প্রকাশিত: ৩১/০৭/২০১৬ ৯:৪১ পিএম

IMG_20160122_172414 [Max Width 640 Max Height 480]আতিকুর রহমান মানিক::

গত বছরের ২২ নভেম্বরের স্নিগ্ধ রৌদ্রকরোজল এক সকাল। প্রকৃতিতে তখন আসি আসি করছে শীতের বুড়ি। “অনলাইন রিপোর্টার্স এসোসিয়েশন অব কক্সবাজার (ওরাক)”র আয়োজনে শহরতলীর নুনিয়াছড়াস্হ বিআইডব্লিউটিসি ঘাট থেকে সমুদ্রযাত্রা শুরু করেছিল একটি বোট। আরোহী  একঝাঁক তরুন সাংবাদিক, গন্তব্য  সাগরদ্বীপ সোনাদিয়া। “সমুদ্রে আনন্দ যাত্রায় সোনাদিয়া” এই ব্যানারে যাত্রা শুরুর প্রায় একঘন্টা পর আমরা পৌঁছলাম সোনাদিয়ায়। চারদিকে সাগরবেষ্টিত অপার সৌন্দর্য্যময় দ্বীপ সোনাদিয়া। প্রকৃতি যেন নিজহাতে গড়েছেন এ দ্বীপকে। ধবধবে সাদা বালুকাময় সৈকত, ইতস্ততঃ বালিয়াড়ী, প্রলম্বিত ঝাউবন, সৈকত জুড়ে লাল কাঁকড়ার ছুটাছুটি, দৃষ্টিনন্দন সবুজ প্যারাবন, অতিথি পাখির আনাগোনা, শুঁটকি মহাল ও মাছধরার দৃশ্য মিলিয়ে অপরূপ সোনাদিয়া। সেন্টমার্টিন দ্বীপ থেকেও অনেক সুন্দর সোনাদিয়া। মহেশখালী উপজেলার কুতুবজোম ইউনিয়নের একটি ওয়ার্ড এ  সোনাদিয়া দ্বীপ। কক্সবাজার শহরের ৬ নং ঘাট থেকে মাত্র পৌনে একঘন্টার নৌ-যাত্রায় পৌঁছা যায় এখানে। কিন্তু কক্সবাজার থেকে প্রায় আড়াই ঘন্টার বাসযাত্রায় টেকনাফ ও সেখান থেকে আরো তিনঘন্টার সমুদ্রযাত্রার পর পৌঁছা যায় সেন্টমার্টিন দ্বীপে। অর্থ ও সময় দুটিই অনেকগুন বেশী। এক্ষেত্রে সোনাদিয়া ভ্রমন সহজ ও স্বল্প ব্যয়সাধ্য। যাই হোক প্রায় সারাদিন সোনাদিয়ায় কাটিয়ে রাতযাপনের প্রস্তুতি না থাকায় সেদিন বিকালে চলে এসেছিলাম আমরা। সেদিন চলে আসলেও কিন্তু ঝামেলা বাধল অন্য জায়গায়। সোনাদিয়া ভ্রমনের কাহিনী বিভিন্ন অনলাইন ও পত্রিকায় প্রকাশিত হলে এসব পড়ে রীতিমত হা-হুতাশ শুরু করল ঘনিষ্ঠ কয়েকজন বন্ধু। সোনাদিয়া দ্বীপ ভ্রমনের জন্য আগ্রহী তারাও। সেই থেকে তাড়া ও চাপ ছিল আবারো সোনাদিয়া ভ্রমনের। মূলতঃ সেজন্যই সোনাদিয়া দ্বীপে পূর্ণিমা রাত উদযাপন ও জ্যোৎস্না অবগাহনের ব্যতিক্রমী আয়োজন। কিন্তু পূর্ণিমা রাত আসে মাসে একবার, আর সেই দিন নানা ঝুট-ঝামেলায় ব্যস্ত থাকায় আয়োজন করা হয়না। এমনি করে বিগত  সাত মাসে একে একে ৭ টা পূর্ণিমা চলে গেল। অবশেষে গত ২১ জুলাই শ্রাবণী পূর্নিমার রাতে সোনাদিয়া ভ্রমনের ফাইনাল সিদ্ধান্ত হল। কিন্তু বৃষ্টি হলেতো আর যাওয়া হবেনা। তাই আবহাওয়ার উপর প্ল্যানটা ঝুলেছিল। ২১ তারিখ দুপুরের পর থেকেই পরিস্কার আকাশ দেখে শুরু হল তাড়াহুড়া ও প্রস্তুতি। তাবু, মশারী, রান্নার হাঁড়িপাতিল ও আনুসাঙ্গিক জিনিসপত্র নিয়ে বিকালে কক্সবাজার ফিশারী ঘাট থেকে বোটে চড়ে বসলাম আমরা ৮ জন। বাঁকখালী নদী মোহনা পার হওয়ার পরেই অদুরে সোনাদিয়ার ঝাউবিথী ও সৈকত  ক্রমশঃ স্পষ্ট হতে শুরু করল। পৌনে একঘন্টার বোটযাত্রার পর সন্ধ্যার আগে আগে আমরা পৌঁছে গেলাম সোনাদিয়া পূর্বপাড়ার অপরূপ সৈকতে। পূর্ব-পশ্চিম লম্বালম্বি পরিচ্ছন্ন বালুময় সৈকতের পাশ বরাবর ঘন ঝাউবন ও বালিয়াড়ী। সৈকত জুড়ে ছুটে বেড়াচ্ছে লাল কাঁকড়ার দল। বর্ষাকাল হওয়ায় পর্যটক তেমন নেই। ঝাউবনের কাছাকাছি সুবিধাজনক একটা স্হান নির্বাচন করে তাবু খাটিয়ে জিনিসপত্র রেখে বেরিয়ে পড়লাম আমরা। অপরূপ সুন্দর সৈকতে হাটাহাটি করতে করতে কখন যে সন্ধ্যা নামল টের পাইনি। কোলাহলমুক্ত নীরব সৈকতে সন্ধ্যার রূপটাও দেখার মত। এর  কিছুক্ষন পর পূর্ব দিগন্তে দেখা দিল থালার মত বিশাল চাঁদ। পূর্নিমার চাঁদ ক্রমশ উপরে উঠছে, আর মায়াবী জ্যোৎস্নায় প্লাবিত হচ্ছে সোনাদিয়ার সাগর ও সৈকত। চাঁদ উঠার সাথে সাথে সমুদ্রে শুরু হল জোয়ার। জোয়ারের উচ্চতার সাথে বাড়ছে ঢেউ। সে সাথে দক্ষিনের আদিগন্ত বঙ্গোপসাগর থেকে উড়ে আসা মাতাল বাতাস মর্মর ধ্বনি তুলছে ঝাউবিথীর পাতায় পাতায়। মুগ্ধতার আবেশে দেখতে দেখতে কখন যে রাত বারটা বাজল টেরও পাইনি কেউ। ততক্ষনে পূর্ণিমার পরিপূর্ণ চাঁদ তার সবটুকু আলো ও রূপ নিয়ে মাথার উপর। জোয়ার পূর্ণ হওয়ার সাথে সাথে সাগরের পানির উচ্চতাও বেড়েছে। বিকালে যেখানে আমরা হেটে বেড়িয়েছি, সেখানে এখন প্রচন্ড ঢেউ। ঢেউয়ের গর্জনের সাথে পূর্ণিমার আলো, সাথে মাতাল হাওয়া। আনমনা হয়ে যাওয়ার মতই দৃশ্য ও পরিবেশ। রাতের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছিল সোনাদিয়ার প্রকৃতি ও জ্যোৎস্নার রূপ, সে সাথে আবেশে শিহরিত হচ্ছিল সবাই। পূর্ণ চাঁদের মনোমুগ্ধকর আলোয় যেন ভেসে যাচ্ছে পৃথিবী। স্হলভাগের জ্যোৎস্নার সাথে সোনাদিয়ার জ্যোৎস্নার বিস্তর তফাৎ। এখানে চারদিকে সাগরের অথৈ পানি। তাই চাঁদের আলো পানিতে প্রতিফলিত হয়ে কয়েকগুণ বেড়ে যায়, ফলে জ্যোৎস্নার রূপ হয় মোহনীয় ও দেখার মত। জ্যোৎস্না দর্শনে সবাই আনমনা, খাওয়ার কথা মনে ছিলনা কারো। এদিকে সমুদ্রের হাওয়ায় ক্ষুধা চাগিয়ে উঠেছে। তাই মাঝরাতেই শুরু হল রান্নার আয়োজন। কিন্তু আমাদের মত আনাড়ী বাবুর্চীদের হাতে ভাত পুড়ে কয়লা, তরকারীতে লবনের বাহার। অবশেষে তাই দিয়েই কোনরকমে পেটে জামিন দেয়া গেল। ততক্ষনে রাত দ্বি-প্রহর। এদিকে চাঁদ পশ্চিমে হেলতে শুরু করেছে, সাগরে লেগেছে ভাটার টান। জোয়ারের পানি ক্রমশঃ নামছে, একই সাথে সৈকত জেগে উঠছে। পূর্ণিমার জ্যোৎস্না প্লাবিত প্রকৃতির অপরূপ দৃশ্যে সবাই যেন নির্বাক। এভাবে মুগ্ধতার রেশ না কাটতেই দেখলাম চাঁদ পশ্চিম দিগন্তে গিয়ে স্হির হল, পূর্বাকাশে দেখা দিল উষার ঝিলিক। অর্থাৎ পৃথিবীতে  আরেকটি প্রভাত আসন্ন। আবারো ফিরতে হবে ইটকাঠের যান্ত্রিক শহরে। পাততাড়ি গুটিয়ে সবাই উঠে পড়লাম বোটে, সোনাদিয়া চ্যানেলের অশান্ত ঢেউ ডিঙ্গিয়ে এগিয়ে চলল জলশকট, গন্তব্য কক্সবাজার শহর। সোনাদিয়ার অপরূপ সৈকতে পূর্ণিমার চাঁদের অপরূপ আলোয় কাটানো একটা রাত জীবনের সেরা স্মৃতি হয়ে রইল।

পাঠকের মতামত

নতুন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকানোই যখন বড় চ্যালেঞ্জ!

মিয়ানমারের তিনটি প্রধান এথনিক রেজিস্ট্যান্ট গ্রুপ—তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ), মিয়ানমার ন্যাশনাল এলায়েন্স (এমএমডিএ) এবং ...

একটি ফুল—

একটি ফুল, একটি ফুলের জন্যে কতো নিষ্পাপ গাছ প্রাণ হারালো, এই বর্বর শুকোনের দল বারংবার ...