
বিশেষ প্রতিনিধি::
‘দিনমজুরি কাজ করে চারজনের সংসার চালাতেন।এখন করোনা ভাইরাস আতঙ্কের মধ্যে কাজকর্ম বন্ধ হয়ে গেছে।চলছে লকডাউন। চারিদিকে দোকানপাট বন্ধ। কোথাও দিনমজুরের কাজ পাওয়া যাচ্ছে না। সংসার চালানো কষ্ট হয়ে গেছে।এরমধ্যে আলোর পাঠশালা থেকে এক বস্তা ভর্তি খাদ্য সামগ্রী দিয়েছেন।এসব নিয়ে কোনো রকমে কয়েকদিন তো চলতে পারব। মেয়েকে স্কুলে পড়াতে যেমন- খরচ লাগে না, তেমনি দূর্যোগকালীন সময়ে স্কুলের শিক্ষার্থীদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে প্রথম আলো ট্রাস্ট। এইজন্য কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাই।
প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে সামিট গ্রুপের সহায়তায় গতকাল রবিবার বেলা ১১টায় বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে খাদ্যসামগ্রী পেয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন হাবিবা সুলতানার বাবা দিনমজুর হেলাল উদ্দিন।
টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের দমদমিয়া এলাকায় ‘প্রথম আলো ট্রাস্ট’ পরিচালিত দমদমিয়া বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ‘আলোর পাঠশালার’ চতুর্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থী হাবিবা সুলতানা। শুধু তিনি নয়. ওই এলাকার আরও ১৫৪ জন শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করছেন বিনা বেতনে। ৫জন শিক্ষক কর্মরত রয়েছেন বিদ্যালয়টিতে। তাদের বেতন-ভাতাও দিচ্ছেন।
দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী মোহাম্মদ রাসেলের মা খুরশিদা বেগম বলেন, ‘ করোনা ভাইরাসের আতঙ্কে অনেকদিন ধরে স্কুল বন্ধ হয়ে গেছে। এরমধ্যে স্কুলে খাদ্য সামগ্রী দেওয়া হচ্ছে, স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে শুনে প্রথমে বিশ্বাস করতে পারেনি। কারণ, এলাকার কোনো, মেম্বার, চেয়ারম্যান ও প্রভাবশালী ব্যক্তি ও কেউ আমাদের খোঁজখবর রাখছে না।সেখানে স্কুল কর্তৃপক্ষ কেন নেবেন। আমাদের খবর রেখেছেন এবং তাদের শিক্ষার্থীরা না খেয়ে থাকবে. সে কথা টুকু মাথা রেখে খাদ্য সামগ্রীর ব্যবস্থা করেছে। কি বলে প্রথম আলোকে ধন্যবাদ জানাই এর ভাষা হারিয়ে ফেলেছি।
বিদ্যালয়ের মাঠে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে খাদ্যসামগ্রী তুলে দেওয়া হয়। এছাড়া শিক্ষার্থীদের উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তার উদ্যোগে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে দুটি করে ‘গ্লাভস ও একটি করে মাস্ক’ পরিয়ে দেওয়া হয়েছে।শিক্ষার্থীরা নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে খাদ্য সামগ্রী নিয়ে বাড়ি ফিরে যান।
খাদ্য সামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন-টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা চিকিৎসক টিটু চন্দ্র শীল, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফরিদুল আলম, প্রথম আলোর টেকনাফ প্রতিনিধি গিয়াস উদ্দিন, টেকনাফ সাংবাদিক ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক নুরুল হোসাইন, দৈনিক মানবজমিনের টেকনাফ প্রতিনিধি আমানুল্লাহ কবির, রেডিও নাফের বার্তা সম্পাদক সাইফুদ্দিন মোহাম্মদ মামুন, স্বাস্থ্য সহকারী জাফর আলম ও বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বাবুল ইসলাম প্রমুখ।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে করোনাভাইরাস নিয়ে জাতীয় সংগীতের চারটি লাইন পাঠ করে হাত ধোয়ার উপর সচেতনতামূলক বক্তব্য দেন-টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা চিকিৎসক টিটু চন্দ্র শীল।
তিনি বলেন,গত বছর এদিনে আমি আমার মেয়েকে হারিয়েছি।আপনজন হারানো বেদনা খুবই কঠিন, তোমাদের মাঝে আমি নিজের মেয়েকে খুঁজে পাচ্ছি।তোমরা ঘরে থাকবে, নিরাপদে থাকিবে।
ইউএনও মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, অসাধারণ এক উদ্বেগ।দেশের ক্রান্তিকালে প্রথম আলোর এ ধরনের আয়োজনকে স্বাগত জানায়। আজ অন্তত পক্ষে টেকনাফে ১৫৫জন শিক্ষার্থী ও পাঁচজন শিক্ষককে হাতে-কলমে হাত ধোয়ার উপর সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।পুরো উপজেলায় আমরা এভাবে যদি শিক্ষার্থীদের সচেতনতা সৃষ্টি করতে পারলে ‘করোনাভাইরাস’ মোকাবেলা আমাদের জন্য আর ও অনেক সহজ হতো।
তিনি বলেন, এ মহামারি থেকে সুরক্ষা পেতে সরকার তোমাদের ছুটি দিয়েছেন।ঘর থেকে বাহির হওয়ার কোনো কারণ নেই।ঘরে বসে নিয়মিত পড়ালেখা করার জন্য পরামর্শ দেন তিনি।
সংবাদিক নূরুল হোসাইন বলেন, প্রথম আলো সবসময় দেশের কল্যাণে কাজ করে।প্রথম আলো একটি পত্রিকা নয়. সমাজের পথ প্রদর্শকও বটে। আসুন আমরা সকলে মিলে প্রথম আলোর মতো দেশের ক্রান্তিকালে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াই।
সাংবাদিক আমানুল্লাহ কবির বলেন, এখানকার শিক্ষার্থীদের কাছে কী প্রয়োজন ছিল ত্রাণসামগ্রী দেওয়া। এটি প্রথম আলোর কাজ ও দায়িত্ব নয়। এরপরও সমাজের দর্পণ হিসেবে অন্যরা যাতে এগিয়ে আসে সেই পথ দেখালেন প্রথম আলো। ।
সভাপতি ফরিদুল আলম বলেন, নাফ নদীর তীরে অবস্থিত এই বিদ্যালয়টি যাবতীয় খরচ বহন করে যাচ্ছে প্রথম আলো ট্রাস্ট। এরমধ্যে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিলেন ত্রাণ সামগ্রী।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বাবুল ইসলাম বলেন,বিদ্যালয়ে মাঠে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে এক বস্তা ভর্তি পাঁচ কেজি চাল, দুই কেজি আলু, এক কেজি ডাল, এক লিটার সয়াবিন তেল, আধা কেজি লবণ, আধা কেজি পেঁয়াজ ও এক পিস সাবান দেওয়া হয়েছে।
পাঠকের মতামত