
হাফিজুল ইসলাম চৌধুরী :
লাল-সবুজের আমাদের জাতীয় পতাকা মানেই শুধু এক টুকরা কাপড় নয়, এ পতাকা আমাদের রাষ্ট্রের পরিচয়, আমাদের জাতীয়তা, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের
প্রতীক। এ পতাকার অবমাননা কোনোভাবেই করা চলবে না। যদি কেউ অবমাননা করে, তাহলে তাকে পেতে হবে শাস্তি। জাতীয় পতাকা বিধিমালা-১৯৭২ (সংশোধিত ২০১০)-এ
জাতীয় পতাকা ব্যবহারের বিধি-বিধান বর্ণিত আছে।
অথচ ১৫ আগস্ট (মঙ্গলবার) জাতীয় শোক দিবসেই রামুর গর্জনিয়া ইউনিয়ন পরিষদে- জাতীয় পতাকার চরম অবমাননা হয়েছে। বিধি মোতাবেক জাতীয় শোক দিবসে, জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে এবং তার পাশেই পৃথক পাইপ বা বাঁশে নির্ধারিত মাপের কালো পতাকা উত্তোলন করতে হবে। কিন্তু গর্জনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চিত্রটি
ছিলো একেবারে আলাদা।
মঙ্গলবার বেলা একটায় সরেজমিনে দেখা যায়, গর্জনিয়া ইউনিয়ন পরিষদ প্রাঙ্গনে সানসুন নিরবতা। মাইকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ প্রচার হওয়াতো দূরের কথা, পরিষদের অধিকাংশ সদস্য উপস্থিত নেই। পরিষদের চাঁদে একই বাঁশে ওপরে জাতীয় এবং নিচে কালো পতাকা উত্তোলন করে- জাতীয় পতাকা অবমাননার পাশাপাশি জাতীয় শোক দিবসকেও চরমভাবে অবমূল্যায়ন করা হয়েছে।
গর্জনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের এক নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য নুরুল ইসলাম বলেন, তিনি জাতীয় শোক দিবসে ইউনিয়ন পরিষদে যাননি। তাঁর নিজ এলাকায় শোক দিবস পালন
করেছেন। তিন নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ও থোয়াংগেরকাটা আদর্শ শিক্ষা নিকেতন উচ্চবিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি আবদুল জব্বার বলেন, গত সোমবার
বিকেলে শোক দিবস পালন উপলক্ষে ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ নজরুল ইসলামের উপস্থিতিতে বৈঠক হয়েছিল। শোক দিবসের কর্মসূচিতে চেয়ারম্যান উপস্থিত থাকার
কথাও ছিল। কিন্তু শোক দিবসে চেয়ারম্যান গর্জনিয়ায় ছিলনা বিধায়- তিনিও আর পরিষদে যাননি। তবে তাঁর নেতৃত্বে থোয়াংগেরকাটা আদর্শ শিক্ষা নিকেতন
উচ্চবিদ্যালয়ে শোক দিবস উপলক্ষে দোয়া মাহফিল, আলোচনা সভা ও রচনা প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আট নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য নুরুল আলম বলেন, শোক দিবস উপলক্ষে ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যদের উদ্যোগে সকাল আটটায় খতমে কোরআনের আয়োজন করা হয়। তবে
চেয়ারম্যান ইউনিয়নে না আসায় আলোচনা সভাসহ অন্য কর্মসূচিগুলো পালিত হয়নি। পতাকা উত্তোলন এবং অবমাননার বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না বলে দাবি করেন।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও স্থানীয় সূত্র জানায়- গর্জনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সৈয়দ নজরুল ইসলাম ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের সকালে রামু উপজেলা সদরে প্রতিষ্ঠিত টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইনষ্টিটিউটে পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠানে যোগ দেন। এরপরও তিনি গর্জনিয়ায় আসেননি। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় অনেকটা তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। এ ব্যাপারে অনেক বার চেষ্টা করেও চেয়ারম্যান নজরুলের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এদিকে পতাকা অবমাননা করে শোক দিবসকে অবমূল্যায়নের বিষয়ে জানতে চাইলে, গর্জনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সচিব আবুল কাশেম ও ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের নারী উদ্যোক্তা রিমা আক্তার কোন ধরণের মন্তব্য করতে রাজি হননি।
প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে রামু উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ সদস্য শামশুল আলম মন্ডল বলেন, গর্জনিয়ার বর্তমান চেয়ারম্যান নজরুল
শিবিরের সাবেক ক্যাডার ছিল। তাঁর বিরুদ্ধে অনেক গুরুত্বর অভিযোগও রয়েছে। শোক দিবসে জাতীয় পতাকা অবমাননার বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাজাহান আলি মুঠোফোনে বিষয়টি শুনে পাল্টা মন্তব্য করেননি। তবে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. আলি হোসেন বলেন, রামুর গর্জনিয়া ইউনিয়ন পরিষদে- শোক দিবসে জাতীয় পতাকা অবমানার বিষয়টি গুরুত্বসহকারে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, জাতীয় পতাকা ব্যবহারের বিধি ভঙ্গ করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ এবং কেউ ভঙ্গ করলে সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ড বা পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা কিংবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
পাঠকের মতামত