প্রকাশিত: ০৯/০৬/২০১৮ ৩:২৭ এএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ২:০৩ এএম

ডেস্ক রিপোর্ট ::
মিয়ানমারের রাখাইন থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা জানিয়েছে, তাদের পরিবারের ১০ হাজার ৪৪৩ সদস্যের হদিস পাচ্ছে না। নিখোঁজ এ রোহিঙ্গাদের সন্ধান চেয়ে আন্তর্জাতিক রেড ক্রসের সহায়তা চেয়েছে তারা। উখিয়ার কুতুপালং ৪ নম্বর ক্যাম্পে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি ও ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব রেড ক্রস (আইসিআরসি) পরিচালিত একটি তথ্যকেন্দ্রে বৃহস্পতিবার সকালে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ৩০ রোহিঙ্গা তাদের নিখোঁজ স্বজনের সন্ধানে সেখানে জড়ো হয়েছে। তারা নিখোঁজ স্বজনের সন্ধান চেয়ে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির নির্ধারিত ফরম পূরণ করেছিল। তাদের মধ্যে কয়েকজন আইসিআরসির সহযোগিতায় নিখোঁজ স্বজনের খবর পেয়েছে।

তথ্যকেন্দ্রে কথা হয় রাখাইনের রাচিদং চৌপ্রাং এলাকা থেকে গত আগস্টে পালিয়ে আসা ধলু বেগমের (৪৫) সঙ্গে। এই রোহিঙ্গা নারী জানান, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতন থেকে বাঁচতে পরিবারের আট সদস্য নিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে পারলেও ছেলে জাহেদ হোসেনকে (১৮) সঙ্গে আনতে পারেননি। নিখোঁজ এই ছেলে মারা গেছে, না বেঁচে আছে, কোনো খবর না পেয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন তিনি। অবশেষে আন্তর্জাতিক রেড ক্রসের মাধ্যমে বৃহস্পতিবার নিখোঁজ ছেলের খবর পেয়েছেন তিনি। তাকে জানানো হয়েছে ছেলে জাহেদ হোসেন বেঁচে আছে। রয়েছে রাখাইনের প্রাদেশিক রাজধানী সিটওয়ের একটি জেলখানায়। ছেলের কাছ থেকে পাওয়া একটি পত্রও এই রোহিঙ্গা নারীর কাছে হস্তান্তর করেছে আইসিআরসির কর্মীরা। ছেলে বেঁচে রয়েছে- এই খবর পেয়ে ক্রমাগত আনন্দ অশ্রু ঝরছিল এই রোহিঙ্গা নারীর চোখ থেকে। জানালেন, জেলে থাকলেও ছেলে বেঁচে রয়েছে, এটিই বড় আনন্দ তার কাছে।

একইভাবে নিখোঁজ স্বামীর খবর পেয়েছেন রাখাইনের রাচিদং থেকে পালিয়ে আসা নছিমা খাতুন (৪০)। গত সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে পাঁচ সন্তানকে নিয়ে পালিয়ে আসতে পারলেও স্বামী মোহাম্মদ হোছনের কোনো হদিস পাচ্ছিলেন না এই নারী। বৃহস্পতিবার সকালে আইসিআরসির কর্মীরা খবর দিয়েছেন তার স্বামী বেঁচে আছেন। তিনি এখন বন্দি রয়েছেন আকিয়াব (সিটওয়ে) জেলে। এই আনন্দে রেড ক্রিসেন্টের এক নারী কর্মীকে বারবার জড়িয়ে ধরছিলেন নাছিমা।

ধলু বেগম ও নছিমা খাতুন তাদের নিখোঁজ স্বজনের হদিস পেলেও আরও অনেকে তা পায়নি। আইসিআরসি সহযোগিতা চেয়ে ভালো কোনো খবরের অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন তারা। তাদেরই একজন রাচিদং চৌপ্রাং থেকে পালিয়ে আসা গুলবাহার (৫৫)। তিন মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে আসতে পারলেও একমাত্র ছেলে হোছন (২০) কোথায় আছে, জানেন না এই নারী। তিনি বলেন, স্বামী শফি উল্লাহকে চোখের সামনে হত্যা করেছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। লোমহর্ষক এই দৃশ্য দেখে তিন মেয়েকে নিয়ে দিজ্ঞ্বিদিক ছুটেছেন। পাহাড়-নদী পেরিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে পেরেছেন। কিন্তু ছেলে হোছন কোথায় আছে, জানেন না।

গুলবাহার বলেন, ‘চেরাং গরি চাই থাক্কি। পোয়ার খন খবর পাইয়ম বলি।’ যার অর্থ, রেড ক্রসের সহায়তা চেয়ে অপেক্ষায় থেকেছি। পুত্রের ভালো কোনো খবরের আশায়।

তথ্যকেন্দ্রে কথা হয় মংডুর কাজিবিল থেকে পালিয়ে আসা রাইজন বিবির (৫৫) সঙ্গে। ছেলে হামিদ হোছনের কোনো হদিস পাচ্ছেন না তিনি। জালাল আহমদ নামে একজন জানান, তার ছেলে আবদুল আহমদ (২৩) সাত মাস ধরে নিখোঁজ। রাখাইনের রাচিদং থেকে পরিবারের আট সদস্যকে নিয়ে পালিয়ে এসেছেন এই কৃষক। মনির আহমদ নামে একজন জানান, তার বাবা বশির আহমদ (৫০) ও ভাই রশিদ উল্লাহর (২৫) কোনো হদিস নেই। নিখোঁজ বাবা ও ভাইয়ের সন্ধানে আইসিআরসির সহযোগিতা চেয়েছেন এই রোহিঙ্গা।

আইসিআরসির জনসংযোগ কর্মকর্তা জামশেদুল করিম জানান, গত ২৫ আগস্টের পর থেকে ১ মে পর্যন্ত ১০ হাজার ৪৪৩ জন নিখোঁজ রোহিঙ্গার সন্ধান চেয়ে তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা এ পর্যন্ত ৮৩ জন নিখোঁজ ব্যক্তির সন্ধান পেয়েছি। তাদের সঙ্গে পরিবারের সংযোগ পুনঃস্থাপন করে দিতে পেরেছি।

জামশেদ আরও বলেন, নিখোঁজ স্বজনদের সন্ধানে মিয়ানমার রেড ক্রসসহ বিভিন্ন দেশে রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট সহযোগিতা করছে। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া রোহিঙ্গা পরিবারের সদস্যদের মধ্যে পুনঃসংযোগ স্থাপনে এ পর্যন্ত সাড়ে আট হাজারের বেশি ফোন কলের সুবিধা দেওয়া হয়েছে।

কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির মাঠ কর্মী আতিকুর রহমান রাব্বী জানান, উখিয়া ও টেকনাফের ১৫টি ক্যাম্পে সংস্থার উদ্যোগে পারিবারিক যোগাযোগ পুনঃস্থাপন সেবা কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক রেড ক্রস তাদের এ ব্যাপারে সহযোগিতা দিচ্ছে।

আইসিআরসির কক্সবাজার অফিস ইনচার্জ ফিতোরে পুলা বলেন, রাখাইনে রোহিঙ্গাদের নিখোঁজ স্বজনদের সন্ধানে কাজ করা খুবই কঠিন ব্যাপার। রোহিঙ্গারা তাদের নিখোঁজ স্বজনদের সর্বশেষ অবস্থান সম্পর্কে যে ঠিকানা দিয়ে থাকেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রে সেখানে এখন কাউকে পাওয়া যায় না। তবুও মিয়ানমার রেড ক্রসের সহযোগিতায় আমরা নিখোঁজ স্বজনদের সন্ধান চালিয়ে যাচ্ছি। তিনি বলেন, নিখোঁজ কিছুসংখ্যক রোহিঙ্গাকে আমরা মিয়ানমারের জেলে পেয়েছি। তাদের সঙ্গে বাংলাদেশে আশ্রয় কেন্দ্রে থাকা পরিবারের পুনঃসংযোগ করে দিতে পেরেছি।

ফিতোরে পুলা বলেন, রোহিঙ্গা পরিবারগুলোর নিখোঁজ সদস্যরা মালয়েশিয়া বা অন্য কোনো দেশে রয়েছে কি-না আইসিআরসি কর্মীরা তাও খতিয়ে দেখছে। সে দেশের সংশ্নিষ্ট সংস্থার মাধ্যমে অনুসন্ধান করছে। সমকাল

পাঠকের মতামত

১৫০ বাংলাদেশিকে ফিরিয়ে ২৮৫ সেনাকে নিয়ে ফিরবে মিয়ানমারের জাহাজ

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ জা‌নি‌য়ে‌ছেন, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ ও সেনাবাহিনীর ২৮৫ ...

সোনার দামে আবারও রেকর্ড, ভ‌রি‌ ১ লাখ ১৯ হাজার ৬৩৮ টাকা

আবারও সোনার দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)। প্রতি ভরিতে ...