প্রকাশিত: ০৯/১২/২০১৭ ৮:৩৩ এএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ৯:৫৬ এএম

আবদুল আজিজ, কক্সবাজার::
কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের দেওয়া ত্রাণ এখন বিক্রি হচ্ছে খোলা বাজারে। শীতবস্ত্র থেকে শুরু করে চাল, ডাল, তেল ও ত্রিপলসহ বিভিন্ন ত্রাণসামগ্রী খোলা বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। উখিয়া ও টেকনাফের বাজার ছাড়াও কক্সবাজার শহরের বিভিন্ন অলিগলি ও ফুটপাতে কিনতে পাওয়া যাচ্ছে রোহিঙ্গাদের ত্রাণ।কিছু অসাধু ব্যবসায়ী এই ত্রাণ বিক্রির সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। তারা বিভিন্ন ক্যাম্পে গিয়ে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পাওয়া অতিরিক্ত ত্রাণ কিনে নেয় এবং পরে তা বাইরে বেশি দামে বিক্রি করে।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সহিংসতার পর থেকে জীবন বাঁচাতে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সংখ্যা নতুন ও পুরনো মিলিয়ে ১০ লাখ ছাড়িয়েছে। এসব রোহিঙ্গা কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে সরকার নির্ধারিত জমিতে আশ্রয় নিয়েছে। রোহিঙ্গা সংকট শুরুর পর থেকে সরকার মানবিক আশ্রয়ের পাশাপাশি সব ধরনের সুযোগ সুবিধা দিয়ে যাচ্ছে। একইভাবে সরকারের নিয়ন্ত্রণে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সাহায্য সংস্থা ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করছে। জেলা প্রশাসন ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী উখিয়ার কুতুপালং ও বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ১২টি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে প্রতিদিনই লাখ টাকার ত্রাণ ও অর্থ সহায়তা দিচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রতিটি ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা পর্যাপ্ত ত্রাণ পাচ্ছে। এসব ক্যাম্পে ত্রাণের কারণে আশ্রিতদের ঘুমানোর মতো জায়গাও নেই। এ কারণে রোহিঙ্গারা অতিরিক্ত ত্রাণ বিক্রি করে নগদ টাকা সংগ্রহ করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, কক্সবাজারের উখিয়ার মরিচ্যা বাজার, সোনারপাড়া বাজার, কোটবাজার, উখিয়া সদর, কুতুপালং বাজার, বালুখালী বাজার, থাইংখালী বাজার, পালংখালী বাজারসহ টেকনাফের বিভিন্ন হাটবাজারে দেদারসে বিক্রি করছে শীতবস্ত্র ও বিভিন্ন প্রকার ত্রাণ। খোলা বাজারে বিক্রি করা ত্রাণের মধ্যে রয়েছে ‘ইউএনএইচসিআর’ এর দেওয়া শীতের কম্বল, ত্রিপলসহ বিভিন্ন সংস্থার চাল, ডাল, তেল, চিনি, শিশুদের দুধ, চিড়া, সাবানসহ নানা রকম ত্রাণসামগ্রী। এসব ত্রাণসামগ্রী বাজার মূল্যের অর্ধেক দামে তারা বিক্রি করছে অসাধু ব্যবসায়ীদের কাছে। আর এই ব্যবসায়ীরা ক্যাম্প থেকে ত্রাণ কিনে এনে বিভিন্ন হাটবাজারে স্থানীয়দের কাছে বিক্রি করছে।

উখিয়ার মরিচ্যা বাজারে কবির আহমদ নামের স্থানীয় এক ব্যবসায়ী বিক্রি করছেন ‘ইউএনএইচসিআর’ এর লোগো সম্বলিত কম্বল। তিনি বলেন, ‘রোজগারের আশায় ক্যাম্পের রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে কিনে এনে বাজারে বিক্রি করছি।’

উখিয়ার কোট বাজারে ত্রিপল বিক্রি করছেন রহিম মিয়া নামে স্থানীয় এক ব্যবসায়ী। তিনি জানান,ভোর বেলা কুতুপালং ও বালুখালী ক্যাম্পে ভিন্ন পথে প্রবেশ করে রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে তিনি ত্রাণগুলো সংগ্রহ করেন। পরে বাজারে এনে বিক্রি করা হয়। এতে কোনও ধরনের অসুবিধা হয় না বলেও জানান তিনি।

ত্রাণসামগ্রী বিক্রির জন্য অপেক্ষাএদিকে রোহিঙ্গারা বলছেন, নগদ টাকার প্রয়োজনে তারা ত্রাণ বিক্রি করছেন। কারণ, বাংলাদেশে আসার পর এত বেশি পরিমাণ ত্রাণসামগ্রী পেয়েছেন যে, ক্যাম্পে তা রাখার মতো জায়গা নেই। তারা জানান, মিয়ানমারে যে অভাব ছিল রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এখন তা নেই। প্রতি সপ্তাহেই ত্রাণ পাচ্ছেন। ক্যাম্পের ছোট ঘরে এত ত্রাণ রাখার জায়গা নেই। তাই ত্রাণ বিক্রি করে কিছু নগদ টাকা পেলেই তাদের স্বস্তি।

রোহিঙ্গা আব্দুল করিম, মোহাম্মদ হোসেন ও মরিয়ম খাতুন জানান,পরিবারের সদস্য সংখ্যা খুবই কম। তাই এত চাল, ডাল ও তেল নিয়ে কী করবেন।এজন্য স্থানীয়দের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছেন। হাতে কিছু নগদ টাকা থাকলে আর কোনও ভয় থাকে না। চার-পাঁচ জনের পরিবারে ১৫-২০ কেজির মতো চাল ত্রাণ হিসেবে প্রতিবার পান বলেও জানান তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগদ টাকার জন্য দেশি-বিদেশি সাহায্য সংস্থা, বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে পাওয়া বিভিন্ন ধরনের ত্রাণসামগ্রী বিক্রি করে দিচ্ছে রোহিঙ্গারা। বাজার দামের চেয়ে অর্ধেক দামে এসব সামগ্রী বিক্রি করছে তারা। আর কম দামে কিনে এই ত্রাণসামগ্রী বেশি দামে বিক্রি করছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। ত্রাণ কিনতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পভিত্তিক কয়েকটি সিন্ডিকেটও গড়ে উঠেছে এরই মধ্যে।

পর্যাপ্ত ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে শরণার্থী রোহিঙ্গাদেরসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ৫-৭ জন সদস্যের একটি রোহিঙ্গা পরিবার সপ্তাহে দুই বার ত্রাণ পেয়ে থাকেন। এর মধ্যে ১০-১৫ কেজি চাল, ২-৩ কেজি ডাল ও ২-৩ লিটার তেল দেওয়া হয়। এ হিসাব অনুযায়ী, তারা সপ্তাহে ২০-৩০ কেজি চাল, ৪-৬ কেজি ডাল ও ৪-৬ লিটার তেল পান। এছাড়াও শীত মৌসুম শুরুর আগে থেকে রোহিঙ্গাদের মাঝে শীতের কম্বলসহ বিভিন্ন রকম শীতবস্ত্র বিতরণ করছে বিভিন্ন সংস্থা। এ কারণে একেকটি পরিবার চাহিদার বেশি কম্বলসহ শীতবস্ত্র পেয়েছে।

উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নিকারুজ্জামান বলেন, ‘আসলে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে রোহিঙ্গাদের জন্য বিপুল পরিমাণ ত্রাণ বিতরণ করেছে সরকার ও দেশের মানুষ। এসব ত্রাণসামগ্রী রোহিঙ্গারা অন্যত্র বিক্রি করছে বলে শুনেছি। খুব দ্রুত আমরা এসব রোহিঙ্গা ও ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে মাঠে নামবো।’

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট খালেদ মাহমুদ বলেন, ‘প্রথম দিকে যত্রতত্র ত্রাণ বিতরণ হওয়ায় এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। ওই সময় কেউ ত্রাণ পেয়েছে, আবার কেউ পায়নি। এখন সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে ত্রাণ বিতরণ হওয়ায় এ সমস্যা কেটে গেছে। কারণ, সরকারি-বেসরকারি যেসব ত্রাণ এখন রোহিঙ্গাদের জন্য আসছে সব ত্রাণ সেনাবাহিনীর মাধ্যমে উখিয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠে অস্থায়ী গুদামে জমা রাখা হচ্ছে। এরপরও রোহিঙ্গাদের ত্রাণ বিক্রির বিষয়টি মাথায় রেখে আগামীতে খতিয়ে দেখা হবে।’ সুত্র :বাংলা ট্রিবিউন

পাঠকের মতামত

নিম্নচাপের প্রভাব: কক্সবাজার সৈকতে ভাঙন, লোকালয়ে জোয়ারের পানি

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে জোয়ারের পানি ঢুকে কক্সবাজারের কুতুবদিয়া, মহেশখালী ও সেন্টমার্টিন দ্বীপের কিছু এলাকা ...

সেন্টমার্টিনে খাদ্য সংকট, লোকালয়ে ঢুকছে জোয়ারের পানি

তিনদিন ধরে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটে সবধরণের নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে সেন্টমার্টিন দ্বীপে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের তীব্র ...