নিউজ ডেস্ক:: পেশাদার ইয়াবা ব্যবসায়ী জামাল উদ্দিন খোকাকে আটকের পর ১২ লাখ টাকা নিয়ে ছেড়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছেচকবাজার থানা পুলিশের বিরুদ্ধে। থানার দুই কনস্টেবল গত সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) জামালের স্ত্রীর সাথেচকবাজারে একটি হোটেলে বৈঠক করেছেন এমন একটি ভিডিও ফুটেজ এ প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। জামাল নগরগোয়েন্দা পুলিশের তালিকাভুক্ত পলাতক ইয়াবা ব্যবসায়ী। ৪০ হাজার ইয়াবা পাচারের অভিযোগে তার বিরুদ্ধেপাঁচলাইশ থানায় মামলাও রয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, পুলিশের তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ী জামালের স্ত্রীর সাথে দুইকনস্টেবলের এতই সুসম্পর্ক কিসের ? চকবাজার থানার পরিদর্শক (ওসি) মীর নুরুল হুদা জানান, এ ধরনের একটি বিষয় আমার কানেও এসেছে। তবেথানায় কেউ অভিযোগ দেয়নি। বিষয়টি আমি খতিয়ে দেখছি। মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে ইয়াবা ব্যবসায়ী জামাল উদ্দিন খোকা বলেন, ভাই এসব বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা। পাঁচলাইশ থানায় দায়ের করা মামলা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে খোকা মুঠোফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। অনুসন্ধানে জানা যায়, গত সোমবার আনুমানিক দুপুর বারোটায় চকবাজার থানার উপ–সহকারী পরিদর্শক(এএসআই) তরিকুল ইসলাম ও কয়েকজন কনস্টেবল মিলে নগরীর গোলাপাহাড় মোড় থেকে জামাল উদ্দিন খোকানামে এক ব্যক্তিকে আটক করেন। তবে তাকে থানায় নেয়া হয়নি। হাটহাজারীর মির্জাপুর গ্রামের মৃত আলিআহমদের ছেলে জামাল উদ্দিন পেশাদার ইয়াবা ব্যবসায়ী। আটকের পর জামালের পরিবারের সাথে যোগাযোগকরেন চকবাজার থানার কনস্টেবল সৌমিত্র মজুমদার। জানতে চাইলে এএসআই তরিকুল ইসলাম বলেন, এ ধরনের কোন বিষয় আমার জানা নেই। তাছাড়া যেকনস্টেবলদের কথা বলছেন তারাও মনে হয় হোটেলে যায়নি। পূর্বকোণের হাতে আসা ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, সন্ধ্যা ছয়টা থেকে পৌনে সাতটা পর্যন্ত নগরীর চকবাজার সবুজহোটেলে জামালের স্ত্রী ও তার তিন বন্ধুর সাথে দফায় দফায় বৈঠক করেন চকবাজার থানার পুলিশ কনস্টেবলসৌরভ মজুমদার ও গোলাপী শার্ট পরিহিত একজন কনস্টেবল। ফুটেজে দেখা যায়, সোমবার ( ১২ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা ৬টা ১৫ মিনিটে ইয়াবা ব্যবসায়ী জামালের স্ত্রী কাঁধে গোলাপী রংয়ের হাত ব্যাগ নিয়ে সবুজ হোটেলে প্রবেশকরেন। এর আগে মুখে কালো মাস্ক পরা পাঞ্জাবি পরিহিত একজন ব্যক্তি প্রবেশ করেন। তার পেছনে পেছনে প্রবেশকরেন আরো দুই ব্যক্তি। ৬টা ১৮ মিনিটে টি–শার্ট আর চোখে চশমা পরিহিত কনস্টেবল সৌরভ মজুমদার ওগোলাপী রংয়ের শার্ট পরা অন্য একজন কনস্টেবল হোটেলে প্রবেশ করেন। হোটেলে প্রবেশ করতেই গোলাপী শার্টপরিহিত কনস্টেবল দুই কানে দুটি মোবাইল লাগিয়ে একসাথে কথা বলেন। ৬ টা ৪০ মিনিটে মুঠোফোনে কথা বলতেবলতে কনস্টেবল সৌরভ একবার বাইরে বের হন। কিছুক্ষণ পর তিনি আবার হোটেলে প্রবেশ করেন। এর একমিনিটের মাথায় ফোনে কথা বলতে বলতে আবার বের হয়ে যান। দুই মিনিট পর আবারো হোটেলে প্রবেশ করেনকসস্টেবল সৌরভ। ৬টা ৪৬ মিনিটে ইয়াবা ব্যবসায়ী জামালের স্ত্রীসহ সবাই একসাথে বের হয়ে যান। অভিযোগউঠেছে, জামালের স্ত্রী বারো লাখ টাকা দুই কনস্টেবলকে দেয়ার পর রাতে জামালকে ছেড়ে দেয়া হয়। গতকাল বুধবার রাত নয়টায় মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে কনস্টেবল সৌমিত্র মজুমদার বলেন, কোনো মহিলারসাথে সবুজ হোটেলে আমি বসিনি। ভিডিও ফুটেজের কথা বলতেই সৌমিত্র বলেন, ঐ সময় আমি আমার আরেকসহকর্মী হোটেলে নাস্তা খেতে গিয়েছিলাম। ৬টা ১৫ মিনিট থেকে পৌনে সাতটা পর্যন্ত ভিডিও ফুটেজে তাদেরকে চা কিংবা নাস্তা করতে দেখা যায়নি – বললেকনস্টেবল সৌমিত্র বলেন, ভাই সারাদিন ডিউটি করতে করতে চা খেয়েছি কিনা কিংবা আমার সাথে টেবিলে কেবসেছিল, কখন কি করেছি তা মনে নেই। কিছু জানতে চাইলে আপনি আমার ওসি স্যারের সাথে কথা বলেন। অনুসন্ধানে জানা যায়, হাটহাজারীর মির্জাপুর গ্রামের মৃত আলি আহমদের ছেলে জামাল উদ্দিন খোকা (৩৫) বড়মাপের একজন ইয়াবা পাচারকারী। ৪০ হাজার ইয়াবা পাচারের অভিযোগে তিন সহযোগীসহ জামালের বিরুদ্ধেপাঁচলাইশ থানার মামলা দায়ের করেন নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ–পরিদর্শক (এসআই) আজাহারুল ইসলাম।জামাল ছাড়াও মামলার অন্য দুই আসামি হলেন : কর্ণফুলীর থানার চরপাথারঘাটার হাসান ও ইউসুফ। হাসানকেঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার করা হলেও বাকী দুইজন পলাতক রয়েছেন। পাঁচলাইশ থানার পশ্চিম ষোলশহর আহমদ চৌধুরী সড়কের ‘রাজধানী ভবন’র পঞ্চম তলার ৫০১ নম্বর ফ্ল্যাটটিভাড়ায় নিয়ে সেখানে ইয়াবা রাখা হতো। গত ৪ জানুয়ারি সেই ফ্ল্যাট থেকে ৪০ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, জামাল ও তার সহযোগীরা বার্মা থেকে টেকনাফ হয়ে ইয়াবা এনে এ ফ্ল্যাট বাসায়মজুদ করতো। সেখান থেকে নগরীর বিভিন্নস্থানে পাইকারি ও খুচরা বিক্রি করতো।
...