
চট্টগ্রাম: ১৯৮৬ সালে স্বৈরাচারবিরোধী ‘আন্দোলনের নেত্রী’ শেখ হাসিনা একবার এসেছিলেন ‘চট্টগ্রামের আন্দোলনের নেতা’ মহিউদ্দিনের চশমাহিলের বাড়িতে। ৩১ বছর পর আরেকবার এলেন শেখ হাসিনা সেই বাড়িতে। মহিউদ্দিন নেই, ঘুমিয়ে আছেন বাড়ির পাশে মাটিতে। মহিউদ্দিনহীন সেই বাড়িতে ঢোকার সময়ই আবেগাক্রান্ত হয়ে পড়েন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রবেশপথ দিয়ে ঢুকেই টিনের ছাউনি দেওয়া যে ঘরটিতে বসে মহিউদ্দিন সঙ্গ দিতেন নেতাকর্মীদের, সেই ঘরেই প্রথম পা পড়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। ঘরটির দেয়াল জুড়ে ছড়িয়ে আছে মহিউদ্দিনের স্মৃতি। উদ্দাম তারুণ্যে বঙ্গবন্ধুর পায়ের কাছে বসে থাকা মহিউদ্দিন। আন্দোলন-সংগ্রামে হাসিনার পাশে থাকা রাজপথ কাঁপানো নেতা মহিউদ্দিন। জনতার ভালোবাসায় সিক্ত মহিউদ্দিন। সব, সব স্মৃতি ফ্রেমে বন্দি হয়ে ঠাঁই নিয়েছে দেয়ালে।
প্রধানমন্ত্রী ঘরটিতে ঢুকেই সেই স্মৃতিগুলো ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখেন আর বারবার চোখ মুছেন। স্মৃতিকাতর হয়ে প্রধানমন্ত্রী বারবার আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
মহিউদ্দিনের স্ত্রী হাসিনা মহিউদ্দিন বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ছবিগুলো সব দেখেছেন। তিনি খুবই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলেন। আমাকে বললেন-কত স্মৃতি ! উনার (মহিউদ্দিন) মত মাটি থেকে উঠে আসা একজন নেতা চলে গেলেন। রাজনীতির জন্য অনেক ক্ষতি হয়ে গেল। পার্টির জন্যও ক্ষতি, দেশের জন্যও ক্ষতি।
মহিউদ্দিনের জামাতা ডা.সেলিম আক্তার বাংলানিউজকে বলেন, ছবিগুলো দেখার সময় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বারবার চোখ মুছতে দেখেছি। তিনি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর পঁচাত্তর পরবর্তী ভূমিকার কথা বলেছেন। চট্টগ্রামে পার্টিকে পুন:সংগঠিত করার ক্ষেত্রে উনার (মহিউদ্দিন) অবদান অনেক বেশি।
রোববার (২৪ ডিসেম্বর) বিকেল ৪টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর চশমাহিলের বাসায় আসেন। গাড়ি থেকে নামার পর মহিউদ্দিনের দুই ছেলে মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ও বোরহানুল হাসান চৌধুরী সালেহীন প্রধানমন্ত্রীর পা ছুঁয়ে সালাম করেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী হাসিনা মহিউদ্দিনকে জড়িয়ে ধরেন।
নওফেল বাংলানিউজকে জানান, বসার কক্ষ থেকে নওফেল প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে মহিউদ্দিনের শোবার কক্ষে যান। সঙ্গে তার মা হাসিনা মহিউদ্দিনও ছিলেন।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এসময় প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, নেত্রী-এটা মহিউদ্দিনের বেডরুম হলেও জনগণের অবাধ যাতায়াত ছিল। এই বেডরুম থেকেই মহিউদ্দিন সব আন্দোলন-সংগ্রাম পরিচালনা করেছেন।
জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু কি আন্দোলন-সংগ্রাম ! এই চট্টগ্রামের উন্নয়ন তো মহিউদ্দিন ভাই শুরু করেছিলেন। উনি মেয়র হওয়ার পর উনার হাত দিয়েই উন্নয়নের শুরু হয়েছে।
মহিউদ্দিনের বাসা ত্যাগের আগে নওফেল ও সালেহীনকে প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন হাসিনা মহিউদ্দিন। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, নেত্রী আপনিই এখন এদের অভিভাবক। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, হ্যাঁ-আমিই ওদের অভিভাবক।
হাসিনা মহিউদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন-উনি আমাদের পাশে থাকবেন। উনি আমাদের পরিবারের অভিভাবক।
মহিউদ্দিনের বাসায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য গৃহায়ন ও গণপূর্মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী, সাবেক মন্ত্রী ড.হাছান মাহমুদ, সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম, মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী, উপ-দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন ছিলেন।
মহিউদ্দিনের বাসা থেকে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে গাড়িবহর সরাসরি চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়। বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে প্রধানমন্ত্রী সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে ঢাকায় পৌঁছান।
গত ১৪ ডিসেম্বর গভীর রাতে নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর জীবনাবসান ঘটে।
পাঠকের মতামত