প্রকাশিত: ১৮/০৬/২০১৮ ৬:০০ পিএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ১:৪৮ এএম

উখিয়া নিউজ ডটকম::
২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমার থেকে যে সাত লক্ষাধিক মুসলিম রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে, সেটা ছিল সাম্প্রতিক শরণার্থী ইতিহাসের মধ্যে সবচেয়ে মানবেতর। বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরে খুবই করুণ পরিস্থিতির মধ্যে এখন দিন কাটছে তাদের। শিগগিরই তাদের নিজ আবাসভূমিতে ফিরে যাওয়ার তেমন সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না।

তাদের দুর্ভোগের বিষয়টি বড় ধরণের মানবিক সঙ্কটের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ সরকার এবং তাদের বিদেশী সহযোগীদের উচিত এই ঘরবাড়িহারা জনগোষ্ঠির কল্যাণের দিকটিতে নজর দেয়া এবং যে সম্প্রদায়ের মধ্যে এরা বাস করছে, তাদের দিকে নজর দেয়া। কিন্তু রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে: তারা কি নিরাপদে ও সম্মানের সাথে ফিরে যাওয়ার জন্য ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করবে? এই লক্ষ্যটা এখন অনেকটা অবাস্তব। নাকি তাদের মধ্যে যে জঙ্গি সংগঠন রয়েছে তারা এদেরকে সহিংসতার পথে টেনে নিয়ে যাবে?

মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলীয় অনুন্নত রাখাইন রাজ্যে বৌদ্ধ ও রোহিঙ্গাদের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে ২০১২ সালে গঠিত হয় আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশান আর্মি (আরসা)। জাতিগত এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠি হিসেবে রোহিঙ্গারা প্রতিদিন যে সব নির্যাতনের শিকার হয়েছে, এবং এতে তাদের মধ্যে যে ক্ষোভ ও বেপরোয়া মনোভাবের জন্ম দিয়েছে, সেটাকে পুঁজি করেই গড়ে উঠেছে আরসা। বিভিন্ন গোষ্ঠির নেতাদের মাধ্যমে আরসা একদিকে আশার বাণী ছড়ালেও মূলত ধর্মীয় বৈধতা এবং ভয় ছড়িয়েই তারা নিজেদের অবস্থান সংহত করেছে।

জঙ্গিরা এখন বাংলাদেশের ক্যাম্পে রাজনৈতিক দাবি হিসেবে নিজেদেরকে পুনঃপ্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে। কিন্তু শরণার্থীরা যদি অসামরিক নেতৃত্ব এবং স্ব-শাসন চায়, তাহলে তাদের সময় এখনও ফুরিয়ে যায়নি।

ক্যাম্পে আরসার প্রতি সহানুভুতিশীল মানুষ রয়েছে। কিন্তু এখানকার কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে ততটা নিশ্চিত নয়। অনেক রোহিঙ্গা মনে করেন মিয়ানমার পুলিশের উপর আরসার হামলার কারণেই সামরিক বাহিনী তাদেরকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করেছে। বিদেশী সরকার এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলো এটাকে জাতিগত নির্মূল অভিযান, মানবতাবিরোধী অপরাধ এমনকি গণহত্যা হিসেবে বর্ণনা করেছে। খবর সা:এ:ম:

তবে সব শরনার্থীরা এই বিপর্যয়ের জন্য আরসাকে দায়ি করে না। তারা মনে করেন আরসা কিছু না করলেও কোন একটা অজুহাত খুঁজে তাদেরকে দেশ থেকে বের করে দিতো মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ।

কিন্তু বেসামরিক নাগরিক যাদের মধ্যে রোহিঙ্গা এবং তাদের হিন্দু প্রতিবেশী হত্যার সাথে আরসাও জড়িত রয়েছে। সন্দেহভাজন ইনফর্মারদের শেষ করে দেয়ার জন্যই এদের হত্যা করেছে আরসা। সতর্ক পর্যালোচনার পর অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেচে ২০১৭ সালের আগস্টে কয়েক ডজন হিন্দু গ্রামে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে আরসা। তারা রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের বিপুল শক্তির মুখে ঠেলে দিয়েছে। কারণ আরসার সদস্যরা সামরিক পোষাক পড়ে না বা এমন কিছু নেই যেটা থেকে তাদের পরিচয় বোঝা সম্ভব। আর গ্রামের আড়াল নিয়েই তারা হামলা চালিয়ে থাকে।

শরণার্থীরা পালিয়ে আসার পর থেকে আরসা তাদের কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। জানুয়ারিতে মিয়ানমারের একটি বহরে হামলার দায়িত্ব শিকার করে তারা। এছাড়া ক্যাম্পে বেশ কয়েকটি হত্যাকাণ্ডের সাথেও জড়িত ছিল আরসা।

গত বছরের অক্টোবরে ৪৭ জন রোহিঙ্গা ধর্মীয় নেতা মিয়ানমারের বিরুদ্ধে এমনকি আত্মরক্ষার প্রয়োজনেও জিহাদকে নিন্দা করে ফতোয়া দেন। কিন্তু ক্রাইসিস গ্রুপের মে মাসের রিপোর্টে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে যে এই ফতোয়ার অর্থ এই নয় যে, রোহিঙ্গারা আরসাকে বা সহিংস প্রতিরোধের ধারণা পরিত্যাগ করেছে। প্রথমত, এই ফতোয়া এমন সময় দেয়া হয়েছিল যখন মানুষের স্রোত বাংলাদেশে প্রবেশ করছিল। শরণার্থীরা নিরাপত্তার জন্য হুমকি নয়, বাংলাদেশকে এই ধারণা দেয়ার জন্যই সে সময় ওই ফতোয়া দেয়া হয়েছিল। দ্বিতীয়ত, এতে সুনির্দিষ্টভাবে সহিংসতাকে প্রত্যাখ্যান করা হয়নি। বরং আগাম পদক্ষেপ বা বিভ্রান্তিকর কৌশলকে নিন্দা জানানো হয়েছে এই ফতোয়াতে।

কিন্তু রোহিঙ্গাদের অবস্থার উন্নতির আগে আরও অবনতি ঘটতে পারে। বর্ষার মওসুম চলে এসেছে। বন্যার আশঙ্কার মধ্যে রয়েছে ক্যাম্পগুলো। বাংলাদেশ এ পর্যন্ত শরণার্থীদের ব্যাপারে আতিথেয়তা দেখিয়ে আসছে। কিন্তু বাংলাদেশের মাটিতে যদি আরসার সহিংস কর্মকাণ্ড শুরু হয়, তাহলে রাজনৈতিক মনোভাব দ্রুত বদলে যেতে পারে।

রোহিঙ্গাদের একজন অহিংস নেতা প্রয়োজন যিনি তাদেরকে তাদের মাতৃভূমিতে নিরাপদ ও স্বেচ্ছা প্রত্যাবাসনের জন্য কাজ করবেন।

পাঠকের মতামত

১৫০ বাংলাদেশিকে ফিরিয়ে ২৮৫ সেনাকে নিয়ে ফিরবে মিয়ানমারের জাহাজ

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ জা‌নি‌য়ে‌ছেন, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ ও সেনাবাহিনীর ২৮৫ ...

সোনার দামে আবারও রেকর্ড, ভ‌রি‌ ১ লাখ ১৯ হাজার ৬৩৮ টাকা

আবারও সোনার দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)। প্রতি ভরিতে ...