়া শরণার্থী শিবিরের নিরাপত্তায় নিয়োজিত আনসার ব্যারাকে হামলা, আনসার কমান্ডার হত্যা ও অস্ত্র গোলাবারুদ লুটের ঘটনায় রোহিঙ্গা জঙ্গি সন্ত্রাসীদের সম্পৃক্ততার অভিযোগ উঠেছে। ১৯৯৬ সালে উখিয়ার গহীন জঙ্গলে একটি প্রশিক্ষণ ক্যাম্প থেকে আটক ৪১ জন হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামি বা হুজি জঙ্গিরা আদালতের মাধ্যমে জামিনে মুক্তির পর বর্তমানে তাদের অবস্থান রহস্যাবৃত বলে মনে করছেন একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র ও সচেতন মহল।

সংশ্লিষ্ট সূত্র ও অনুসন্ধানকালে খবর নিয়ে জানা গেছে, কক্সবাজারের দক্ষিণ বন বিভাগের উখিয়া বনরেঞ্জের থাইংখালী বনবিটের লণ্ডাখালীর গহীন জঙ্গলে প্রশিক্ষণ শিবির খুলে রীতিমত শারীরিক ও ভারী অস্ত্র পরিচালনাসহ বিভিন্ন কৌশলাদির প্রশিক্ষণ চালিয়ে যাচ্ছিল হুজি জঙ্গিরা। গোয়েন্দা সংবাদের ভিত্তিতে নিরাপত্তা বাহিনী অভিযান চালিয়ে ১৯৯৬ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি ভোর রাতে উক্ত প্রশিক্ষণ শিবির থেকে ৪১ জন হুজি জঙ্গিকে আটক করা হয়েছিল। সেখান থেকে বিপুল পরিমাণের আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা। কক্সবাজার জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার তৎকালীন পুলিশ পরিদর্শক ছগির আহমদ বাদী হয়ে ওইদিন উখিয়া থানায় আটক ৪১ জন জঙ্গি সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে একটি মামলা দায়ের করেন।

একই বছর তদন্ত শেষে উক্ত স্পর্শকাতর মামলার অভিযুক্ত ৪১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দেওয়া হয়। মামলার দীর্ঘ শুনানির পর কক্সবাজারস্থ ১ম বিশেষ ট্রাইব্যুনাল ১৯৯৮ সালের ৩ জুন সকল অভিযুক্ত ও আটক হুজি জঙ্গিদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাদের যাবজ্জীবন সাজা প্রদান করেন। পরে ওই জঙ্গিরা নিম্ন আদালতে দেওয়া যাবজ্জীবন সাজার বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করে। ২০০২ সালে তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতাসীন থাকাকালীন সময়ে উল্লেখিত জঙ্গিরা উচ্চ আদালত থেকে জামিনে বেরিয়ে এসে আত্মগোপনে চলে যায়। ২০০৭ সালের ২৯ জানুয়ারি আপিল রায়ে হাইকোর্ট ৪১ আসামিদের যাবজ্জীবন দণ্ড কমিয়ে প্রত্যেককে ১২ বছর করে কারাদণ্ড দেন।

বর্ণিত স্পর্শকাতর সন্ত্রাসী মামলায় আটক ও সাজার পর দণ্ডপ্রাপ্ত সকল অভিযুক্ত আসামিরা উচ্চ আদালতের নির্দেশে জামিনে মুক্তির পর একটি বারের জন্যও ওই মামলায় আর আদালতের দ্বারস্থ না হয়ে পলাতক রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। একাধিক সূত্র জানায়, উখিয়ার গহীন জঙ্গল থেকে আটক ৪১ হুজি সদস্যের মধ্যে ১ জন মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিম, ১২ জন কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম জেলার এবং ২৮ জন দেশের বিভিন্ন জেলার বাসিন্দা। তৎমধ্যে মিয়ানমারের বুচিদং জেলার টংবাজার এলাকার মৃত আবদুল্লাহর ছেলে নুরুল ইসলাম, যশোর জেলার ভবানীপুর এলাকার শেখ মো. লাল মিয়ার ছেলে মুহাজির আবুল আব্বাস, যশোর দক্ষিণ চাদপুর বাঘারঘোনা গ্রামের আমিনুর রহমান, মাগুরা জেলার শ্রীপুর কামারপুরের আব্দু ছোবাহান ওরফে আবু সুফিয়ান, সিরাজগঞ্জ বেলকুচি কল্যাণপুরের আব্দুল মান্নান ওরফে আব্দুল হান্নান, পটুয়াখালী বাউফলের নুরাইনপুর গ্রামের আবু জাফর বিভিন্ন সময় আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে আটক হয়ে বিভিন্ন কারাগারে আটক রয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।

পলাতক ৩৬ হুজি জঙ্গির মধ্যে নরসিংদীর মোস্তফা কামাল, মানিকগঞ্জের আবুল খায়ের মাশরুর, ময়মনসিংহের আবুল কাশেম, মৌলভীবাজারের আব্দুল হক, গোপালগঞ্জের বোরহান উদ্দিন ওরফে মামুন, খালেদ সাইফুল ও আবুল হোসেন ওরফে আবুল হাশেম, বাগেরহাটের মমতাজ উদ্দিন, খুলনার হাফেজ আবু তাহের, রাজবাড়ির হাফেজ আলী ইয়াজ আহমদ, যশোরের শেখ আনিসুর রহমান, দিনাজপুরের রাশিদুল ইসলাম, কিশোরগঞ্জের শরিয়ত উল্লাহ, হবিগঞ্জের নুরুল হক, আবু তাহের ও মুহিবুর রহমান, পটুয়াখালীর মো. ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ, চাঁদপুরের আবু জিহাদ ও মুসা, কুমিল্লার ইউনুছ ওরফে ইউসুফ ও মাওলানা আব্দু ছোবাহান এবং ফেনীর আজিজ, গিয়াস উদ্দিন ও জসিম উদ্দিন পাটুয়ারি।

অবশিষ্ট ১২ হুজি জঙ্গির মধ্যে চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারীর আব্দুল আজিজ ওরফে আব্দুল হালিম ওরফে সেলিম, নুরুল আলম, বাহা উদ্দিন, রাউজানের রেজাউল করিম, মীরসরাইয়ের দিদারুল আলম, সন্দ্বীপের কামরুল ইসলাম ওরফে শামশুল ইসলাম, বাঁশখালীর আব্দুল্লাহ আল হোছাইন ওরফে আব্দুল্লাহ, হালিশহরের শাখাওয়াত হোসেন, কক্সবাজারের চকরিয়ার রেজাউল করিম, আনোয়ার বিন জাবের, হাফেজ সিরাজুল কবির ওরফে টিপু, উখিয়ার থাইংখালী গ্রামের হাফেজ রফিকুল ইসলাম ওরফে রফিক উদ্দিন।

কারাগারে আটক আবু সুফিয়ান ওরফে আব্দু সোবাহান মাগুরায় ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সিরিজ বোমা হামলা মামলার আসামি হিসাবে ২০০৬ সালের ১৩ মে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়। সে উখিয়ার অরণ্যে জঙ্গি প্রশিক্ষণ শিবিরের একজন প্রশিক্ষক ছিল বলে সে সময় পুলিশের কাছে দেয়া স্বীকারোক্তিতে জানা গেছে। এর আগে সে আফগানিস্তানে সোভিয়েত বিরোধী যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল বলেও পুলিশের কাছে স্বীকার করেছিল। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রমতে আরএসও, এআরএনও, আরকান মুভমেন্ট, আরকান পিপলস্‌ ফ্রিডম পার্টি, হরকাতুল জিহাদসহ কয়েকটি জঙ্গি সংগঠনকে একত্রিত করার মিশন নিয়ে কাজ করছে রোহিঙ্গা নেতা ডাঃ ইউনুছ, ডাঃ ওয়াকার, আবুল ফয়েজ জিলানী, নুরুল ইসলাম, সালামত উল্লাহ, শফি উল্লাহ, নাজমুল আলম সহ অনেকে। রোহিঙ্গা জঙ্গিদের সাথে বাংলাদেশের হুজি সহ বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের নেতৃস্থানীয়দের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগও সম্পর্ক রয়েছে বলে জানা গেছে। তারাই এদের জঙ্গি নেটওয়ার্ক জোরদার করতে ব্যবহার করছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক রোহিঙ্গা নাগরিক জানিয়েছেন। উখিয়ার কুতুপালং ও টেকনাফের নয়াপাড়া, বাহারছড়া শরণার্থী শিবির ও তৎসংলগ্ন বস্তিগুলোতে এসব রোহিঙ্গারা সদা বিচরণ করছে। রোহিঙ্গা জঙ্গি আলি জোহার, হাজী ফজল, রফিক, হাফেজ নয়ন, হাফেজ জামাল, রাকিবুল্লাহ, লালু ডাকাত, মাওলানা শফি উল্লাহ, নুর মোহাম্মদ, আব্দু রশিদ, কাদের, আবু ইয়াহিয়া, হামিদ, রুহুল আমিন, আব্দুল্লাহসহ প্রায় শতাধিক সন্ত্রাসী রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরও তৎসংলগ্ন বস্তিতে অবস্থান করে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে।

সূত্রমতে, প্রশিক্ষিত রোহিঙ্গা জঙ্গিদের শতাধিক কক্সবাজার জেলাসহ বিভিন্ন স্থানে ছদ্মবেশে মসজিদ ও হেফজখানার মুয়াজ্জিন অথবা ইমামতি ও শিক্ষকতায় নিয়োজিত থেকে তাদের গোপন মিশন চালিয়ে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প ইনচার্জ আরমান শাকিল জানিয়েছেন, তার ক্যাম্পে একটি নিন্ম মাধ্যমিক, ১১টি মসজিদ ও ২টি হেফজখানা রয়েছে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা বস্তি তার নিয়ন্ত্রণে না থাকায় ওই বস্তি সম্পর্কে কোন ধারণা নেই। তবে নিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে জঙ্গির অস্তিত্ব নাই বলে তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।

উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. হাবিবুর রহমান জানান, তারা জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের ব্যাপারে তৎপর রয়েছে। তবে তৎকালীন সময়ে লন্ডাখালীর জঙ্গলে আটক জঙ্গিদের মধ্যে উখিয়ার যে ক’জন জঙ্গির নাম রয়েছে তাদের ব্যাপারে পূর্ব থেকে পুলিশ খোঁজখবর রাখছে। তিনি এও বলেন, ওই জঙ্গিরা এখন বিদেশে অবস্থান করছে বলে একাধিক সোর্স জানিয়েছেন। কক্সবাজার ভিত্তিক রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ প্রতিরোধ ও প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী জানান, এ দেশে যাতে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসীদের অপতৎপরতা বৃদ্ধি না পায়, সে ব্যাপারে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য অনেক সংগ্রাম, সভা সমাবেশ ও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। আমরা অনেক পূর্ব থেকেই রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের কর্তৃক এ দেশের সার্বিক নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে বার বার দাবি জানানোর পরও সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গুরুত্ব না দেওয়ায় আজকে আমাদের সে দাবি বাস্তবতায় রূপ নিচ্ছে। আমরা অবিলম্বে বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া, অন্যথায় এখানে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের সরকারের পরিকল্পনামতে সীমান্ত এলাকা থেকে সরিয়ে অন্যত্র স্থানান্তরের দাবি জানাচ্ছি।সুত্র আজাদী

পাঠকের মতামত

মিয়ানমারে প্রতিনিধি দল পাঠাবে বাংলাদেশ-মালয়েশিয়াসহ ৫ দেশ

মিয়ানমারে শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য জরুরি মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ...

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে ট্রাকের ধাক্কায় নিহত ১

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের সাতকানিয়ার ঠাকুরদিঘি এলাকায় লবণবাহী ট্রাকের ধাক্কায় এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। নিহতের নাম ...

জাসদ কার্যালয়ের জায়গায় ‘শহীদ আবু সাঈদ জামে মসজিদ’ নির্মাণের ঘোষণা

বগুড়া শহরের জিরো পয়েন্ট সাতমাথা সংলগ্ন এলাকায় বৃহস্পতিবার রাতে ভেঙ্গে ফেলা জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ-ইনু) ...

বাড়ছে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ, আটক ৩৩

বান্দরবানের আলীকদম সীমান্তে বাড়ছে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের সংখ্যা। আজও বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকালে শিশুসহ ৩৩ মিয়ানমারের নাগরিককে আটক ...