ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: ১৩/০৪/২০২৫ ১০:৩২ এএম

মিয়ানমারের রাখাইনে শান্তি চায় বাংলাদেশ। রাখাইনে শান্তি নিশ্চিত হলে বাংলাদেশে সাময়িক আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের নাগরিক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রত্যাবাসন সম্ভব হবে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে মিয়ানমার, চীন, যুক্তরাষ্ট্র, আসিয়ানের রাষ্ট্রগুলো, জাতিসংঘ ও আরাকান আর্মিসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে বাংলাদেশ।

তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন যে, চলমান পরিস্থিতি অনুযায়ী সহসা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের সম্ভাবনা নেই।

অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথমবারের মতো দেশটির দুই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ১৫ এপ্রিল চার দিনের জন্য ঢাকা সফরে আসছেন। আসন্ন সফরে প্রতিবেশী রাষ্ট্র মিয়ানমারের পরিস্থিতি এবং রোহিঙ্গা সংকট গুরুত্ব পাবে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের সঙ্গে ঢাকা সফরে দেশটির মিয়ানমারে নিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতও যোগ দেবেন। সংশ্লিষ্টরা আসন্ন সফরটিকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে আভাস দিচ্ছেন।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, বিমসটেক বৈঠকের ফাঁকে মিয়ানমারের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী উ থান শিউর সঙ্গে রোহিঙ্গা সমস্যা ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়াবলি-সংক্রান্ত বিশেষ প্রতিনিধি ড. খলিলুর রহমানের আলোচনা হয়েছে।

ওই আলোচনার পর মিয়ানমারের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী উ থান শিউর প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে এসে রোহিঙ্গাদের ভেরিফিকেশন (আড়াই লাখ) এবং প্রত্যাবাসন ইস্যু নিয়ে কথা বলেছেন, যা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে একটা বড় অগ্রগতি। নেপিদোতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের তৎপরতায় গত ৩০ মাসে রোহিঙ্গা ভেরিফিকেশনের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। গত ৩০ মাসে বাংলাদেশ দূতাবাসের তৎপরতায় প্রায় দেড় লাখ রোহিঙ্গার ভেরিফিকেশনের কাজ শেষ করেছে মিয়ানমার। এর আগের ৩০ মাসেরও বেশি সময়ে ১ লাখ ১৫ হাজারের মতো রোহিঙ্গার ভেরিফিকেশন করেছে মিয়ানমার। মূলত ২০২১ সালের পর থেকে বাংলাদেশ মিশনের তৎপরতায় মিয়ানমার ভেরিফিকেশন কার্যক্রম দ্রুত করছে। বিমসটেক সম্মেলনের সাইড লাইনে মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে দিয়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন-সংক্রান্ত মন্তব্যটি ভবিষ্যতের জন্য একটি দলিল হয়ে থাকবে। মিয়ানমারের এই ভেরিফিকেশন কার্যক্রমে প্রচণ্ড গতি ফেরাতে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বিশ্বের কাছে সহযোগিতা চায়।

ভেরিফিকেশন কার্যক্রমে গতি বাড়াতে ঢাকার কূটনীতিকরা নেপিডোর কূটনীতিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। নেপিডোর ক‚টনীতিকরা জানিয়েছেন যে, ভেরিফিকেশন কার্যক্রম দ্রুত গতিতে করার জন্য মিয়ানমারের কাছে প্রয়োজনীয় জনবল ও তহবিল নেই। তাই ভেরিফিকেশন খাতে চীন বা যুক্তরাষ্ট্র বা আন্তর্জাতিক বিশ্ব সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলে এই কার্যক্রম খুব দ্রুত শেষ হবে।

প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা সমস্যা ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়াবলি-সংক্রান্ত বিশেষ প্রতিনিধি ড. খলিলুর রহমান গত ৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, আরাকানে বর্তমানে যে যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে, সেটার নিরসন না করে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন হচ্ছে না। বিমসটেক বৈঠকের ফাঁকে আমার সঙ্গে মিয়ানমারের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী উ থান শিউর আলোচনা হয়েছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে একটা বড় অগ্রগতি হয়েছে। ২০১৮ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত আমরা ছয়টি কিস্তিতে ৮ লাখ রোহিঙ্গার তালিকা দিয়েছিলাম, সেখান থেকে আড়াই লাখ রোহিঙ্গা তারা রিভিউ করেছেন। তার মধ্য থেকে ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে শনাক্ত করেছেন, যারা মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে এসেছে। আর বাকি ৭০ হাজারের ছবি ও নাম নিয়ে কিছু কনফিউশন (বিভ্রান্তি) আছে। সেটা দূর করতে আমরা দুই পক্ষই আলোচনা চালিয়ে যাব। একইসঙ্গে তারা বলেছেন, বাকি ৫ লাখ ৫০ হাজার রোহিঙ্গার রিভিউ দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করবেন।

বাংলাদেশ চায় যে, রোহিঙ্গাদের আবাসভূমি রাখাইনে শান্তির পরিবেশ বিরাজ করুক। যাতে স্বেচ্ছায়, সম্মানের সঙ্গে পূর্ণ নাগরিকত্ব নিয়ে রোহিঙ্গারা রাখাইনে তাদের মাতৃভূমিতে ফিরে যেতে পারে। এই মুহূর্তে রাখাইনের কমবেশি ৯০ শতাংশ আরাকান আর্মির দখলে, অন্যদিকে সিটওয়েসহ রাখাইনের অল্পকিছু এলাকা মিয়ানমারের জান্তার দখলে। তবে রাখাইনের যে অঞ্চলে রোহিঙ্গাদের বসবাস সেসব অঞ্চল এই সময়ে আরাকান আর্মির দখলে এবং সেসব জায়গাতে এখন উত্তেজনা নেই বলে একাধিক কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে। রাখাইনে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশ চীন, যুক্তরাষ্ট্র, আসিয়ানভুক্ত রাষ্ট্রগুলো, জাতিসংঘ ও আরাকান আর্মির সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে। আরাকান আর্মি প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়ে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের কথা বললেও তারাই এখন প্রত্যাবাসনের জন্য বড় বাধা। এই সময়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ রাজি থাকলেও আরাকান আর্মি রাজি নয়। তবে বাংলাদেশ সব পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে প্রত্যাবাসনের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা সমস্যা ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়াবলি-সংক্রান্ত বিশেষ প্রতিনিধি ড. খলিলুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, সব পক্ষের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ রেখেছি। মনে রাখতে হবে, রাখাইন এখনও মিয়ানমারের একটি সার্বভৌম অঞ্চল। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য যে প্রক্রিয়া, সেটা নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি আরাকান আর্মির সঙ্গে। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া তাদের একটি প্রিন্সিপাল পজিশন, তারা এটা প্রকাশ্যে সেপ্টেম্বরে বলেছেন। আমাদের সঙ্গে আলোচনার সময় দ্ব্যর্থহীনভাবে সেই কথার পুনরাবৃত্তি করেছেন। সে কারণে আমরা মনে করি, এই ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফিরিয়ে দেওয়ার বন্দোবস্ত করতে পারব। তবে সেটা কালকেই হচ্ছে না। তারা যাতে দ্রুততর সময়ে যেতে পারেন, আমাদের সেই প্রচেষ্টা থাকবে। সে কারণে মিয়ানমার, আরাকানের বাস্তব কর্তৃপক্ষ, জাতিসংঘ ও আমাদের বন্ধু দেশগুলোর সঙ্গে মিলে আমরা কাজটি করব।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, আরাকান আর্মি মূলত এই অঞ্চলের আঞ্চলিক একটি মাফিয়া সংগঠন। তারা মাদক, অস্ত্র এবং অপহরণ বাণিজ্য ধারাবাহিকভাবেই করে যাচ্ছে। আরাকান আর্মি যদি আন্তরিক হয় তবে আজকালের মধ্যেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সম্ভব। বাস্তবতা হচ্ছে যে, আরাকান আর্মি প্রকৃত অর্থে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বিশ্বাসী নয়। আবার আরাকান আর্মির ওপর চীনের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। কিন্তু নিজ স্বার্থ বজায় রাখার স্বার্থে চীন প্রত্যাবাসনের জন্য আরাকান আর্মিকে চাপ দেবে না, যেমনটি চীন মিয়ানমারের জান্তা সরকারকেও চাপ দিচ্ছে না। আবার বিশ্বজুড়ে এই সময়ে যে উত্তেজনা বিরাজ করছে তার সুপ্ত ভান্ডার হচ্ছে মিয়ানমার। এখানে বিশ্বের বড় বড় দেশগুলোর স্বার্থ রয়েছে ও যে যার স্বার্থ উদ্ধারে মিয়ানমার নিয়ে নাড়াচাড়া করছে। সবাই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের কথা বলছে, কিন্তু প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারকে যে চাপ দিতে হবে সে বিষয়ে প্রকৃত কাজ কেউই করছে না।

সাবেক রাষ্ট্রদূত এবং অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা শহীদুল হক এক সময়ে বাংলাদেশের পক্ষে মিয়ানমারে নিযুক্ত সামরিক এটাচে ছিলেন।

শহীদুল হক দৈনিক সময়ের আলোকে বলেন, তাড়াতাড়ি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন হবে, এমন কোনো সম্ভাবনা নেই। এই মুহূর্তে আরাকানি আর্মি রাজি না হলে প্রত্যাবাসন সম্ভব না। চীনের হাতে মিয়ানমার ও আরাকান আর্মিকে প্রত্যাবাসনের জন্য রাজি করানোর চাবিকাঠি আছে। কিন্তু চীন এই ইস্যুতে কতটুকু কী করবে সেই বিষয়ে প্রশ্ন আছে।

অভিবাসন এবং শরণার্থী বিষয়ক বিশেষজ্ঞ আসিফ মুনীর দৈনিক সময়ের আলোকে বলেন, আগামী ৫-১০ বছরেও রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরে যাবে কি না তার কোনো গ্যারান্টি নেই। প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে। এই চাপ সবক্ষেত্র থেকেই সৃষ্টি করতে হবে। এ জন্য ট্র্যাক টু ডিপ্লোম্যাসি প্রয়োগ করতে হবে। কেননা ভারত ও চীনসহ মিয়ানমারের একাধিক প্রতিবেশীরই সেখানে স্বার্থ রয়েছে।

পাঠকের মতামত

জামিনে মুক্তি পেলেন উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন, গ্রামে আনন্দের বন্যা

কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। মঙ্গলবার ...

কক্সবাজার জলবায়ু উদ্বাস্তু পুনর্বাসন প্রকল্প থেকে ৪৪০৯ জনের নাম বাতিল

কক্সবাজারে জলবায়ু উদ্বাস্তু পুনর্বাসন প্রকল্পে (খুরুশকুল) পুনর্বাসনের চার হাজার ৪০৯ জনের তালিকা বাতিল করা হয়েছে। ...