
নিউজ ডেস্ক::
বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরগুলোতে যেসব রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছেন, তাদের বেশিরভাগের সময় কাটে মোবাইল ফোনে নিজেদের গ্রাম ও বাড়ির ছবি ও ভিডিও দেখে। কোনোটি হয়ত সুখস্মৃতি, আবার কোনোটা দুঃসহ।
এরকমই একজন আব্দুল হাসান। নিজের মোবাইল ফোনে ধারণ করা ভিডিও দেখে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়ে দেয় হাসান। বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া ১৬ বছর বয়সি এই রোহিঙ্গা শরণার্থী সংবাদ সংস্থা এপিকে বলে, ‘মিয়ানমারে আমার গ্রাম, আমার বাড়ির জন্য প্রাণ কাঁদে। তাই সবসময় ভিডিওতে সেই পুরোনো দিনের ছবি দেখি।’
২৫ আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে ৬ লাখ ৪০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নিপীড়ন শুরু হওয়ার পর থেকে কয়েকজন একটু সময় পেয়েছিলেন তাঁদের কিছু জিনিস নিয়ে পালানোর। তাঁদের ভিটেমাটি, গোলাঘর, গোয়ালঘর, গ্রাম সবকিছুই নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে, আছে কেবল স্মৃতিটুকু। যাঁদের ভাগ্য ভালো, তাঁরা সাথে করে নিজেদের মোবাইল ফোনটা আনতে পেরেছিলেন। সেই ফোনে তোলা নিজেদের গ্রাম বাড়ি, উঠোনের ছবি দেখে সময় কাটে তাঁদের।
আব্দুল হাসানের ফোনে একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে তাঁরা ‘নারকেল পার্টি’ করছেন। ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজছে একটি গান আর হাসান তার বন্ধুদের সাথে নারকেল ছোড়াছুড়ি খেলছে। হাসান বলে, ‘যখন এই ভিডিওটি দেখি আমার দেশের কথা মনে পড়ে। আমার মন ভেঙে যায়।’
১৫ বছর বয়সী মোহাম্মদ ফরিদও নিজের সেলফোনে পুরনো ছবি আর ভিডিও দেখে সময় পার করে। ফেলে আসা বন্ধুদের কথা তার ভীষণ মনে পড়ে, মনে পড়ে স্কুলের কথা। সেকথা মনে করে ফরিদ বলে, ‘আমি আমার বন্ধুদের সঙ্গে চমৎকার সময় কাটিয়েছি। আমরা তখন স্কুলে যেতাম। এখানে কোনো স্কুল নেই। এই ছবিগুলো আমি স্মৃতি হিসেবে রেখে দিয়েছি।’
সত্যিই শরণার্থী শিবিরে শিশুদের জন্য কোনো স্কুল নেই। তাই তারা সেলফোনেই বেশি সময় কাটায়।
তবে মোবাইলফোনে যে কেবল সুখস্মৃতি আছে, তা কিন্তু নয়। ২২ বছরের মুজিব উল্লাহ একটি ভিডিও দেখান বার্তা সংস্থা এপি-র সাংবাদিকদের, যেখানে মিয়ানমারের গ্রাম বর্গিয়াবিলে সেনাবাহিনী ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিচ্ছে আর মানুষ সেখান থেকে পালানোর চেষ্টা করছে। গ্রামবাসীরা আগুন নেভাতে বালতিতে করে বালু ঢালছেন, কিন্তু আগুন কিছুতেই নেভানো যাচ্ছে না। এই ভিডিও ধারণের কয়েক ঘণ্টা পর মুজিব তাঁর নিজের গ্রামে ফিরে যান এবং তাঁকে দেখে গ্রামের লোকজন ভাবেন, সেনাবাহিনী ফিরে গেছে। কিন্তু হঠাৎই গোলাগুলি শুরু হয়। কয়েকজন পালিয়ে যান, বাকিরা সেখানেই প্রাণ হারান। তাঁর ভাইও সেই গোলাগুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন। সূত্র : ডয়চে ভেলে
পাঠকের মতামত