প্রকাশিত: ১৩/১২/২০১৬ ৯:৪০ পিএম

নিউজ ডেস্ক::: জাপান থেকে প্রকাশিত টোকিওভিত্তিক অনলাইন নিউজ ম্যাগাজিন ‘দ্য ডিপ্লোম্যাট’-এ নিবন্ধ লিখেছেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি-বিষয়ক উপদেষ্টা ও তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়।  ১২ ডিসেম্বর ওই ম্যাগাজিনে ‘বাংলাদেশ ফাইটস ম্যালিসাস ফেসবুক পোস্টিংস, অনলাইন হেট’ শিরোনামে নিবন্ধটি প্রকাশ করা হয়েছে।

নিবন্ধটির বাংলা অনুবাদ নিচে প্রকাশ করা হলো :

সত্যি খবরের দুনিয়ায় ভুয়া খবরের বিষয়টি সম্প্রতি আলোচিত। ইন্টারনেটে ক্লিক ও বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে অর্থ আয়ের উদ্দেশ্যে তৈরি কাল্পনিক খবর ছড়ানোর বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশের জন্য এখন সমস্যা। এ তালিকায় বাংলাদেশও আছে।

বাংলাদেশের সাংবিধানিক গণতন্ত্র নাগরিকের অধিকার সুরক্ষায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। যুক্তরাষ্ট্রের মতোই বাংলাদেশেও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের হয়রানির মুখে পড়তে হয়। বাংলাদেশের জঙ্গিরা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ব্যবহার করে বিদ্বেষ ছড়ায়। এ জন্য ফেসবুকে ভুয়া খবর পোস্ট করতে দেখা যায়।

সম্প্রতি ফেসবুকে এ ধরনের একটি ভুয়া ছবি ছড়ানো হয়। যাতে মুসলমানদের পবিত্রস্থান মক্কার একটি মসজিদে হিন্দু দেবতার ভুয়া ছবি ছড়ানো হয়। এর জের ধরে ইসলামি উগ্রবাদীরা ঢাকার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে ১৫টি মন্দির ও হিন্দু সম্প্রদায়ের ১০০ ঘরবাড়িতে ভাঙচুর করে। ছবিটি দেখলে পরিষ্কারভাবে বোঝা যায় তা দুর্বলভাবে ফটোশপ করা। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তা কোনো বিবেচ্য হয়ে দাঁড়ায়নি। এ ছবিটি উগ্রবাদ ছড়ানোর উপাদান হিসেবে ব্যবহার করে হিন্দুদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ তৈরি করা হয়েছে।

এ ঘটনায় নাগরিকদের সুরক্ষায় সরকার দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করে।

ঘটনাস্থল থেকে সংগ্রহ করা ভিডিওর ভিত্তিতে এই অপরাধের জন্য প্রায় ৮০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। অনেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা যাতে দ্রুত বিচার পান, সে জন্য সরকার এই মামলাগুলো দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে দেওয়ার ঘোষণা দেয়।

একই সঙ্গে ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে, তা ঠেকাতে কাজ করছে সরকার। এ আক্রমণ ঠেকাতে ব্যর্থ দুজন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সরকার এ অঞ্চলের হিন্দুদের নিরাপত্তার জন্য অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) ও বিজিবি সদস্যদের মোতায়েন করে। ধর্মীয় বিবেচনা ছাড়াই এ ঘটনায় ভুক্তভোগীদের সান্ত্বনা ও ভরসা দিতে সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা সেখানে যান। এ ছাড়া সহিংস ঘটনায় উসকানি দেওয়া ও বিদ্বেষ ছড়ানোর ৩৫টি ওয়েবসাইট বন্ধ করে সরকার।

বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশে ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিদ্বেষ ছড়ানোর বিষয়টি ব্যাপকভাবে বেড়েছে। ফ্রান্স, বেলজিয়াম, যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের উগ্রবাদীরা দূরে বসে উসকানিমূলক শব্দ ও ছবি ইন্টারনেটে ছড়াচ্ছে। গত জুলাইয়ে ঢাকায় হলি আর্টিজান বেকারিতে জিম্মি ও আক্রমণের সময় জঙ্গিরা গ্রাহকের মোবাইল ফোন ব্যবহার করে ইন্টারনেটে ছবি পাঠিয়েছিল। ওই সময় হোটেল কর্মীদের ওই রেস্তোরাঁর ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক চালু করতে বলেছিল জঙ্গিরা।

ঢাকার ক্যাফেতে ওই হামলার পর সরকার ১৩ জনকে জিম্মিদশা থেকে মুক্ত করে। এরপর থেকে সন্দেহভাজন অনেককেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সম্প্রতি ওই আক্রমণের ঘটনায় ভূমিকার জন্য স্থানীয় একটি কুখ্যাত জঙ্গি দলের নেতাসহ নয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করেছেন সরকারি কৌঁসুলিরা। জানুয়ারি মাসের প্রথম দিকেই তাঁদের বিচার শুরু হবে।

যারা ইন্টারনেট শক্তিকে খারাপ কাজে ব্যবহার করছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। এর পাশাপাশি ইন্টারনেটের প্রসার ও তাৎক্ষণিক যোগাযোগের দিকটিতে ভালো কাজে লাগাতে উৎসাহিত করছে।

আধুনিক বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা, যিনি সন্ত্রাসের শিকার হয়ে নিহত হয়েছিলেন, তাঁর কন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স (শূন্য সহনশীলতা) নীতি গ্রহণ করেন। তিনি ইন্টারনেট ব্যবহার করে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশের ৬৪টি জেলার মানুষের সঙ্গে জঙ্গি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরিতে কথা বলেন।

কোনো সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটলে জঙ্গিরা যেন ঘটনাস্থল থেকে ইন্টারনেট ব্যবহার করে ভিডিও, ছবি বা তাৎক্ষণিক তথ্য পাঠাতে না পারে, সে জন্য ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করার মহড়া দিয়েছে সরকার।

বাংলাদেশ সরকার শান্তিপূর্ণ বাক্‌স্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলেও ইন্টারনেট ব্যবহার করে সন্ত্রাসীদের মিথ্যা খবর ছড়ানোর বিষয়টি বা ভয়ংকর ঘটানোর জন্য প্রভাবিত করার বিষয়টি মেনে নেবে না।

বিশ্ব এখন মিথ্যা বিদ্বেষ ছড়ানোতে ইন্টারনেটের ক্ষমতার বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বুঝতে পারছে। তবে দুর্ভাগ্যবশত নতুন এই যুদ্ধে বাংলাদেশকে সামনের সারিতে থাকতে হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার নাগরিকদের নিরাপত্তা ও সাংবিধানিক সুরক্ষায় এ যুদ্ধে ভালোভাবে সুসজ্জিত।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণভাবে এবং বিশ্বজুড়ে তার মিত্রদের সঙ্গে নিয়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও সন্ত্রাস দমনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

নিবন্ধের লিংক :  http://thediplomat.com/2016/12/bangladesh-fights-malicious-facebook-postings-online-hate/

পাঠকের মতামত

সংকট না কাটলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন অসম্ভব, আলোচনা চালাচ্ছে বাংলাদেশ

রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ থেকে রাখাইনে ফিরলেই সমস্যার সমাধান হবে না। মিয়ানমারের ভেতরেও অনেক রোহিঙ্গা বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ...

ডাকসুর ভিপি সাদিক ও জিএস ফরহাদ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে নিটকতম প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে ব্যাপক ব্যবধানে ...