
হুমায়ুন কবির জুশান ::
মিয়ানমারে রাখাইন রাজ্যে সহিংসতার মুখে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ করে আসছেন। ধর্ষণসহ নানা রকম নির্যাতনের শিকার হয়ে অনেক কিশোরী নারীকে জীবন দিতে হয়েছে। তাদের ওপর চালানো বর্বরতায় হাজার হাজার রোহিঙ্গা প্রাণ হারিয়েছে। বাংলাদেশে প্রবেশ করতে গিয়ে নাফ নদীতে নৌকাডুবিতে শত শত মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিক নারী ও শিশু প্রাণ হারিয়েছে। রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আসতে উৎসাহিত করেছে শরণার্থীদের ব্যাপারে বাংলাদেশের নমনীয় অবস্থান। গত দুই দিনে দুই শতাধিক রোহিঙ্গা কুতুপালং লম্বাশিয়া ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে। নতুন করে আসা রোহিঙ্গারা বলছেন, তারা মংডু বুচিদংয়ের কিছুটা নিরাপদ এলাকাগুলোতে থাকতেন। পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার আশায় এতদিন আসেননি। তবে শেষ পর্যন্ত আসতে বাধ্য হচ্ছেন। এদের বেশির ভাগই দলে দলে ভাগ হয়ে ্আসছেন। তারা মূলত পাশের এলাকাগুলোতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নৃশংসতা দেখে প্রাণ বাচাঁতে পালিয়ে আসছেন। এখনো মিয়ানমার সৈন্যদের অব্যাহত পীড়নে চলে আসতে বাধ্য হন বলে জানিয়েছেন রোহিঙ্গা যুবক কোরবান আলী। হাজেরা, নুর কায়দা ও মায়েশা বলেন, তারা ভায়ের সাথে দিনের বেলা সুযোগ বুঝে অল্প অল্প করে বাংলাদেশের দিকে অগ্রসর হয়েছেন। রাতে কখনো পাহাড়ের আড়ালে, কখনো ঝোপ জঙ্গলে বিশ্রাম নিয়েছেন। ভোর হলে আবার যাত্রা শুরু। আগে থেকে আসা আতœীয়দের সাথে মোবাইলে যোগাযোগের মাধ্যমে গত ১০ ডিসেম্বর কুতুপালং লম্বাশিয়া ক্যাম্পে এসে পৌঁছান। কুতুপালং লম্বাশিয়া ৩ নং ক্যাম্পের মাঝি মোরশেদ আলম বলেন, মিয়ানমার সেনাবাহিনী সেখানে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন ও হত্যাকান্ড অব্যাহত রেখেছে তাই তাদের কাছে আমরা রোহিঙ্গা মুসলমানরা নিরাপদ নয়। মিয়ানমারের রাখাইনে গৃহহীন নির্মম নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি তিনি দাবি জানান। এদিকে উখিয়া কুতুপালং ৫ নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে শীত বস্ত্র বিতরণ করেছেন দি ফ্রেন্ডস অফ বাংলাদেশের সাবেক সভাপতি ডঃ আউয়াল তিনি নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের সাথে কথা বলেন এবং রোহিঙ্গাদের এই অমানবিক পরিস্থিতিতে তাদের পাশে থাকা সকল দেশের প্রয়োজন। বর্তমান সময়ে বিশ্বের সব চেয়ে মানবিক বিপর্যয় রোহিঙ্গা সংকট। তিনি আরো বলেন, অত্যন্ত দুরবস্থায় পড়া এসব মানুষ প্রাণের ভয়ে ঘরবাড়িসহ সবকিছু ছেড়ে নিঃস্ব অবস্থায় পালিয়ে বাংলাদেশে আসছে। ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনাসহ সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন, ম্যাজিষ্ট্রেট তহিদুল ইসলাম, মাসুদ হোসেন ও উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ নিকারুজ্জামান। অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন,ইন্জিনিয়ার মাইন, বিথি আক্তার ও সুমন। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক নুর মোহাম্মদ সিকদার বলেন,লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গার কারণে এখানকার আশ্রয় শিবির ও বসতিগুলোর ওপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি হয়েছে। উখিয়ার কুতুপালংয়ে এবং টেকনাফের নয়াপাড়ায় বর্তমানে দুটি নিবন্ধিত শরণার্থী শিবির রয়েছে। ওই দুটি শিবিরে বসবাস করছে প্রায় ৩৪ হাজার রোহিঙ্গা। গত ২৫ আগষ্ট হতে প্রতিবেশী মিয়ানমারে রাখাইন রাজ্য থেকে সরকারি বাহিনীর নির্যাতনের মুখে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে এসে আশ্রয় নিয়েছে অন্ততঃ সাড়ে ৬ লক্ষ রোহিঙ্গা। এসব বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গাদের অস্থায়ীভাবে আশ্রয় নিয়েছে উখিয়া – টেকনাফের আশ্রয় শিবিরে। তবে অধিকাংশের অবস্থান উখিয়ার বিভিন্ন আশ্রয় শিবিরে। উখিয়ার কুতুপালং, বালুখালীর ঢালা, তাজনিমার খোলা, মক্কার বিল, জামতলী শফিউল্লাহ কাটা এলাকায় গড়ে তোলা অস্থায়ী আশ্রয় শিবিরে ইতিমধ্যে প্রায় ছয় লক্ষাধিক রোহিঙ্গা অবস্থান করছে বলে বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে। আর টেকনাফের নয়াপাড়া, লেদা, শামলাপুর, উনছিপ্রাং, তোলাতুলিতে অস্থায়ী আশ্রয় শিবিরে বসতি গড়ে তুলেছে আরো প্রায় দুই লক্ষ রোহিঙ্গা। উখিয়ার কুতুপালং, বালুখালী ও টেকনাফের লেদা নয়াপাড়ায় ইতিপূর্বে অবস্থান করছে আরো প্রায় আড়াই লক্ষ রোহিঙ্গা। গত সপ্তাহে কক্সবাজারস্থ শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার অফিস সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যমতে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত নতুনভাবে ছয় লক্ষ ৩৫ হাজার ২শ জন রোহিঙ্গা অবস্থান নিয়েছে। গত বছরের অক্টোবরের পর এসেছে ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা। ইতিপূর্বে উল্লেখিত স্থানে অবস্থান করছে দুই লক্ষ চার হাজার রোহিঙ্গা। সব মিলিয়ে উখিয়া – টেকনাফে আশ্রিত মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিক রোহিঙ্গাদের সংখ্যা প্রায় ১১ লক্ষের কাছাকাছি।
পাঠকের মতামত