
নিউইয়র্ক থেকে বাংলাদেশে আসা আলোচিত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ফেরদৌস খন্দকার বলেছেন, ডাক্তার শাহেদ ইমরানের নেতৃত্বে একটি টিম গঠন করেছিলাম। যে টিমের সদস্যরা মাঠে থেকে করোনা আক্রান্ত মানুষের সেবা দেবেন। এছাড়া এই টিমের সদস্য হয়ে মেডিক্যাল কলেজের শতাধিক স্বেচ্ছাসেবকরা কাজ করবেন। রোগীদের মোবাইল ফোনের মাধ্যমে খোঁজ নেওয়া হবে রুটিন মাফিক। কিছু টিম আমাদের বাড়ি বাড়ি গিয়েও সেবা দেবে।
তিনি বলেন, দেখুন বাংলাদেশের ডাক্তারা অবশ্যই বিশ্বমানের। তাদের আত্মত্যাগের কোনো কমতি নেই। যারা খুবই আন্তরিকতার সঙ্গে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন। তাদের কথাগুলো হয়তো মিডিয়ায় খুব বেশি প্রচার পায়নি। তারাই এই করোনা যুদ্ধের জেনারেল আর সেক্টর কমান্ডার। আমি তাদের টিমের একজন সৈনিক হয়ে যুদ্ধে অংশ নিতে এসেছি।
দেশে আসার পর গত রোববার থেকে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন তিনি। ব্র্যাক ট্রেনিং সেন্টারে রাখা হয়েছে তাকে।
ফেরদৌস খন্দকার বলেন, আমি মানুষের ভালোবাসার টানে এসেছি, দীর্ঘ সময়ের জন্য আসিনি। আমার তো দেশে ফেরত যেতে হবে। কিন্তু কোয়ারেন্টিনে বন্দির মতো চলে গেলো ছয়দিন সময়, ১৪ দিন যদি কোয়ারেন্টিনেই থাকতে হয়, তাহলে সেবার দেওয়ার সময় কোথায় পাবো? যদিও অ্যান্টিবডি পজিটিভ থাকার পরো আমাকে এখানে রাখা হয়েছে। দেখুন আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের ছাত্ররাজনীতি করে আসছি, বঙ্গবন্ধুকে হৃদয়ে ধারণ করি। আমাকে মানুষের সেবা দেওয়ার সুযোগ না দিলে নিউইয়র্কের উদ্দেশ্যে চলে যাবো। তাহলে হয়তো দূর থেকেই কাজ করতে হবে। আমার ডাক্তার টিমের সদস্যরা নির্দেশনা অনুযায়ী মাঠে কাজ করবেন।
আফসোস করে তিনি বলেন, ভালো কাজের পদে পদে বাধা আসে। আমার ক্ষেত্রেও একই অবস্থা সৃষ্টি করা হয়েছে। আমি আসছি কাজ করতে, আমি ভালোবাসা দিয়েই জয় করবো সবাইকে। আমি বাংলাদেশের মানুষের জন্য স্বেচ্ছায় কাজ করতে এসেছি। ব্যবসা করতে নয়। যদি কাজ করার সুযোগ দেওয়া হয়; তাহলেই কাজ করবো, নইলে চলে যাবো। আমি তো কোনো সময় বলেনি যে এখানে থেকে যাবো। আমার পরিবারের সবাই আমেরিকা থাকে। আমি কোনো এমপি-মন্ত্রী হতে আর রাজনীতি করতে আসিনি। আসছি এদেশের মানুষের সেবা দেওয়ার জন্য, জন্মভূমির বিপদে পাশে থাকার জন্য। আমার এই আসাটাকে কিছু মানুষ হয়তো ভালোভাবে নেয়নি। কি কারণে নেয়নি আমি জানি না। আমার কাছে মাটির যে ঋণ, সেই ঋণ শোধ করতে এসেছি। মাটির ঋণ যদি একটুও শোধ করতে পারি আমার নিজের আত্মা শান্তি পাবে। আমি আমার দায়িত্ব বোধ থেকে এসেছি। তিনি আরও বলেন, আমরা যদি কিছু কুচক্রি মানুষগুলোর জন্য ছেড়ে চলে যাই। তাহলে আমাদের নেত্রীর হাত দুর্বল হবে, যারা এমন মিথ্যাচার করছে তারাই খন্দকার মোস্তাকের দোসর। তারা আমার নেত্রীর হাতকে দুর্বল করে দিয়ে খন্দকার মোস্তাকের কাজ করছে। আমাদের সবাইকে চ্যালেঞ্জ নিতে হবে, ছেড়ে যাওয়া যাবে না।
গুজব ও মিথ্যাচার প্রসঙ্গে ফেরদৌস খন্দকার বলেন, দেখুন, আমি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের রাজনীতি করেছি, কখনও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে বিচ্যুত হইনি। যখন যুক্তরাষ্ট্রে আমি আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কর্মসূচির সঙ্গে জড়িত হতে থাকলাম, তখন থেকেই বুঝতে পারলাম, আমাকে কেউ কেউ রাজনীতির মাঠে মেনে নিতে পারছে না। নানাভাবে আমার রাজনীতির কর্মকাণ্ডে বাধা সৃষ্টি করছিল। আমাকে খন্দকার মোস্তাকের ভাতিজাসহ নানাভাবে বিতর্কিত করতে চেয়েছে। আমার ধারণা সেই নিউইয়র্ক থেকে আওয়ামী লীগের একটি গ্রুপসহ স্বাধীনতাবিরোধী চক্রও আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচারে মাঠে নেমেছে। সেই গ্রুপের প্ররোচণায় বাংলাদেশের একজন শ্রদ্ধাভাজন মানুষের ফেসবুক আইডিতে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচারটি শুরু হয়। এরপর না বুঝেই গুজবটি ভাইরাল হয়। শেষ পর্যন্ত গুজবকে বিতারিত করে সত্যটি উন্মোচিত হয়। গুজবকারীরা অনেকেই লজ্জায় অনুতপ্তও হয়। তবে এই মিথ্যাচার আর গুজবের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল আমার ছাত্রলীগের ভাইয়েরা, যুবলীগ, আওয়ামী লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ দলমত নির্বিশেষে সর্বস্তরের লাখ লাখ মানুষ। আমি ওইসব মানুষের কাছে কৃতজ্ঞ, তাদেরও ঋণ আমি কোনোদিন শোধ করতে পারবো না।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের মাউন্ট সিনাই হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. ফেরদৌস। যুক্তরাষ্ট্রে করোনার চিকিৎসা দিয়ে সফলতা দেখিয়েছেন তিনি। সেখানকার প্রবাসী বাংলাদেশিদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে চিকিৎসা দিয়েছেন তিনি। সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর জন্যই বাংলাদেশে এসেছেন বলে দাবি করেন তিনি।
করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে দেশের মানুষকে সেবা দিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা প্রবাসী ডা. ফেরদৌস খন্দকারকে কোন ক্ষমতাবলে ও কোন আইনে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে তা জানতে চেয়ে সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি আইনি (লিগ্যাল) নোটিশ পাঠানো হয়েছে। প্রসঙ্গত, শুক্রবার (১২ জুন) সকালে জনস্বার্থে সংশ্লিষ্টদের ই-মেইলে মানবাধিকারকর্মী ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট এ এম জামিউল হক ফয়সালের পক্ষে অপর আইনজীবী ব্যারিস্টার গাজী ফরহাদ রেজা এই নোটিশ পাঠান।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের (জননিরাপত্তা বিভাগ) সচিব, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় মন্ত্রণালয়ের (সুরক্ষা সেবা বিভাগ) সচিব ও বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিবকে এ নোটিশ দেয়া হয়েছে। আগামী ২ দিনের মধ্যে নোটিশের উপযুক্ত ব্যাখ্যা বা জবাব না পেলে যথাযথ আইনের আশ্রয় নেয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে।
পাঠকের মতামত