প্রকাশিত: ২৮/০২/২০২০ ১১:০৩ পিএম

জালিয়াতির মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) করতে তিন রোহিঙ্গা নাগরিককে তুলে দেওয়া হয় জন্ম নিবন্ধন ও সিটি কর্পোরেশনের নাগরিক সনদ। আর্থিক লেনদেনের বিনিময়ে দেওয়া হয়েছে এই সনদ। এতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে এনআইডি জালিয়াতির ঘটনায় ফেঁসে যেতে পারেন ৪০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও তার স্ত্রী সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলরসহ ওয়ার্ডের জন্ম নিবন্ধন সহকারী ও সচিব।

শুধু তাই নয়, এই তিন রোহিঙ্গা পেয়েছে পাসপোর্ট। এতে দুদকের তদন্তে ফেঁসে যাচ্ছেন পুলিশ ক্লিয়ারেন্স দেওয়া সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাও।

এদিকে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ৪০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাজী মো. জয়নাল আবেদীন ও তার স্ত্রী ৩৯, ৪০ ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর শাহানুর বেগম স্বাক্ষরিত তিন রোহিঙ্গা নাগরিককে ওয়ার্ড থেকে জন্ম নিবন্ধন ও জাতীয় সনদ দেওয়া হয়। সেখানে পৃথকভাবে সনদগুলোতে দুইজনই স্বাক্ষর করেন।

তিন রোহিঙ্গা নাগরিক হলেন- চট্টগ্রামের কর্ণফুলী থানার আজিমপুর ইছানগর জয়মন ফ্যাক্টরি রোডের মৃত ইয়াছিনের পুত্র রহিম উল্লাহ। তিনি পতেঙ্গা থানার ৪০ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর পতেঙ্গা কাটগড় এলাকার অস্থায়ী বাসিন্দা বলে সনদে উল্লেখ করেন। একই থানার ৪০ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব কাটগড় হামিদ হাজির বাড়ির বদিউর রহমানের পুত্র মো. আতাউল্লাহ, একই থানার পূর্ব হোসাইন আহম্মদ পাড়ার মো. মেহের আলীর পুত্র মো. হামিদ হোসেন। এরা তিনজনই ৪০ নম্বর ওয়ার্ড থেকে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের জাতীয় নাগরিক সনদ ও জন্ম নিবন্ধন বানিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে। পরবর্তীতে তারা এনআইডির সহযোগিতায় পাসপোর্টও বানিয়েছে।

এ বিষয়ে ৪০ নম্বর ওয়ার্ডের সচিব ফারুক উল্লাহ বলেন, কোন রোহিঙ্গা নাগরিককে সিটি কর্পোরেশনের জাতীয় সনদ দেওয়া হয়নি। কেউ অবৈধভাবে নিয়ে থাকলে সেটা যাচাই-বাছাই করলে বোঝা যাবে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে ৪০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, দেড় মাস আগেও ডিবি থেকে রোহিঙ্গা ভোটার জালিয়াতির বিষয়ে তদন্ত করতে এসেছিলেন। এ ধরনের জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত এই ওয়ার্ডের বার্মাপাড়া এলাকার নুর মোহাম্মদ নামে এক ব্যক্তি। তাকে ধরার জন্য বেশ কয়েকবার গিয়েছিলাম। তিনি রোহিঙ্গাদের আমার ওয়ার্ড থেকে সনদ পেতে সহযোগিতা করেন।

দুদক জেলা সমন্বিত কার্যালয় চট্টগ্রাম-২ এর এক কর্মকর্তা বলেন, চট্টগ্রামের অধিকাংশ ওয়ার্ডে জালিয়াতির মাধ্যমে রোহিঙ্গা এনআইডি বানাতে নাগরিক সনদ ও জন্ম নিবন্ধন দেওয়া হয়। এসব জালিয়াতির ঘটনায় কাউন্সিলর, ওয়ার্ডের জাতীয় নাগরিক সনদ ইস্যুর দায়িত্বে নিয়োজিত সচিব, জন্ম নিবন্ধন সহকারী এই ঘটনায় জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। শুধু তাই নয়, তারা পাসপোর্ট পেতে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স দেওয়া সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণও পাওয়া গেছে।

তিনি আরও বলেন, এ বিষয়ে অধিকতর তদন্ত চলছে। নতুন করে আরও শতাধিক এনআইডি জালিয়াতির খোঁজ পাওয়া গেছে। তদন্তকালে এ ঘটনায় যারা জড়িত থাকবে সাবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর মিয়ানমার থেকে কক্সবাজারে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে অনেকে টাকার বিনিময়ে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) তৈরি করে নিতে সক্ষম হয়েছে। একই সঙ্গে দালালদের সহযোগিতায় পাসপোর্টও বানিয়েছে তারা। প্রাথমিকভাবে এ ঘটনার তদন্ত করতে অনুসন্ধানে যান দুর্নীতি দমন কমিশন জেলা সমন্বিত কার্যালয় চট্টগ্রাম-২ এর এনফোর্সমেন্ট টিম। প্রাথমিক তদন্তে জালিয়াতির প্রমাণ পেয়ে অধিকতর তদন্তে অনুমতি চেয়ে কমিশনের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয় দুদকের এনফোর্সমেন্ট টিম। পরে ২২ সেপ্টেম্বর রোহিঙ্গাদের এনআইডি জালিয়াতির ঘটনায় পূর্ণাঙ্গ তদন্তের অনুমতি দেয় দুদক। সুত্র: চট্টগ্রাম প্রতিদিন

পাঠকের মতামত

কারাগার থেকে বের হয়ে আবারো রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অপরাধ ও ইয়াবা নিয়ন্ত্রণে নবী হোসেন গ্রুপ

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আলোচিত নবী হোসেন কারাগার থেকে বের হয়ে ফের বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তার বাহিনীর ...

শিবিরের প্যানেলে জায়গা পেয়ে যা বললেন সর্ব মিত্র চাকমা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে অন্তর্ভুক্তিমূলক প্যানেল ঘোষণা করেছে ইসলামী ছাত্রশিবির। ...