প্রকাশিত: ০৬/০১/২০১৭ ৭:১৯ এএম

প্রেস বিজ্ঞপ্তি::

রামু উপজেলার কাউয়ারখোপ ইউনিয়ন পরিষদের বহুল বিতর্কিত চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দূর্নীতির অভিযোগ এনে অবশেষে রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে এলাকাবাসী।

সম্প্রতি কন্যাদায়গ্রস্ত দরিদ্র এক পিতার কাছ থেকে মুঠোফোনে ইউএনও এবং ওসি’র নাম ভাঙ্গিয়ে মোটা অংকের টাকা করে ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদ। ওই টাকা দাবির ফোনালাপ (অডিও) রেকর্ড নিয়ে পুরো রামুজুড়ে চলছে তোলপাড়। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অডিও রেকর্ডটি ছড়িয়ে পড়ায় এ নিয়ে এখনো চলছে আলোচনা-সমালোচনা। ইতিমধ্যে এলাকায় এনিয়ে প্রকাশিত সংবাদ ফটোকপি করেও বিক্রি হয়েছে।

এ ঘটনাসহ চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদের জন্মনিবন্ধন সনদ ও শালিস বাণিজ্যসহ নানা অনিয়মের সুষ্ঠু প্রতিকার চেয়ে রবিবার (১ জানুয়ারি) রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে এ লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে।

কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের জনসাধারনের পক্ষে নুরুল হক, শফিউল আলম, আজিজুল হক, নুরুল ইসলাম নাহিদ ও ছানা উল্লাহ বাবুল রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাজাহান আলির সাথে দেখা করে এ অভিযোগ দেন।

লিখিত এ অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ২৪ ডিসেম্বর ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা বেলাল আহমদের মেয়ের বিয়ের জন্য জন্ম নিবন্ধন সনদ দিয়ে আড়াই হাজার টাকা উৎকোচ নেন মোস্তাক আহমদ। পরে ২৯ ডিসেম্বর ওই বেলাল আহমদকে মুঠোফোনে মেয়ের বয়স কম এমন অজুহাতে ইউএনও’র জন্য ১০ হাজার টাকা এবং রামু থানার ওসির জন্য ৫ হাজার সহ মোট ১৫ হাজার টাকা দাবি করেন। যার অডিও রেকর্ডও ইউএনও’র কাছে হস্তান্তর করেন অভিযোগকারি এলাকাবাসী।

অভিযোগে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, বাল্য বিয়ে ও সাধারণ অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদ দেয়ার ক্ষেত্রে চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদ সেবা প্রত্যাশীদের কাছ থেকে ২ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ নেন। এমনকি এলাকার রাস্তা দিয়ে মাটি, বালি, ইট, নির্মাণ সামগ্রী পরিবহন করার সময় লোকজনের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে থাকেন। ইউনিয়ন পরিষদের বিভিন্ন শালিসেও বিচার প্রার্থীদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নেন এবং অনেক সময় নেয়া জামানতের টাকা আত্মসাৎ করেন।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৭-১৮ বছর মেয়াদের ভিজিডি মহিলা উপকারভোগী বাছাইয়ে চেয়ারম্যান নিজে আড়াই হাজার টাকা করে নিয়েছেন। সরকারি গোয়েন্দা সংস্থার তালিকায় ইয়াবা এবং মানবপাচারকারি হিসেবে চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদের নামও রয়েছে।

রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাজাহান আলি জানিয়েছেন, চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদের বিরুদ্ধে এলাকাবাসী লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের ক্ষুব্দ জনতা ও ভুক্তভোগীরা জানালেন, রামু উপজেলার কাউয়ারখোপ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদের অনিয়ম-দূর্নীতিতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে ৪০ হাজার মানুষ। এভাবে দিনরাত সাধারণ মানুষের কাছ থেকে নানাভাবে অর্থ হাতিয়ে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে বিতর্কিত এ ইউপি চেয়ারম্যান। ইতিপূর্বে কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের উখিয়ারঘোনা টিলাপাড়া এলাকায় ভয়াবহ পাহাড় কাটা নিয়ে ব্যাপক আলোচিত হন ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদ।

কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের পূর্বপাড়ার বেলাল আহমদ জানিয়েছেন, গত শুক্রবার তার মেয়ে আচ্ছফা ছিদ্দিকার সাথে কক্সবাজার সদর উপজেলার পিএমখালি এলাকার মৃত আকতার কামালের ছেলে তাজুল ইসলামের বিয়ের দিন ছিলো। আগের দিন (বৃহষ্পতিবার) রাতে চেয়ারম্যান তাকে ফোন করে ১৫ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। এমনকি টাকা না দিলে বিয়ে হবে না মর্মে হুমকীও দেন। এসময় তিনি আর্থিক সমস্যার কারনে টাকা দেরিতে দেয়ার অনুরোধ জানালে চেয়ারম্যান ক্ষিপ্ত হয়ে যান এবং বিয়ের দিন সকাল আটটার মধ্যে টাকা দিতে নির্দেশ দেন। এসময় বেলাল আহমদ অতিথিদের দেয়া টাকা নিয়ে তাকে দেয়ার আশ্বাস দিয়ে আরো কিছুক্ষন সময় চান। কিন্তু ততক্ষণে চেয়ারম্যানের টাকা চাওয়ার বিষয়টি পুরো বিয়ে বাড়ি ও আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি টের পেয়ে চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদ দুপুরের আগেই বিয়ে বাড়ি ত্যাগ করেন।

বেলাল আহমদ আরো জানান, ইতিপূর্বে মেয়ে আচ্ছফা ছিদ্দিকার জন্মনিবন্ধন দেয়ার জন্য চেয়ারম্যান আড়াই হাজার টাকা নিয়েছেন।

কাউয়ারখোপ ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি নুরুল ইসলাম নাহিদ জানিয়েছেন, দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে চেয়ারম্যান মোস্তাক জাতীয়তা সনদ, ওয়ারিশ সনদ, ভূমিহীন সনদ, প্রত্যয়নসহ বিভিন্ন নাগরিক সেবামূলক কাজে মানুষের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা আদায় করে লোকজনকে হয়রানি করে আসছে। এরফলে এলাকায় সরকারের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুন্ন হচ্ছে।

বিশিষ্ট রাজনীতিক ও সমাজসেবক শফিউল আলম জানিয়েছেন, ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদ বিচারের নামেও এলাকার লোকজনের কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ নিচ্ছেন।

কাউয়ারখোপ ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সিনিয়র যুগ্ন আহবায়ক নুরুল হক হেলালী ও যুগ্ন আহবায়ক আবদুল গনি হেলালী জানিয়েছেন, অডিও কেলেংকারি ধামাচাপা দিতে চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদ এখন এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার শুরু করেছেন। এমনকি অডিও রেকর্ডও মিথ্যা বলে প্রচারনা চালাচ্ছেন। একজন জনপ্রতিনিধি এমন মিথ্যার আশ্রয় নিলে তিনি কিভাবে ইউনিয়নবাসীর বিচার নিশ্চিত করবেন তা নিয়ে চিন্তিত পুরো ইউনিয়নবাসী।

ভুক্তভোগী জনসাধারণ চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদের অনিয়ম-দূর্নীতি বন্ধে রামু-কক্সবাজার আসনের সংসদ সদস্য সহ প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

#####

পাঠকের মতামত

আজ পহেলা বৈশাখ

আজ রোববার (১৪ এপ্রিল) পহেলা বৈশাখ-বাংলা নববর্ষ। বাংলা বর্ষপঞ্জিতে যুক্ত হলো নতুন বাংলা বর্ষ ১৪৩১ ...

বান্দরবানে যৌথ বাহিনীর অভিযান পরিচালিত এলাকায় ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা

বান্দরবানে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান পরিচালিত রুমা,রোয়াংছড়ি ও থানচি এলাকায় পর্যটকদের ভ্রমণ নিরুৎসাহিত করছে বান্দরবান জেলা প্রশাসন। ...

বাসের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কে দুই মোটরসাইকেল আরোহী নিহত

পটিয়ায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় দুই আরোহী নিহত হয়েছে। নিহতরা হলেন- বোয়ালখালী উপজেলার পশ্চিম গোমদন্ডী এলাকার মোঃ ...