উখিয়া নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৩/০৬/২০২৪ ১০:২৬ এএম

কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার মডেল মসজিদ নির্মাণের ঢালাই কাজে লোহার পাতের বদলে আম গাছের তক্তা ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। ইতিমধ্যে মসজিদের নিচতলার (গ্রাউন্ড ফ্লোর) ঢালাই করা গ্রেট বিম ধসে পড়েছে। মডেল মসজিদটির নির্মাণ কাজের সর্বত্র নিম্নমানের সরঞ্জামাদি ব্যবহারেরও অভিযোগ উঠেছে। মডেল মসজিদটির নির্মাণ কাজে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪ কোটি ৯০ লাখ টাকা।

‘প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলা মডেল মসজিদটি স্থাপিত হচ্ছে হলদিয়া পালং ইউনিয়নের মরিচ্যা বাজারে। কক্সবাজারের সীমান্তবর্তী উপজেলা উখিয়ার একটি বড় বাণিজ্যিক এলাকায় মসজিদটি বাস্তবায়ন কাজ চলছে। ঈদুল আজহার পরের দিন (১৮ জুন) সরেজমিন দেখা গেছে, ঢালাই করা বেশ কয়েকটি গ্রেট বিম হেলে পড়া অবস্থায় রয়েছে। এগুলো ঢেকে রাখা হয়েছে বস্তা দিয়ে।

বস্তাগুলো তুলে দেখা গেছে, বিমের ঢালাই দেওয়া সিমেন্টও সরে গেছে। এ সময় নির্মাণ কাজের সাথে জড়িত কাউকে পাওয়া যায়নি। এলাকার লোকজন জানিয়েছেন, তদারক করার দায়িত্বে থাকা গণপূর্ত বিভাগের কর্মকর্তাসহ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজনও সেখানে নিয়মিত থাকেন না।
জানা গেছে, প্রকল্পটির বাস্তবায়নকারি সংস্থা হচ্ছে কক্সবাজার গণপূর্ত বিভাগ।

মেসার্স এস, আর, এন ইয়াকুব এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে প্রকল্পটি নির্মাণের কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু দেলোয়ার হোসেন মিন্টু নামের একজন ঠিকাদার প্রকল্পটির কাজ করছেন। তিনি কালের কণ্ঠকে জানিয়েছেন, উপরোক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কাজটি কিনে নিয়ে (সাব ঠিকাদার) করা হচ্ছে।
তিনি জানান, চার-পাঁচ মাস আগে কাজটি শুরু করা হয়েছে। দুই বছরের মধ্যে কাজটি শেষ করার কথা।

ঢালাই করার পর একটি গ্রেট বিম বৃষ্টির কারণে ধসে পড়ার কথা স্বীকার করলেও অন্যান্য অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি।
এদিকে গত বৃহস্পতিবার (২০ জুন) বিকেল ৩-৫৪ মিনিটে চট্টগ্রাম থেকে খোরশেদ আলম নামের এক ব্যক্তি মডেল মসজিদটির ঠিকাদারের অংশীদার পরিচয় দিয়ে জানান, ‘আমরা কয়েকদিনের মধ্যে আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।’

স্থানীয় ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) মেম্বার মঞ্জুর আলম জানান, ‘সরকারের এমন একটি মহৎ উদ্যোগ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে তেমন তদারকি নেই। ঢালাই করার পর ৮টি বিম হেলে পড়েছে এবং আঁকা-বাঁকা হয়ে গেছে।’

ইউপি মেম্বার নিজেই দেখালেন, বিমগুলোর ঢালাই কাজে লোহার পাতের বদলে সেন্টারিং কাজে ব্যবহার করা হয়েছে আম গাছের তক্তা। অথচ শিডিউলে রয়েছে, ঢালাই কাজে অবশ্যই লোহার পাত ব্যবহার করতে হবে।

তা ছাড়া নির্মাণ কাজে বালুসহ অন্যান্য সামগ্রীও নিম্নমানের ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ইউপি মেম্বার মঞ্জুর আলম। মসজিদ নির্মাণ কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারের এমনসব অনিয়মের কথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)-সহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

মডেল মসজিদটির সার্বিক তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে থাকা কক্সবাজার গণপূর্ত বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো আরিফুর রহমান নির্মাণ কাজের অভিযোগের ব্যাপারে কিছু ত্রুটির কথা স্বীকার করে বলেন, ‘লোহার পাতের সেন্টারিং দিয়ে ঢালাই করার কথা থাকলেও এ ক্ষেত্রে গাছের তক্তা ব্যবহার করা হচ্ছে। ঢালাইয়ের পর বৃষ্টি হওয়ার কারণে একটি বিম ধসে পড়েছে।’

কক্সবাজারের ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ পরিচালক (ডিডি) ফাহমিদা বেগম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ঠিকাদার মসজিদের নিচতলার গ্রেট বিম ঢালাইয়ের পর আমার অফিসের সুপারভাইজার পরিদর্শন করে আমাকে জানিয়েছেন, সেখানে বেশ কয়েকটি বিম আঁকাবাঁকা হয়ে রয়েছে। তা ছাড়া দুয়েকটা বিম ধসে পড়েছে। এটা মডেল মসজিদের নির্মাণ প্রকল্প। অত্যন্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নির্মাণ কাজে কোনোভাবেই কারো গাফিলতি বা দুর্নীতি করার সুযোগ এখানে হবে না।’

মসজিদের নির্মাণ কাজের বিষয়ে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানভীর হোসেন বলেন, ‘আমি স্থানীয় লোকজনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ১৫ জুন নির্মাণ প্রকল্পটি পরিদর্শন করেছি। বিম হেলে পড়ার বিষয়টিও দেখেছি। এসব দেখার পর কক্সবাজারের গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ করা হয়েছে।’

কক্সবাজার গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ শাহজাহান জানান, মডেল মসজিদের নির্মাণ কাজে ঠিকাদারের কারণে যতটুকু ত্রুটি হয়েছে তা কড়ায় কড়ায় আদায় করে নেওয়া হবে। সুত্র::কালের কণ্ঠ

পাঠকের মতামত

কুতুপালং পশ্চিমপাড়ায় পরিচয় যাচাইহীন রোহিঙ্গা ভাড়া, বাড়ছে শঙ্কা

মিয়ানমারের রাখাইনে আরাকান আর্মি ও সেনা জান্তার সংঘর্ষে প্রাণ বাঁচাতে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। সীমান্ত ...

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মানবিক কার্যক্রম পর্যবেক্ষণে ইউনাইটেড নেশন টিম

কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন ইউনাইটেড নেশন ফোরাম বাংলাদেশ স্টাডি প্রোগ্রাম (BSP) এর ...

কক্সবাজারে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে ধর্ম ও প্রশাসনের সমন্বিত উদ্যোগ

কক্সবাজারে বাল্যবিবাহ শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনার লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত হলো “বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে করণীয়” শীর্ষক আন্তঃধর্মীয় নেতৃবৃন্দের ...