এম ফেরদৌস, বিশেষ প্রতিবেদক, উখিয়া নিউজ ডটকম
প্রকাশিত: ১৮/১২/২০২৫ ১২:০১ পিএম , আপডেট: ১৮/১২/২০২৫ ১২:০২ পিএম

কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির এলাকায় অত্রযত্র অনুমোদনবিহীন ফুটবল টার্ফ গড়ে উঠছে। প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক অনুমতি ছাড়াই রোহিঙ্গাদের অর্থায়নে এসব আধুনিক ফুটবল মাঠ (টার্ফ) অবৈধভাবে নির্মাণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও আশপাশের এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং প্রশাসনিক তদারকি নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

স্থানীয়দের দাবি, রোহিঙ্গা মাদক কারবারিদের অর্থ ব্যবহার করে এসব টার্ফ নির্মাণ ও পরিচালনা করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে নিয়মিত গণজমায়েত ঘটিয়ে লাখ লাখ টাকার অবৈধ বাণিজ্য চালানোর পাঁয়তারা করছে একটি অসাধু চক্র।

অনুসন্ধান ও তথ্যসূত্রে জানা গেছে, এসব টার্ফের মালিকানা ও অর্থায়নের পেছনে রয়েছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পকেন্দ্রিক অবৈধ কর্মকাণ্ডের টাকা। তবে বিষয়টি আড়াল করতে পরিচালনার দায়িত্ব কৌশলে স্থানীয় কিছু ব্যক্তির নামে রাখা হচ্ছে, যাতে এটি একটি স্বাভাবিক ব্যবসা হিসেবে উপস্থাপন করা যায়।

একাধিক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, দীর্ঘদিন ধরে রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘিরে মাদক কারবারসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরে রয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি টার্ফের মতো তথাকথিত বিনোদনমূলক অবকাঠামো ব্যবহার করে রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের মেলামেশার সুযোগ তৈরি করা হচ্ছে, যা ভবিষ্যতে বড় ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

জানা গেছে, ২০১৭ সাল থেকে কয়েক দফায় রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটলেও এখনো প্রত্যাবাসনের কার্যকর কোনো অগ্রগতি নেই। এই সুযোগে একটি চক্র অবৈধ ব্যবসা ও বসবাসকে স্থায়ী রূপ দেওয়ার চেষ্টা করছে। এতে সহযোগিতা করতে স্থানীয় কিছু অসাধু ব্যক্তিকে অর্থের লোভ দেখিয়ে বিভিন্ন ব্যবসায় অংশীদার করা হচ্ছে।

একইভাবে ফুটবল টার্ফগুলোও স্থানীয়দের নামে পরিচালিত হলেও বাস্তবে এর পেছনে রোহিঙ্গা মাদক কারবারিদের অর্থ রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এর মাধ্যমে এলাকায় একটি প্রভাবশালী বলয় তৈরির চেষ্টা চলছে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।

সরেজমিনে দেখা গেছে, মধুরছড়া ও জামতলীসহ অন্তত চারটি ফুটবল টার্ফ গড়ে উঠেছে। এসব টার্ফে দলবেঁধে রোহিঙ্গাদের খেলাধুলা করতে দেখা যায়। থাইংখালী ক্যাম্প-১২ এলাকায় দেখা গেছে, ‘আকতার’ নামের এক ব্যক্তি একটি টার্ফ নির্মাণ করে সেখানে নিয়মিত রোহিঙ্গাদের গণজমায়েতের আয়োজনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এতে রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের মধ্যে বিভ্রান্তি ও উত্তেজনা সৃষ্টি হচ্ছে। পরিস্থিতি এভাবে চলতে থাকলে যে কোনো সময় বড় ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

পার্শ্ববর্তী এলাকাবাসীর অভিযোগ, বনের জমি অবৈধভাবে দখল করে রোহিঙ্গাদের নিয়ে এসব আয়োজন করা হচ্ছে। এসব টার্ফ নির্মাণে সিআইসি বা আরআরআরসি থেকে কোনো লিখিত অনুমতিও নেওয়া হয়নি।

এ বিষয়ে আকতারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি দাবি করেন, কাগজে-কলমে অনুমতি না থাকলেও মৌখিকভাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তার ভাষ্য অনুযায়ী, এটি বন বিভাগের জমি নয়, খতিয়ানভুক্ত জমি।

স্থানীয় ইউপি সদস্য জয়নাল বলেন, আকতারের টার্ফটি বন বিভাগের জমিতে। অন্য কয়েকটি টার্ফে আংশিক খতিয়ানভুক্ত জমি ও আংশিক বনভূমি রয়েছে।

এদিকে হাতে আসা একটি কল রেকর্ডে শোনা গেছে, ক্যাম্প-১২-এর সিআইসিকে ৫ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে এসব টার্ফের মৌখিক অনুমোদন নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (যুগ্মসচিব) মোহাম্মদ সামছু-দ্দৌজা বলেন, তিনি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন। অনুমতির বিষয়টি কমিশনার আবু সালেহ মোহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ ভালো বলতে পারবেন। তথ্য দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (যুগ্মসচিব) আবু সালেহ মোহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ বলেন, লিখিতভাবে কাউকে কোনো টার্ফ নির্মাণের অনুমোদন দেওয়া হয়নি। আগে দেখতে হবে জমিগুলো কী শ্রেণির। বনভূমি হলে বন বিভাগকেও অবগত করতে হবে। নির্দিষ্ট তথ্য দিলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

স্থানীয়দের একাংশ মনে করছেন, খেলাধুলা বা তুচ্ছ বিষয়কে কেন্দ্র করেও সংঘাতের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। অতীতে ক্যাম্পকেন্দ্রিক সহিংস ঘটনার অভিজ্ঞতা থেকে তারা আশঙ্কা করছেন, এসব টার্ফকে ঘিরে এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে।

ক্যাম্প-১২ এলাকায় দায়িত্বে থাকা ৮ এপিবিএন পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার জহির উদ্দিন বলেন, টার্ফ নির্মাণের বিষয়টি তারা জানতেন না। হঠাৎ করেই সেখানে রোহিঙ্গাদের খেলাধুলা করতে দেখা গেছে। সংঘাতের আশঙ্কা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সংঘাত হলে অবশ্যই পুলিশকে সেখানে যেতে হবে। বিষয়টি উর্ধ্বতন মহলকে অবগত করা হবে।

পাঠকের মতামত

উখিয়ায় জাইকা প্রকল্পে পাহাড়ি মাটি দিয়ে সড়ক নির্মাণ!

জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)’র অর্থায়নে পরিচালিত ডিগলিয়া-চাকবৈটা সড়ক নির্মাণ প্রকল্পে গুরুতর অনিয়মের তথ্য পাওয়া ...

উখিয়ার সেই মাসুদ গ্রেফতার

ডেভিল হান্ট অপারেশন ফেইজ-২ এর অংশ হিসেবে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে উখিয়া উপজেলা কৃষকলীগের সাধারণ ...

রামু ক্যান্টনমেন্ট কলেজের নাম পরিবর্তনে সরকারের অনুমোদন

কক্সবাজারের রামু উপজেলায় অবস্থিত রামু ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের নাম পরিবর্তনে সরকারের অনুমোদন মিলেছে। ...