প্রকাশিত: ১৬/১০/২০১৭ ৩:৩৮ পিএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ১২:১১ পিএম

বিবিসি বাংলা::
বাংলাদেশের কক্সবাজারের উখিয়া, টেকনাফ ও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ডজন ডজন শরণার্থী শিবিরের লাখ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর অনেকেই আগ্রহী শিবির ছেড়ে বেরিয়ে বাংলাদেশের মূলস্রোতে মিশে যেতে।
আর বাংলাদেশের সরকার এদের শিবিরেই সীমাবদ্ধ রাখতে বদ্ধপরিকর। তাই এদের ঠেকাতে সড়ক জুড়ে এগারোটি তল্লাশি চৌকি বসিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী।
এসব তল্লাশি চৌকি থেকে গত দেড় মাসে ২৭ হাজারের বেশী রোহিঙ্গাকে আটক করে ফেরত পাঠানো হয়েছে শিবিরে।

এই রোহিঙ্গারা দেখতে বাংলাদেশীদের মতোই। তারা কথাও বলে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের স্থানীয় ভাষায়। এদেরকে তাহলে স্থানীয়দের থেকে আলাদা করা হয় কিভাবে?
উখিয়া ডিগ্রি কলেজের সামনের সড়কে দীর্ঘ যানজট। এখান থেকে অতিক্রম করা প্রত্যেকটি যানবাহনকে থামাচ্ছে সেনাবাহিনী ও বিজিবি সদস্যদের একটি যৌথ দল।
একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাকে সন্দেহ হল এক সেনাসদস্যের। এক বোরকা পরা মহিলাকে জিজ্ঞেস করলেন, তার এলাকার চেয়ারম্যানের নাম কি? বলতে পারলেন না তিনি। তাকে নামানো হল। নিয়ে যাওয়া হল পাশের এক দোকানের ছাউনিতে।
এর পরের জন চেয়ারম্যানের নাম বলতে পারল, কিন্তু তার ওয়ার্ডের ইউপি সদস্যের নাম বলতে পারল না। তাকেও নামানো হল।
আরেকটি অটোরিকশায় থাকা এক পরিপাটি তরুণী ও তার সঙ্গী তরুণ দুই প্রশ্নের জবাবই ঠিকঠাক পারল। কিন্তু আটকে গেল তৃতীয় প্রশ্নে। তাদেরকে বলা হয়েছিল এক থেকে দশ পর্যন্ত গুনতে। সাত পর্যন্ত ঠিকঠাক গুনল তারা। তারপর আট না বলে বলল ‘আষ্টে’। সাথে সাথে ধরা পরে গেল তারা।
জানা যাচ্ছে, মিয়ানমারের রোহিঙ্গারা চট্টগ্রামের স্থানীয় ভাষায় কথা বললেও কিছু কিছু শব্দ দিয়ে তাদের পার্থক্য করা যায়। সংখ্যা গণনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাথে তাদের অমিল আছে। যেমন তারা ‘আট’ না বলে বলে ‘আষ্টে’।
অবশ্য একটু পরে আমি যখন এই দুই তরুণ তরুণীর সাক্ষাৎকার নেই, তখন তারা ঠিকঠাক এক থেকে দশ গুনল। তারা স্বীকার করল যে তারা শরণার্থী রোহিঙ্গা এবং দাবী করল তারা কক্সবাজারে যাচ্ছিল, সেখানে হাসপাতালে ভর্তি থাকা অসুস্থ দাদীকে দেখতে।
তল্লাশি চৌকির প্রশ্নোত্তর সম্পর্কে ওয়াকিবহাল তারা। তাই প্রস্তুতিও নিয়েছিল। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি।

এখানে যেসব রোহিঙ্গাকে আটকানো হয়েছে, তাদের সবার গল্পই একই রকম। হয় তারা কক্সবাজারে অসুস্থ আত্মীয়কে দেখতে যাচ্ছে, নয়তো নিজেই অসুস্থ, তাই চিকিৎসা নিতে যাচ্ছে।
অথচ ছোটখাটো রোগব্যাধির চিকিৎসার সুব্যবস্থাই রয়েছে শিবিরগুলোতে। সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্থানীয় ও বিদেশী দাতাগোষ্ঠী এমনকি চিকিৎসা বিষয়ক আন্তর্জাতিক দাতব্য গোষ্ঠী ‘মেডিসে সঁ ফ্রতিয়ে’ বা এমএসএফেরও সরব উপস্থিতি রয়েছে শিবিরগুলোতে।
ফলে এদের বক্তব্য নিয়ে সন্দেহ জাগাটাই স্বাভাবিক।
তথ্য উপাত্ত বলছে, এই তল্লাশি চৌকিগুলো ফুলপ্রুফ নয়।
অনেকেই তল্লাশি চৌকির প্রহরা গলে বেরিয়ে যাচ্ছে।
গত দেড় মাসে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় আটশর বেশী রোহিঙ্গাকে আটক করে কক্সবাজারের শিবিরে ফিরিয়ে আনা হয়েছে, এই তথ্য দিচ্ছে খোদ জেলা প্রশাসন।
এর বাইরে আরো কত মানুষ অচিহ্নিত অবস্থায় দেশজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, বলা কঠিন।
তল্লাশি চৌকির সেনাসদস্যরা বলছেন, তারা তল্লাশি করতে গিয়ে এক শ্রেণীর দালালের খোঁজ পেয়েছেন, যারা অর্থের বিনিময়ে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের শিবির থেকে বের করে চট্টগ্রাম পর্যন্ত নিয়ে যাচ্ছে। সেখান থেকেই তারা ছড়িয়ে পড়ছে অন্যান্য এলাকায়।
যদিও গণপরিবহণগুলোকে রোহিঙ্গাদের তুলতে নিষেধ করেছে প্রশাসন, তারপরও তারা তুলছে দেখা যাচ্ছে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক আলী হোসেন বলছেন, শুধুমাত্র আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষে বিরাট সংখ্যক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠির চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।
এ ব্যাপারে ‘জনগণকে সচেতন হতে হবে’, বিবিসিকে বলেন মি. হোসেন।

পাঠকের মতামত

দুই রোহিঙ্গা জাতীয় পরিচয়পত্র বানাতে ভৈরবে এসে আটক

জাতীয় পরিচয়পত্র বানাতে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে এসেছিলেন দুজন রোহিঙ্গা। ...

মিয়ানমারের আরেক গুরুত্বপূর্ণ শহর বিদ্রোহীদের দখলে

মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা দেশটির আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ শহরের দখল নিয়েছে। মিয়ানমারের জান্তাবিরোধী সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী তা’আং ...

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ও দূরপাল্লার ট্রেন পটিয়া স্টেশনে যাত্রা বিরতির দাবি

চট্টগ্রাম–কক্সবাজার ও দূরপাল্লার ট্রেন পটিয়া স্টেশনে যাত্রা বিরতিসহ বিভিন্ন দাবিতে রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিমকে স্মারকলিপি দিয়েছেন ...