প্রকাশিত: ০৩/০৫/২০২২ ৯:৪৭ এএম

মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :
এবারের ঈদের ছুটিতে কক্সবাজারে আসছেন অন্তত ৫ লক্ষ পর্যটক। ইতিমধ্যে পাঁচ শতাধিক হোটেল–মোটেল, গেস্টহাউস, রিসোর্ট, কটেজের ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ কক্ষ আগাম বুকিং হয়ে গেছে। ঈদের দিন অবশিষ্ট কক্ষগুলোও ভাড়া হয়ে যাবে বলে মনে করছে হোটেল কর্তৃপক্ষ। তাঁরা জানিয়েছেন, এবার কক্ষভাড়ার বিপরীতে বিশেষ কোনো ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। তবে অতিরিক্ত চাপের অজুহাতে পর্যটকের কাছ থেকে যেন অতিরিক্ত কক্ষভাড়া আদায় না করা হয়, সে বিষয়ে তৎপর থাকবেন জেলা প্রশাসনের ৪ টি ভ্রাম্যমাণ আদালত ও হোটেলমালিকদের পৃথক পর্যবেক্ষক দল।

করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছরের দুই ঈদে সৈকতে পর্যটকের সমাগম তেমন ঘটেনি।হোটেল মালিকদের ধারণা।ঈদের পরদিন থেকে টানা সাত দিন পর্যটকের সমাগম থাকবে এই সৈকতে। এ সময় হোটেল, রেস্তোরাঁ সহ পর্যটন সংশ্লিষ্ট নানা খাতে ব্যবসা হবে অন্তত ৪০০ কোটি থেকে সাড় ৪০০ কোটি টাকার।

কক্সবাজারে পর্যটন ব্যবসায়ীরা জানান, গত বছরের ডিসেম্বর মাসের শেষ ১৬ দিনে সৈকতে সমাগম হয়েছিল অন্তত ১০ লাখ পর্যটকের। এরপর কক্সবাজারে উল্লেখযোগ্য হারে পর্যটকের তেমন সমাগম ঘটেনি। এবারের ঈদের ৭ দিনের ছুটিতে ১০ লাখের বেশি পর্যটকের সমাগম আশা করা হয়েছিল। কিন্তু সেন্ট মার্টিনে পর্যটকের যাতায়াত বন্ধ থাকায় ৫/৬ লাখ পর্যটক আসতে পারেন।

পর্যটকদের স্বাগত জানাতে ইতিমধ্যে হোটেল, রেস্তোরাঁসহ বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে সাজসজ্জা ও সংস্কার সম্পন্ন হয়েছে। সৈকতের ৫ শতাধিক হোটেল, মোটেল, গেস্টহাউসে দৈনিক ১ লাখ ৬০ হাজার পর্যটকের রাতযাপনের ব্যবস্থা আছে। চাপ বেড়ে গেলে হোটেলের কক্ষে পর্যটকদের গাদাগাদি করে রাখতে হয়।
ঈদের দিন থেকে হাঁটার জায়গা হবে না। এক দিনে কক্সবাজারে সমাগম ঘটবে অন্তত ৫ লাখ পর্যটকের।

পর্যটকদের হয়রানি রোধে প্রতিটি হোটেলে কক্ষভাড়ার তালিকা টাঙানোর নির্দেশনা দেওয়া আছে। অতিরিক্ত কক্ষভাড়া আদায় করা হলে ট্যুরিস্ট পুলিশের সেবাকেন্দ্রে অভিযোগ করা যাবে।

পর্যটকেরা গাড়ি থেকে নামলেই কিছু দালাল লোভনীয় অফার দিয়ে পর্যটকদের চিহ্নিত কিছু রিসোর্ট ও গেস্টহাউসে নিয়ে প্রতারণা কিংবা অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নেয়। কিছু ইজিবাইক ও টমটমচালক যাত্রীদের গাড়িতে তুলে প্রতারণা করে। এদের ব্যাপারে পর্যটকদের সতর্ক থাকতে বলেছেন কর্তৃপক্ষ। পর্যটকেরা নিজেরা হোটেল রিসোর্টে গিয়ে কক্ষভাড়া নিলে তাঁদের সুবিধা হয়।

পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, পর্যটক না থাকায় পুরো রমজান মাসে সৈকত দখল করে তৈরি পাঁচ শতাধিক দোকানপাট, ঘোড়া, বিচবাইক, চেয়ার-ছাতা (কিটকট), জেডস্কির ব্যবসা, ভ্রাম্যমাণ আলোকচিত্রী, চা-কফি বিক্রির ভ্রাম্যমাণ দোকান, ভাজা মাছ বিক্রির দোকানপাট অচল পড়ে আছে। ঈদের পরদিন থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা–বাণিজ্য চাঙ্গা হয়ে উঠবে। তখন জমজমাট হবে মেরিন ড্রাইভ দিয়ে ইনানীর পাথুরে সৈকত, টেকনাফ সৈকত, রামুর বৌদ্ধপল্লী, চকরিয়ার ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক, মহেশখালীর আদিনাথ মন্দিরসহ দর্শনীয় ও বিনোদনের কেন্দ্রগুলো।

পর্যটকদের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ট্যুরিস্ট পুলিশ কর্তৃপক্ষ জানান, ভ্রমণে আসা পর্যটকের নিরাপত্তায় প্রস্তুত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সন্ধ্যার পর পর্যটকেরা যেন অন্ধকারে ডুবে থাকা সৈকতের তীরের ঝাউবাগানের ভেতরে একাকী
কিংবা তিন চাকার যান নিয়ে একাকী মেরিন ড্রাইভ ভ্রমণে না যান, এ ব্যাপারে লোকজনকে সতর্ক করা হচ্ছে। এসব এলাকায় কৌশলে ছিনতাইকারীদের কবলে পড়ে সর্বস্ব হারানোর সুযোগ থাকে।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো: হাসানুজ্জামান পিপিএম গণমাধ্যমকে বলেছেন,
ঈদের দিন থেকে পরবর্তী ৭ দিন কক্সবাজারের সর্বত্র বিশেষ নিরাপত্তা পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। পরিকল্পনায় পুরো কক্সবাজারকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। যাতে পর্যটক, স্থানীয় নাগরিক সহ সকলে নিরাপদে, নির্বিঘ্নে ও স্বাচ্ছন্দ্যে ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে পারে।

তিনি আরো বলেন, জেলা সদরের পাশাপাশি জেলার সকল থানার ওসি’দেরও নিরাপত্তা জোরদারে একই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে মফস্বল এলাকার পর্যটন স্পট গুলোতে কয়েক স্থরের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

এসপি মোঃ হাসানুজ্জামান আরো বলেন, প্রত্যেক জায়গায় ড্রেস পরা পুলিশ ও সাদা পোশাক ধারী পুলিশ দিন-রাত ডিউটি করবে। নিরবিচ্ছিন্ন নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জেলা পুলিশের আওতায় ডিবি পুলিশও দায়িত্ব পালন করবে বলে তিনি জানান।

এসপি মোঃ হাসানুজ্জামান আরো বলেন, পুলিশের মোবাইল টিম টহল দেবে, মটর সাইকেল টিম সক্রিয় থাকবে। এ অবস্থায় সার্বিক নিরাপত্তার মাঝে পর্যটক সহ সকলে নিরাপদে ও নির্বিঘ্নে ঈদ আনন্দ উদযাপন করতে পারবেন বলে এসপি মোঃ হাসানুজ্জামান পিপিএম আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

ঈদুল ফিতরের দীর্ঘ ছুটিতে কক্সবাজারে আসা লক্ষ লক্ষ সেবা ও নিরাপত্তা দিয়ে বরণ করে নিতে কক্সবাজারবাসী সম্পূর্ণ প্রস্তুত আছেন বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ মামুনুর রশীদ। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সকলকে নিয়ে ফরমাল এবং ইনফরমাল একাধিকবার ফলপ্রসূ বৈঠক করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

ডিসি মোঃ মামুনুর রশীদ আরো বলেন, পর্যটকেরা যাতে কক্সবাজারের সকল প্রাকৃতিক দৃশ্য নিরাপদে ও স্বাচ্ছন্দ্যে অবলোকন ও উপভোগ করতে পারেন সেজন্য সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, পর্যটক ও স্থানীয় নাগরিকরা নির্বিঘ্নে ঈদুল ফিতরের আনন্দ উদযাপন করতে জোরদার করা হয়েছে সার্বিক নিরাপত্তা পরিকল্পনা। তিনি আরো বলেন, পর্যটকদের সেবা প্রদানে আমরা যাতে পিছিয়ে নাথাকি, সেজন্য সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে।

এদিকে, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের লাবনী, সুগন্ধা, কলাতলী পয়েন্ট সহ অন্যান্য পর্যটন এলাকায় আইনশৃংখলা রক্ষা সহ অপরাধ প্রতিরোধ কার্যক্রম কার্যকরভাবে পরিচালনার নিমিত্তে ৪ জন সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ মামুনুর রশীদ গত ২ মে তাঁদেরকে মোবাইল কোর্ট আইন ২০০৯ অনুযায়ী এ নিয়োগ দেন।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ ২ মে থেকে ৯ মে পর্যন্ত এ দায়িত্ব পালন করবেন। দায়িত্ব পালনকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটবৃন্দ হলেন : কাজী মাহমুদুর রহমান, সৈয়দ মুরাদ ইসলাম, আরাফাত সিদ্দিকী ও নিরুপম মজুমদার। মোবাইল কোর্ট পরিচালনা শেষে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটবৃন্দকে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।

পাঠকের মতামত

উখিয়া অনলাইন প্রেসক্লাবের কার্যকরী কমিটির শেষ সভা অনুষ্ঠিত; দায়িত্বে নির্বাচন কমিশন 

উখিয়া অনলাইন প্রেসক্লাবের ৩৯তম কার্যকরী কমিটির সভা সম্পন্ন হওয়ার মধ্য দিয়ে বর্তমান কমিটির দায়িত্ব শেষ ...

বেপরোয়া আন্তর্জাতিক হুন্ডিচক্র টেকনাফের গফুর সিন্ডিকেট, পাচার হচ্ছে কোটি কোটি টাকা

আন্তর্জাতিক হুন্ডিচক্র টেকনাফের গফুর সিন্ডিকেট হুন্ডির মাধ্যমে অবৈধভাবে বিদেশ ও ইয়াবার টাকা পাচার অব্যাহত রেখেছে। ...