প্রকাশিত: ০৬/০৪/২০২০ ৬:৫৫ এএম

ডেস্ক রিপোর্ট::
রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে মোবাইল ও ইন্টারনেট যোগাযোগের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার ও কাঁটা তারের বেড়া নির্মাণের কাজ স্থগিত করার আহŸান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে আন্তর্জাতিক ৫০ সংগঠনের যৌথ চিঠি দেওয়ার ঘটনায় স্থানীয়দের মাঝে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা তৈরী হয়েছে। সংগঠনগুলোর দাবী মেনে নেওয়া হলে তা ‘আত্মঘাতি’ হবে বলে মনে করছেন কক্সবাজারের সচেতন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা।
তারা বলছেন, বিশ্বের চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বারবার বলছেন, জগসমাগম এড়ানোর জন্য, ঘরে থাকার জন্য। এ ক্ষেত্রে ১১ লক্ষ মানুষকে একটি নির্দিষ্ট স্থানে রাখার জন্য কাঁটাতারের বেড়া ব্যাপক সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। কাজেই এই সময়ে এসে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের কাজ স্থগিত করার দাবী একেবারেই অযৌক্তিক। রোহিঙ্গারা যেহেতু সবাই কাছাকাছি অবস্থানে একটি নির্দিষ্ট গন্ডির মধ্যে আছে সেহেতু তাদের মোবাইল ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষারও প্রয়োজন নেই। তাছাড়া রোহিঙ্গাদের অবাধ চলাচলের সুযোগ করে দেওয়া হলে তারা বাইরে বা মিয়ানমারে গোপনে আসা-যাওয়া করে করোনা সংক্রমনের ঝুঁকি আরও বাড়াতে পারে।
কক্সবাজার বাঁচাও আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আয়াছুর রহমান বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের অপরাধ দমন করতে শিবিরগুলোর চারপাশে কাঁটাতারের বেড়া থাকা জরুরী। দ্রæত এ নির্মাণ কাজ শেষ করতে হবে। কারণ প্রত্যাবাসন নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণে রোহিঙ্গারা আশ্রয় শিবির থেকে পালানোর চেষ্টা করছে। এছাড়া খুন, হত্যা, মাদক ও নারী-শিশু পাচারসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ডে তারা জড়িয়ে পড়েছে। ক্যাম্পসহ আশপাশের এলাকায় প্রতিনিয়ত খুনাখুনির ঘটনা ঘটছে। শিবিরগুলো উন্মুক্ত থাকলে যেকোন সময় তারা লোকালয়ে গিয়ে খুন-রাহাজানিতে লিপ্ত হতে পারে। ইতোপূর্বে এর বহু আলামত আমরা দেখেছি।’
তিনি বলেন, ‘মোবাইল ব্যবহার করে ক্যাম্পের ভেতরে মাদক ও মানব পাচার এবং হাটবাজার নিয়ন্ত্রণ করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। শরণার্থী আইন অনুসারে উদ্বাস্তুরা অবৈধভাবে মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে না পারলেও কিছু এনজিওর কারণে দীর্ঘদিন ধরে ক্যাম্পে মোবাইল ফোন উদ্ধারে অভিযান চালানো হয়নি। রোহিঙ্গাদের হাতে থাকা মোবাইলের নেটওয়ার্ক বন্ধ না হওয়ায় ইতোপূর্বে শিবিরে নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ড সংগঠিত হতে দেখেছি আমরা। অপরাধ দমন করতেই রোহিঙ্গা শিবিরে মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ রাখা দরকার।’
গত বৃহস্পতিবার আর্টিকেল ১৯, আসিয়ান পার্লামেনটারিয়ন ফর হিউম্যান রাটিস, অ্যাকশন করপস, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, বিওন্ড বর্ডারস মালয়েশিয়া, ব্রিটিশ রোহিঙ্গা কমিউনিটি ইউকে, ফরটি রাইটস, কিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ আন্তর্জাতিক ৫০টি সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে যৌথভাবে লেখা চিঠিতে বলা হয়, ‘করোনা ভাইরাস বা ‘কোভিড ১৯’ ছড়িয়ে পড়া থামাতে মুঠোফোনের দ্রæত গতির ইন্টারনেট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। অবাধ ইন্টারনেট স্বাস্থ্য কর্মীদেরই সেবা দিতে ভালো ভূমিকা রাখে। এ ছাড়া শরণার্থীশিবিরে যারা কাজ করছেন তাদের জন্যও এটি প্রয়োজন।’
চিঠিতে বলা হয়, রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পের চারপাশে বেড়া নির্মাণের কাজ মহামারি শুরু হওয়ার আগেই শুরু হয়। এই বেড়া নির্মাণ রোহিঙ্গাদের মধ্যে তীব্র ভয় ও অবিশ্বাস সৃষ্টি করেছে যা রোহিঙ্গা জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। চিঠির অনুলিপি দেওয়া হয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রী এনামুর রহমান এবং শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মাহবুব আলম তালুকদারকেও।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম পরিষদের সাবেক আহŸায়ক মাহমুদুল হক চৌধুরী বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের অপরাধ ঠেকাতে আশ্রয় শিবিরগুলোর চারপাশে কাঁটাতারের বেড়া থাকা জরুরী। মানবিক কারণে তাদের আশ্রয় দেয়া হলেও তারা এখন নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে। তারা নানাভাবে মূলধারা লোকজনের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে। নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ছে। এমতাবস্থায় কাঁটাতার বা দেয়াল নির্মাণ করে রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা দরকার। মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক ৫০ সংগঠন যে দাবী তুলেছে তা অযৌক্তিক এবং রাষ্ট্রের স্বার্থের পরিপন্থি। উপরন্তু আন্তর্জাতিক উক্ত ৫০ এনজিও তথা সাহায্য সংস্থার বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিধায় সরেজমিনের প্রকৃত সমস্যা নিরুপম করা সহজ হবে না। বাংলাদেশ দাতা সংস্থাগুলোর প্রতি সহযোগিতামূলক মনোভাব পোষণ করে যা অব্যাহত থাকবে। কিন্তু রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প মোবাইল নেটওয়ার্ক চালু ও কাঁটা তারের বেড়া দেয়ার কার্যক্রম থেকে সরে আসলেই কভিড ১৯ ন্যায় ভয়ংকর এই ভাইরাস থেকে ক্যাম্পগুলোতে অবস্থানরত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী কাটা তাঁর নির্মাণ বন্ধ ও মোবাইল নেটওয়ার্ক উপর থেকে রেস্ট্রিকশন তুলে নিলেই যে সুরক্ষিত থাকবে তার নিশ্চয়তা নেই।

এই ভাইরাসের কোন ভ্যাকসিন এখন পর্যন্ত চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করতে সক্ষম হননি। যে সকল এনজিও এ বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর আবেদন করেছে তাদের অধিকাংশের অবস্থান মায়ানমারে। এই আবেদনের অন্তরালে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মহামারি করোনাভাইরাসের বিস্তার ঘটাতে স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর মদদ দান ও হীন উদ্দেশ্য থাকা অস্বাভাবিক নয়।

কাজেই এসব দাবী মেনে নেওয়া হলে তা হবে আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত। সরকারের কাছে আমাদের আকুল আবেদন থাকবে, সব দিক বিবেচনা করে যেন এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।’
তিনি বলেন, ‘এই সময়ে তাদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা দরকার। কোভিড-১৯ বিষয়েও সচেতন করা দরকার। সামাজিক দুরত্ব মানার ব্যাপারে উদ্ভুদ্ধ করা দরকার। এই সেবাগুলো, বা মানবিক সব ধরনের সেবা নিশ্চিত করার জন্য মোবাইল নেটওয়ার্কের কোন প্রয়োজন নেই। আড়াই বছর আগেও মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা পরিবারগুলো ছিল পরস্পর বিচ্ছিন্ন। সেখানে গ্রামের বাইরে বের হতেই কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হতো। বাংলাদেশে তারা আরাম-আয়েশে দিন কাটাচ্ছে। তাদের জন্য মোবাইল নেটওয়ার্ক উন্মুক্ত করে দেওয়া মানে খাল কেটে কুমির আনার সমান। তারা মোবাইল নেটওয়ার্কের অপব্যাবহার করে আরও অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়বে। তারা এমনতিই আমাদের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে। আমরা এর থেকে পরিত্রান চাই।

পাঠকের মতামত

গাজীপুরের সাংবাদিক তুহিন হত্যায় সাংবাদিক ইউনিয়ন কক্সবাজার’র নিন্দা ও প্রতিবাদ

গাজীপুরে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সংঘবদ্ধ সশস্ত্র সন্ত্রাসী কর্তৃক সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে নির্মমভাবে হত্যার ...

উখিয়া বিএনপির সাবেক যুব বিষয়ক সম্পাদক সাইফুর রহমান সিকদারের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি উখিয়া উপজেলা শাখার সাবেক যুব বিষয়ক সম্পাদক সাইফুর রহমান সিকদার এর আবেদন ...