
শফিউল্লাহ শফি::
কক্সবাজারের পর্যটন স্পটে বন্দুকযুদ্ধ ও লাশের আতঙ্ক বিরাজ করছে প্রতিনিয়তই। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারের ঝাউবীথি ও বালিয়াড়িতে নামতেই প্রায় সময় চোখে পড়ে গুলিবিদ্ধ অজ্ঞাত লাশের।
গত বছরের ১৭ মে থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত সমুদ্র সৈকতের বালিকা মাদ্রাসা পয়েন্ট, হিমছড়ি, টেকনাফের বিচ এলাকা ও মেরিন ড্রাইভ সড়কস্থ ঝাউবীথি থেকে ১৯৪ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এই লাশ নিয়ে স্থানীয়দের পাশাপাশি দূর-দুরান্ত থেকে আসা পর্যটকদের মাঝে বিরাজ করছে আতঙ্ক।
সূত্রমতে, এই পর্যন্ত যে সব লাশ উদ্ধার হয়েছে তৎমধ্যে সিংহভাগ লাশই ছিল সমুদ্র সৈকত এলাকা থেকে উদ্ধার হওয়া এবং গুলিবিদ্ধ। পাশাপাশি কেউ ছিল মরণ নেশা ইয়াবা ব্যবসায়ী। আবার কেউ ছিল ছিনতাইকারী বা শীর্ষ সন্ত্রাসী।
তবে লাশ উদ্ধারকালে অজ্ঞাত হিসেবে উদ্ধার হলেও কিছুক্ষণেই মিলত তাদের পরিচয়। দেখা গেছে তাদের কেউ এই জেলার মাদক ব্যবসায়ী কিংবা সন্ত্রাসী।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ১৭ মে থেকে ২০ অক্টোবর পর্যন্ত বন্দুকযুদ্ধে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের বালিকা মাদ্রাসা পয়েন্ট, হিমছড়ি, টেকনাফের বিচ এলাকা ও মেরিন ড্রাইভ সড়কস্থ ঝাউবীথি থেকে ১৯৪ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তার মধ্যে রোহিঙ্গা ৫১ জন, বাংলাদেশি ১৪৩ জন।
এ ছাড়া গত এক মাসে মারা গেছে বা লাশ উদ্ধার করা হয়েছে ২৬ জনের। এর মধ্যে রোহিঙ্গা ১৫ জন, কক্সবাজারের ১১ জন।
সূত্র আরও জানায়, বর্তমান সরকার ইয়াবা কিংবা মাদকের বিরুদ্ধে জিরো ট্রলারেন্স ঘোষণা করার পর থেকে লাশ উদ্ধারের ব্যাপকতা বেড়ে যায়। কিন্তু তাতে একমত কক্সবাজারবাসীসহ পর্যটন ব্যবসায়ীরা। তবে মাদক ও সন্ত্রাসী নির্মূল করতে গিয়ে মানুষের মাঝে যে লাশের আতঙ্ক জন্ম দিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তা কখনও কারও কাম্য ছিল না।
পাশাপাশি এই গুলিবিদ্ধ লাশের কারণে ব্যাপক হারে নেগেটিভ প্রভাব পড়েছে পর্যটন শিল্পেও। কারণ সকালে পর্যটকরা হোটেল থেকে নেমে সমুদ্রে কিংবা সৈকতে যাওয়ার পথেই চোখে পড়ে অজ্ঞাত লাশের বিব্রতকর ছবি।
এদিকে পর্যটন এলাকায় প্রতিনিয়ত গুলির শব্দ ও লাশ উদ্ধারের ব্যাপারে ‘আমরা কক্সবাজারবাসী’ সংগঠনের প্রধান সমন্বয়ক নাজিম উদ্দিন বলেন, রাত হলে গুলির শব্দে ছেলে-মেয়েদের ঘুম ভেঙ্গে যায়। আতঙ্কিত হয়ে পড়ে তারা। পাশাপাশি দিনে দুপুরে পর্যটন এলাকার কবিতা চত্বর, হিমছড়ি ও মেরিন ড্রাইভ রোডে গেলে তাজা রক্তের গন্ধে থাকা যায় না। এটি পর্যটন এলাকার জন্য খুবই ক্ষতিকর।
নাজিম উদ্দিন আরও জানান, সব আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে পর্যটন স্পটে বন্দুকযুদ্ধ পরিহার করা দরকার। অন্যথায় বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের পরিবর্তে এই সৈকত একদিন বন্দুকযুদ্ধের এবং লাশ উদ্ধারের সৈকতে পরিণত হবে।
কলাতলী মেরিন ড্রাইভ হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান বলেন, পর্যটনের জন্য অজ্ঞাত লাশ উদ্ধারের ঘটনাটি খুবই আতংকের। এই লাশ উদ্ধারের ঘটনা নিয়ে প্রতিনিয়ত পর্যটক যেমন আতংকিত হয়, তেমনি ব্যবসায়ী ও হোটেল কর্মচারী এবং পর্যটকের মাঝেও আতঙ্ক বিরাজ করে। তাছাড়া যে পয়েন্ট থেকে লাশ উদ্ধার হয় ওই পয়েন্ট দিয়ে আর সাগরে পর্যটক নামতে চাই না।
এদিকে পর্যটন স্পট থেকে প্রতিনিয়ত লাশ উদ্ধারের ব্যাপারে কক্সবাজার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. ইকবাল হোসেন বলেন, মাদক ব্যবসায়ী ও অপরাধীরা জেলার পর্যটন স্পটগুলোকে সেফ মনে করার কারণে প্রায় সৈকতের কবিতা চত্বর, হিমছড়ি, মেরিন ড্রাইভসহ পর্যটন এলাকায় আশ্রয় নেয়। ফলে এই সব এলাকায় বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে এবং লাশ পাওয়া যায়।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, লাশ দেখে পর্যটক বা স্থানীয়রা আতঙ্কিত হওয়ার কারণ আমি (ইকবাল) খুঁজে পাই না। কারণ যারা মরছে তারা নানারকম অপরাধী ও মাদক ব্যবসায়ী। সুতারাং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে কোনো অপরাধীর লাশ উদ্ধার হলে পর্যটক কিংবা স্থানীয়রা আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। যুগান্তর
পাঠকের মতামত