প্রকাশিত: ০৯/০৪/২০২২ ৯:৫৪ এএম

পাকিস্তানের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে অনাস্থা ভোটের মুখোমুখী হওয়ার আগের রাতে টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে দেশটির প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছেন, সুপ্রিম কোর্টের রায় তিনি মেনে নিয়েছেন।

তবে বিদেশি শক্তির সঙ্গে সমঝোতা করে যদি কোনো গোষ্ঠী যদি পাকিস্তানের ক্ষমতায় আসীন হতে চায়, সেক্ষেত্রে তা মেনে নেবেন না বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।

শুক্রবারের ভাষণের শুরুতে ইমরান খান বলেন, ‘(সুপ্রিম কোর্টের রায়ে) আমি মনঃক্ষুণ্ণ হয়েছি; কিন্তু এই রায় আমি মেনে নিয়েছি।’

‘অনাস্থা প্রস্তাবের পেছনে বিদেশি শক্তির কারসাজি আছে এবং আমি চেয়েছিলাম, সুপ্রিম কোর্ট যেন অন্তত এ বিষয়টিতে নজর দেয়। কারণ, কোনো বিদেশি শক্তি ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে একটি দেশের সরকারকে উৎখাতের চেষ্টা করছে— এটা খুবই গুরুতর একটি অভিযোগ। আমি আশা করেছিলাম, আদালতে যেসব নথি আমরা উপস্থাপন করেছি—সেসব পরখ করবেন সর্বোচ্চ আদালত, যাচাই করার চেষ্টা করবেন আমরা সত্য বলছি কি না।’

‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে আদালত খুবই তাড়াহুড়ো করে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন।’

ভাষণে বিরোধী দলগুলোর কঠোর সমালোচনা করে ইমরান বলেন, কিছুদিন আগ পর্যন্তও যারা পরস্পরকে ‘চোর’ বলতেন, তারা কীভাবে হঠাৎ ঐক্যবদ্ধ হলেন তা পাকিস্তানের জনগণ জানে। যে কোনো মূল্যে ক্ষমতায় যাওয়া ও তার ভাগ-বাটোয়ারাই বিরোধীদের ঐক্যের মূল উৎস বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

পাকিস্তানের জনগণ এখনও ইমরান খানকেই সমর্থন করে এবং তার পরিবর্তে কোনো ‘আমদানি করা’ সরকার দেশের জনগণ মেনে নেবে না বলে জানিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী।

এ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আজ আমি যে অবস্থানে আছি, তার প্রধান কারণ জনগণ। পাকিস্তানের জনগণ আমাকে তাদের নেতা হিসেবে নির্বাচিত করেছে এবং আমি সবসময় তাদের সঙ্গে আছি।’

‘পাকিস্তানের জনগণের প্রতি আমি আহ্বান জানাতে চাই, আপনারা বাড়ির বাইরে বেরিয়ে আসুন এবং বিদেশি অর্থায়নে বর্তমানে যে নাটক চলছে তার প্রতিবাদ করুন। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কোনো বিদেশি ষড়যন্ত্র আমরা মেনে নিতে পারি না; তেমনি তাদের বসানো কোনো পুতুল সরকার বা আমদানি করা সরকারও আমরা মেনে নিতে পারি না।’

বৃহস্পতিবার এক রায়ে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছে, শনিবার স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১০টার মধ্যে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন বসাতে হবে। আস্থা ভোটের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত অধিবেশন মুলতবি করা যাবে না। পার্লামেন্টের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে অধিবেশন ডাকার আনুষ্ঠানিকতা সারা হয়েছে।

পার্লামেন্টে সমর্থনের যে হিসাব-নিকাশ দাঁড়িয়েছে, তাতে অনাস্থার লজ্জা নিয়ে ইমরানের প্রস্থান অনেকটাই নিশ্চিত। সেক্ষেত্রে মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার প্রায় দেড় বছর আগেই ইমরানের দল তেহরিক-ই-ইনসাফকে (পিটিআই) ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে হবে।

সেক্ষেত্রে বিরোধী দলগুলো জোট গড়ে তাদের একজন প্রার্থীকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত করতে পারবে। ২০২৩ সালের অগাস্টে বর্তমান পার্লামেন্টের মেয়াদ শেষ হওয়া পর্যন্ত তারা ক্ষমতা ধরে রাখতে পারবে।

গত ২৮ মার্চ পার্লামেন্টে এই অনাস্থা প্রস্তাব তুলেছিলেন প্রধান বিরোধী দল পাকিস্তান মুসলিম লীগের (এন) নেতা শাহবাজ শরিফ। পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার নামই ঘুরেফিরে আসছে।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের ভাই শাহবাজ বর্তমানে পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। তাকেই প্রধানমন্ত্রী পদের প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিরোধী জোট।

এদিকে, অনাস্থা প্রস্তাব পার্লামেন্টে ওঠার আগে থেকেই ইমরান খান তার বিরুদ্ধে বিদেশি ষড়যন্ত্র হওয়ার কথা বলে আসছিলেন। হুমকি দেওয়া একটি চিঠিও তিনি সাংবাদিকদের দেখাবেন বলে জানিয়েছিলেন। অবশ্য পরে তিনি বলেন, ওই চিঠিটিতে পাকিস্তানের ‘গোপন কোড’ থাকায় সেটি প্রকাশ্যে আনা যাবে না।

ইমরানের ওই অভিযোগের মধ্যেই তার বিরুদ্ধে পার্লামেন্টে অনাস্থা প্রস্তাব ওঠে। সেই প্রস্তাব পরে নাকচ করে দেন ডেপুটি স্পিকার; সুপ্রিম কোর্ট বৃহস্পতিবার তা ‘অসাংবিধানিক’ ঘোষণা করে বাতিল করে দিয়েছে।

‘বিদেশি চক্রান্ত’ থেকে নিজেদের সুরক্ষিত রাখার আহ্বান জানিয়ে জাতি উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমার দেশকে বলছি, আপনারা এর বিরুদ্ধে রুখে না দাঁড়ালে, কেউ অপনাদেরকে রক্ষা করতে আসবে না।’

সূত্র: ডন

পাঠকের মতামত

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে আসিয়ান

রাখাইন রাজ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টায় মিয়ানমারের প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে আসিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। পাশাপাশি ...

ফিলিস্তিনপন্থি গ্রুপকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে ভোট দিয়েছেন টিউলিপ

যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে প্রো-প্যালেস্টাইন কর্মসূচির সংগঠন ‘প্যালেস্টাইন অ্যাকশন’কে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যায়িত করে নিষিদ্ধ করার প্রস্তাবে ...