প্রকাশিত: ২৬/০৮/২০১৮ ৩:৪৪ পিএম

ডেস্ক নিউজ – মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর দমন-নিপীড়নের ফলে সেখান থেকে সাত লাখেরও বেশি মানুষ পালিয়ে আসার পর এক বছর পেরিয়ে গেছে। কিন্তু সেখানে রয়ে যাওয়া রোহিঙ্গারা এখনো অনিশ্চিত ও নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে দিন যাপন করছেন।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান জানায়, সহিংসতা কবলিত রাখাইন রাজ্যে আটকে পড়া রোহিঙ্গারা কোনো চিকিৎসা, কাজ বা শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে না। তাদের নাগরিকত্বের দলিল বা সিটিজেনশিপ কার্ড না থাকায় কোথাও ভ্রমণ করতে হলে তাদেরকে সরকারের অনুমতি নিতে হয় এবং সেখানে তারা নিয়মিত বৈষম্যের স্বীকার হয়।

তরুণদের জন্য এই অবস্থা বিশেষ কঠিন হয়ে উঠেছে বলে মন্তব্য করা হয় গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে।

কো লুইন (ছদ্মনাম) রাখাইন থেকে আসা একজন যুবক। সে ও তার নয় বন্ধু বিভিন্ন পরীক্ষায় পাস করার পর একমাত্র লুইনই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পায়। তার বাবা-মায়ের একজন রোহিঙ্গা ও অপরজন মঙ হওয়ায় তার সিটিজেনশিপ কার্ড রয়েছে।

কিন্তু কো লুইন আইন বিষয়ে পড়া শুরু করার ঠিক আগ মুহূর্তে, গত বছরের আগস্ট মাসে রাখাইন রাজ্যে ‘মুসলিম জঙ্গিরা’ নিরাপত্তা বাহিনীর ১২ সদস্যকে হত্যা করে বলে অভিযোগ উঠে। এরপরই মিয়ানমারের সেনাবাহিনী নির্মম রোহিঙ্গা নিধন অভিযান শুরু করে।

হামলার প্রথম ধাক্কাতেই সেনাবাহিনী অন্তত ৬,৭০০ রোহিঙ্গা হত্যা করে এবং তাদের গ্রাম গুঁড়িয়ে দেয়। মানবাধিকার সংগঠনগুলো বিশাল পরিসরে রোহিঙ্গাদের নিপীড়ন ও তাদের নারীদের ধর্ষণের বিভিন্ন জবানবন্দি ও দলিল সংগ্রহ করেছে। জাতিসংঘ বলছে এসব অপরাধ গণহত্যার শামিল।

‘আমি খবরটা শুনে অসহায় হয়ে বোধ করছিলাম’- গার্ডিয়ানকে বলেন কো লুইন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে না গিয়ে তিনি এখন ঠিক করেন রোহিঙ্গা ছাত্রদের সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবক শিক্ষকদের যোগাযোগ করিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করবেন।

কো লুইনের মতো আরও ছয় লাখ রোহিঙ্গা তাদের রাজ্য থেকে বিতাড়িত হয়ে এখনো মিয়ানমারেই অবস্থান করছেন।

বুথিডংয়ের রোহিঙ্গা ছাত্র লু মিন (ছদ্মনাম) বলেন, গত বছরের হামলার পর থকে অনেক ছাত্র ভয়ে বাড়িতেই রয়ে গেছে।

‘কোনো কোনো সময় তারা পাথর ছুঁড়ে মারে, কোনো কোনো সময় তারা গুলতি দিয়ে আঘাত করে বা বোতল ছুঁড়ে মারে’ বলেন তিনি।

সম্প্রতি সরকারি ব্যবস্থাপনায় রাখাইন রাজ্যে পরিদর্শনে যান জাতিসংঘের মানবাধিকার সমন্বয়ক নুট ওস্টবি বলেন, ‘অনেক গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে এবং অনেক গ্রাম একদম ফাঁকা।’

গতবছর থেকে বার্মিজ সরকার বহু রোহিঙ্গা গ্রাম বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছে এবং সেখানে যেসব নতুন ঘরবাড়ি তৈরি করা হয়েছে সেগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানা যায় না।

রোহিঙ্গা নেতা অং কিওয়া মো একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন। তিনি বলেন, সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের মধ্যে স্বাধীনভাবে ঘোরাফেরা করতে পারেন না।

প্রতিবেশিদের বাড়ি যাওয়া, বাজারে ঘোরাফেরা করা, পাবলিক প্লেসে খেলাধুলা করা রোহিঙ্গাদের জন্য নিষিদ্ধ। এছাড়াও তারা সবসময় স্থানীয় বৌদ্ধ জনতার নৃশংসতা ও বেআইনি গ্রেফতারেরও হুমকির মধ্যে থাকেন।

‘আপনিও স্বপ্নেও ভাবতে পারবেন না এমন একটা খাঁচার মধ্যে তাদেরকে রাখা হয়েছে’ বলেন অং কিওয়া মো।

এসব বিধিনিষেধ ও সীমাবদ্ধতা রোহিঙ্গাদের ওপর আগে থেকেই ছিল। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে, বিশেষ করে গত ১২ মাসে এগুলো আরো কঠিন হয়েছে। এখন রোহিঙ্গারা বিনা অনুমতিতে রাখাইন রাজ্যেও যেতে পারেন না।

ইয়াঙ্গুনসহ অন্যান্য এলাকায় বসবাসরত রোহিঙ্গারা খুব নিভ্রিত জীবন যাপন করেন। সেখানে বৈষম্যের স্বীকার হতে হবে না এমন কাজ খুঁজে পাওয়া তাদের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ। সিটিজেনশিপ কার্ড না থাকায় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা এবং সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়া তাদের জন্য অসম্ভব।

অনুমতি ছাড়া রাখাইনে তাদের আত্মীয়-স্বজনদের দেখতে গেলে গ্রেফতার হওয়া অথবা ইয়াঙ্গুনে আর ফিরতে না পারার ঝুঁকিতে থাকেন রোহিঙ্গারা।

জাতিসংঘ রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দিতে বললেও, সংখ্যালঘু মুসলিম জনগোষ্ঠীটির দুর্দশা উপেক্ষা করছে দেশটির সরকার। কর্তৃপক্ষ এখনও তাদের ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি ব্যবহার করে না বা তাদের পরিচয় স্বীকার করে না।

অং কিয়া মো বলেন, রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে তাদের ওপর নতুন করে দমন-নিপীড়ন শুরু হওয়ার গুঞ্জন ও ভীতি দেখা দিয়েছে। তিনি মনে করেন, এখন সবচেয়ে দ্রুত যে জিনিসটির উন্নতি করা যায়  তা হচ্ছে, বাচ্চাদের সমান ও নিরাপদ শিক্ষার ব্যবস্থা করা। রোহিঙ্গাদের অশিক্ষিত করে রাখলে ভবিষ্যতে তাদের অবস্থা আরও খারাপ হয়ে পড়বে।

পাঠকের মতামত

মিয়ানমার জান্তা ঘনিষ্ঠদের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার

মিয়ানমারের সামরিক জান্তাঘনিষ্ঠ চার ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন অর্থ ...

বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের ব্ল্যাকলিস্ট, তালিকায় এক ডজন দেশ

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের জন্য বিশ্বজুড়ে ভ্রমণ ও ভিসা পাওয়া আগের চেয়ে অনেক বেশি কঠিন ...

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে আসিয়ান

রাখাইন রাজ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টায় মিয়ানমারের প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে আসিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। পাশাপাশি ...

ফিলিস্তিনপন্থি গ্রুপকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে ভোট দিয়েছেন টিউলিপ

যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে প্রো-প্যালেস্টাইন কর্মসূচির সংগঠন ‘প্যালেস্টাইন অ্যাকশন’কে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যায়িত করে নিষিদ্ধ করার প্রস্তাবে ...