প্রকাশিত: ২৮/০৮/২০১৬ ৭:৫৭ এএম

সরকারি প্রাইমারি স্কুল থেকে কলেজ পর্যন্ত ৫৫ হাজারের বেশি শিক্ষকের পদ শূন্য। কিছু প্রতিষ্ঠানে অনেক বিষয়ে একজন শিক্ষকও নেই। বাংলা ও ইংরেজির শিক্ষকরা আইসিটি পড়ান। এভাবে জোড়াতালি দিয়ে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম। সম্প্রতি ঢাকায় অনুষ্ঠিত অধ্যক্ষ ও প্রধান শিক্ষকদের সম্মেলনে এ সংকটের চিত্র তুলে ধরা হয়। এতে তারা বলেন, শিক্ষক সংকটের কারণে মফস্বলের সরকারি স্কুল-কলেজে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

জানা গেছে, প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষকের সংকট সবচেয়ে বেশি। এসব স্কুলের সহকারী ও প্রধান শিক্ষকের প্রায় ৫১ হাজার পদ শূন্য। সরকারি হাইস্কুলের সহকারী শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষকের পদ খালি আছে ১ হাজার ৭৫০। এছাড়া কলেজের প্রভাষক থেকে অধ্যাপক পর্যায়ে প্রায় আড়াই হাজার পদে শিক্ষক নেই।

এ প্রসঙ্গে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের (ডিপিই) মহাপরিচালক মো. আলমগীর শনিবার বিকালে যুগান্তরকে বলেন, সহকারী শিক্ষক এবং প্রধান শিক্ষক মিলিয়ে আমাদের প্রায় ৫১ হাজার পদ খালি আছে। এর মধ্যে প্রধান শিক্ষকের পদ আছে ১৬ হাজার ৩৭৩টি। বিধি অনুযায়ী, প্রধান শিক্ষকের মোট পদের ৬৫ শতাংশ পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করতে হয়। ৩৫ শতাংশ সরাসরি নিয়োগ দেয়া যায়। সরাসরি পূরণযোগ্য মোট পদ ৫ হাজার ৭৯৭টি। এর ৫০ শতাংশ বা ২ হাজার ৮৯৮টি পূরণের জন্য সম্প্রতি পিএসসিতে (সরকারি কর্মকমিশন) চাহিদা পাঠানো হয়েছিল। তার মধ্যে ৩৪তম বিসিএস থেকে ৮৯৮ জনকে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে। তিনি বলেন, এখানে যেমন চাহিদার তুলনায় সরবরাহ পাইনি, তেমনি শিক্ষকদের বিভিন্ন পক্ষের মামলার কারণেও পদোন্নতি দেয়া যাচ্ছে না। তবে সম্প্রতি পদোন্নতির মাধ্যমে প্রধান শিক্ষকের পদ পূরণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে আমরা একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছি। পিএসসির মাধ্যমে শিগগিরই এ সংক্রান্ত আদেশ আসতে পারে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, দেশে নতুন ও পুরনো মিলিয়ে ৬৩ হাজার ৪১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। এসবের মধ্যে পুরনো সরকারি বিদ্যালয়ে শূন্যপদের সংখ্যা ৯৮২। জাতীয়করণকৃত বিদ্যালয়ে শূন্যপদ আছে ৪ হাজার ৮১৫টি। ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী ৩৫ হাজার সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য আছে। অবসর, মৃত্যু, ইস্তফাসহ বিভিন্ন কারণে প্রতিদিন গড়ে শতাধিক শিক্ষকের পদ শূন্য হচ্ছে।

তবে সম্প্রতি মামলায় জয়লাভের পরিপ্রেক্ষিতে প্যানেলভুক্ত শিক্ষকদের মধ্য থেকে শূন্যপদে নিয়োগ শুরু হয়েছে। এ সংক্রান্ত হিসাব এখন পর্যন্ত ডিপিইতে আসেনি বলে মহাপরিচালক মো. আলমগীর জানান। জানা গেছে, সরকারি হাইস্কুলে ১ হাজার ৭৪৪টি সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য আছে। এর মধ্যে ৫০ শতাংশ হিসাবে ৮৭২টি পদ ৩৪তম বিসিএস থেকে পূরণের প্রস্তাব ছিল পিএসসির কাছে। কয়েকদিন আগে এর মধ্যে ৪৫০টি পদের জন্য প্রার্থী সুপারিশ করা হয়েছে।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) হিসাব অনুযায়ী, সারা দেশে বর্তমানে ৩৩৩টি সরকারি হাইস্কুল আছে। এতে সহকারী শিক্ষকের ১০ হাজার ৬টি পদের মধ্যে ১ হাজার ৭৪৪টি শূন্য। এছাড়া প্রধান শিক্ষকের ৩২৪টি পদের মধ্যে ৮৪টিই খালি। ৯টি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদই নেই। সহকারী প্রধান শিক্ষকের ৪৫৭টি পদের মধ্যে ৩৬৭টিই খালি। বাংলা, ইংরেজি ও গণিতে খালি পদ বেশি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাউশির একাধিক কর্মকর্তা জানান, সরকারি হাইস্কুলে চার বছর ধরে কোনো শিক্ষক নিয়োগ করা হচ্ছে না। ২০১২ সালের ১৫ মে সরকার এসব স্কুলের সহকারী শিক্ষকের পদ তৃতীয় শ্রেণী থেকে দ্বিতীয় শ্রেণীতে উন্নীত করে। এরপদ এসব পদে নিয়োগের ক্ষমতা পিএসসির কাছে চলে যায়।

অপরদিকে সারা দেশের ৩২৯টি সরকারি কলেজে মোট ১৬ হাজার ১৪১টি শিক্ষকের পদ আছে। গত এপ্রিলের হিসাব অনুযায়ী ৩ হাজার ৪৭৩টি পদই শূন্য। সবচেয়ে বেশি শূন্য প্রভাষকের পদ। এরপর অধ্যাপকের পদ বেশি খালি আছে।

সরকারি কলেজের অধ্যক্ষদের সম্মেলনে বলা হয়, ৩২৯ কলেজের মধ্যে ২১৮টিতে শিক্ষক সংকট আছে। বিপরীত দিকে ঢাকা কলেজসহ ১২টি কলেজে শিক্ষক বেশি আছে। এ ধরনের সব কলেজই শহরাঞ্চলে অবস্থিত। যেমন- ঢাকা কলেজে ২০০ পদের বিপরীতে ২২৪ জন, তিতুমীর কলেজে ১৭৪ পদের বিপরীতে ১৯৮ জন, সরকারি বাঙলা কলেজে ১১৭ পদের বিপরীতে ১৪৫ জন, সরকারি বিজ্ঞান কলেজে ২৩ পদের বিপরীতে ৪১ জন শিক্ষক রয়েছেন।

চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ এমএ মতিন মিয়া বলেন, তার কলেজে ৩৫ পদের মধ্যে ১২টি শিক্ষকের পদ শূন্য আছে। আবেদন-নিবেদন করেও কোনো লাভ হচ্ছে না। কষ্ট করে অনার্স-মাস্টার্স শ্রেণীতে সিলেবাস শেষ হয়। ঝিনাইদহের একটি কলেজের অধ্যক্ষ আবদুল লতিফ বলেন, ৪৩ পদের বিপরীতে শিক্ষক আছেন মাত্র ১৮ জন।

সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের অনেক শিক্ষক তার পছন্দের জায়গায় যাওয়ার জন্য তদবির করেন। আমার কাছে যদি ১০০ জন লোক আসে, তার ৮০ জন আসে শুধু ঢাকায় আসার জন্য। সরকারি চাকরি করতে হলে সরকার যেখানে দেয়, সেখানে যাওয়া নিয়ম। তারা নানা রকম ক্ষমতাবান লোক দিয়ে ঢাকায় আসেন এটা অন্যায়।’

এ ব্যাপারে মাউশি মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. এসএম ওয়াহিদুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, সরকারি হাইস্কুলের সহকারী শিক্ষকদের পদের শ্রেণী পরিবর্তন হওয়ায় আমরা (মাউশি) সরাসরি নিয়োগ দিতে পারছি না। এ ব্যাপারে পিএসসির ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। সরকারি কলেজের শিক্ষকের ক্ষেত্রেও তাই। সর্বশেষ ৩৪তম বিসিএস থেকে আমরা ৭৫০ জন কর্মকর্তা পেয়েছি। আশা করছি, পরবর্তী বিসিএসগুলো দ্রুত সম্পন্ন হলে শিক্ষক সংকট ধীরে ধীরে নিরসন হবে।

পাঠকের মতামত

নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন, এখন বিসিএস ক্যাডার

গল্প-আড্ডায় বিশ্ববিদ্যালয়জীবনটা উপভোগের সুযোগ আবদুল মোত্তালিবের হয়নি। দুপুর গড়ালেই তাঁকে ছুটতে হতো কাজে। অসচ্ছলতার কারণে ...