প্রকাশিত: ১৩/১০/২০২১ ৬:০৭ পিএম
ফাইল ছবি

মাহাবুবুর রহমান.

ফাইল ছবি

মাদক সিন্ডিকেটের টার্গেটে পরিণত হচ্ছেন সৌদি প্রবাসীরা। ফলে চরমভাবে ক্ষুন্য হচ্ছে সৌদি সহ মধ্যপ্রাচ্যে বসাবাসরত প্রবাসীদের ভাবমূর্তি। ইতোমধ্যে দেশটির পুলিশ বাঙালিদের ওপর নজরদারি বাড়িয়েছে। এতে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে প্রবাসীদের মধ্যে। ইয়াবাসহ ধরা খেয়ে মাদক মামলায় জেলেও যাচ্ছেন অনেক প্রবাসীকর্মী। মাদক পাচারকারিদের সহযোগী হিসেবে বিমানবন্দর কর্মীদের যুক্ত থাকারও অভিযোগ রয়েছে। আটক হওয়া প্রবাসীদের প্রায় সবারই অভিযোগ-তাদের অজান্তে পরিচিতজনরা খাবার, জামা, সবজি, আচারের নামে ইয়াবা ঢুকিয়ে দিয়েছেন ব্যাগে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তা শামীম উদ্দিন বলেন, প্রায় এক বছর পর হযরত শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দর থেকে গত ৭ সেপ্টেম্বর ইয়াবা পাচার-চেষ্টার আসামি মো. আসাদুল্লাহকে গ্রেপ্তার করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। তিনি একটি সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী। গত বছরের ১৭ অক্টোবর মেসার্স সিয়াম অ্যান্ড সোনি নামের একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির পাঠানো সোয়েটারের কার্টনে তিনি ৩৮ হাজার ইয়াবা পাচারের চেষ্টা করেছিলেন। ওই প্রান্তে কার্টনগুলোর প্রাপক ছিলেন সৌদি আরবের রিয়াদের আবদুল আজিজ আল মোশাররফ।
গত ৯ অক্টোবর হজরত শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরে সৌদিগামী একজন যাত্রীর কাছ থেকে ১ হাজার ৮৭৮ পিস ইয়াবা উদ্ধার করে এভিয়েশন সিকিউরিটি (এভসেক)। সোহেল রানা নামের ওই যাত্রী প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে দাবি করেন, তার গ্রামের এক নারী নিজের প্রবাসী ছেলেকে দেওয়ার জন্য এই ব্যাগ দিয়েছিলেন তাকে।এদিকে মাদক পাচারকারিদের সহযোগী হিসেবে বিমানবন্দর কর্মীদের যুক্ত থাকারও অভিযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে সৌদির আদালতে প্রবাসী মো. আবুল বাশারের ২০ বছরের কারাদন্ডের ঘটনার কথা বলা যায়। তাকে আচারের প্যাকেটের কথা বলে ভয়ভীতি দেখিয়ে ইয়াবাভর্তি একটি প্যাকটে নিতে বাধ্য করেছিল বিমানবন্দরের পরিচ্ছন্নতা কাজের সুপারভাইজার নূর মোহাম্মদ। যদিও কর্তৃপক্ষ বলছে, বিমানবন্দরের কোনো কর্মী অপরাধে জড়ালে ছাড় দেওয়া হবে না।
এদিকে কক্সবাজার গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে,কয়েক বছর আগে সৌদিতে ইয়াবা সহ আটক হওয়ার কক্সবাজার সদর উপজেলা পিএমখালীর মৌলবী বদিউল আলমের ছেলে আনিসুর রহমান বাপ্পী এবং ঝিলংজা মহুরা পাড়া এক যুবকের বিষয়ে তদন্ত করা হয়েছিল। যদিও বর্তমানে তারা জামিনে বেরিয়ে কক্সবাজারে অবস্থান করছে এর মধ্যে তারা কলাতলী এলাকায় হোটেল এবং টেকপাড়া জনতা সড়ক এলাকায় বিশাল বাড়িও করেছে। এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা ( বর্তমানে ফেনীতে কর্মরত) জানান,আমি বিষয়টি তদন্তকালে তাদের সাথে অনেক বড় সিন্ডিকেটের জড়িত থাকার প্রমান পেয়েছিলাম। সে বিষয়ে রিপোর্টও দেওয়া হয়েছিল।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন জানান, বাংলাদেশকে ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করে দুভাবে বিদেশে ইয়াবা ট্যাবলেট রপ্তানি হচ্ছে। প্রথমত, এক্সপ্রেস বা আর্ন্তজাতিক কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে লাগেজ ও পার্সেলে করে। দ্বিতীয়ত, বিদেশগামী যাত্রীদের বাহক হিসেবে ব্যবহার করে। তবে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পাঠানো যতগুলো চালান বিমানবন্দরের কার্গো হাউসে ধরা পড়েছে, তার অধিকাংশই বহুজাতিক কুরিয়ার ও মেইল সার্ভিস কোম্পানি ‘ডিএইচএল ও ফেডেক্স’-এর পার্সেল থেকে।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ থেকে ২০০-৩০০ টাকায় ইয়াবা নিয়ে সৌদি আরবে প্রতি পিস এক-দেড় হাজার টাকায় বিক্রি হয়। সহজে বেশি টাকা আয়ের নেশায় অনেকে স্বেচ্ছায় জড়িয়ে পড়ছেন মাদক পাচারের সিন্ডিকেটে। এর সদস্যরা ছুটিতে আসা প্রবাসীদের লক্ষ্য বানায়। পরিচিত প্রবাসীদের কাছে আচার, খাবার, ওষুধসহ নানান কথা বলে ইয়াবার চালান ভরে দেয় তারা। যাচাই ছাড়া এসব পার্সেল নিয়ে বিপদে পড়ছেন প্রবাসীরা।
প্রবাসী কর্মীদের তথ্যানুযায়ী-জেদ্দা, মক্কা, মদিনা, রিয়াদ, আল কাসিম, দাম্মামসহ বিভিন্ন এলাকায় বাংলাদেশিরা ইয়াবা ব্যবসা ও সেবন করছেন। সৌদিসহ অন্য দেশের নাগরিকদের মধ্যেও এই মাদকের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে। ইয়াবাসহ সৌদিতে অনেক বাংলাদেশির ধরা পড়ার কথা স্বীকার করেছেন প্রবাসীদের অনেকেই। তাদের মন্তব্য, এ কারণে বাংলাদেশিদের দেখলেই এখন তল্লাশি করে সৌদি পুলিশ। তাই একধরনের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে থাকতে হয় প্রবাসীকর্মীদের।
কাওসার আহমেদ নামে এক সৌদি প্রবাসী বলেন, সৌদি আরবে বাংলাদেশিদের মধ্যে মাদকসেবনের প্রবণতা বেড়েছে। নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করতাম না। মাদকের কারণে বিভিন্ন অপরাধে জড়াচ্ছে তারা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী খবর পেলেই তাদের ধরে নিয়ে যায়। বাঙালি বাজারগুলোতে এখন প্রায়ই অভিযান চালায় পুলিশ। এতে একদিকে যেমন দেশের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে, অন্যদিকে সাধারণ শ্রমিকরা হুমকির মধ্যে আছে।
প্রবাসী যাত্রীদের অন্যের মালামাল নেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে পরামর্শ দিয়েছেন বিমানবন্দর আর্মড পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জিয়াউল হক। তার শঙ্কা, অন্যের দেওয়া জিনিসপত্র না দেখে, যাচাই না করে বহন করলে বিপদে পড়তে হতে পারে। আর্মড পুলিশের এই অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, বিমানবন্দরে বিভিন্ন কৌশলে মাদক পাচারের অপচেষ্টা চালানো হয়। তবে বিমানবন্দরের বিভিন্ন সংস্থা মাদক চোরাচালান রোধে সক্রিয় ভূমিকা রাখছে। সৌদি আরবে ইয়াবা পাচারের সময় বেশকিছু যাত্রীকে আমরা ধরতে সক্ষম হয়েছি। অতিরিক্ত লোভের আশায় আর্ন্তজাতিক ফ্লাইটগুলোর মাধ্যমে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে তারা ইয়াবা পাচারের চেষ্টা করেছিল। তবে বিমানবন্দরের স্ক্যানিংয়ে অবশ্যই তা ধরা পড়বে।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর পক্ষ থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছিল, বাংলাদেশ থেকে ইয়াবা পাচার হচ্ছে। ইয়াবা পাচার বন্ধে বাংলাদেশের একাধিক মন্ত্রণালয় বৈঠকেও বসেছিল।

পাঠকের মতামত

উপকূলের ম্যানগ্রোভে বিশ্বস্বীকৃতি—দ্য আর্থশট প্রাইজ জিতলো ফ্রেন্ডশিপ

বিশ্বের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ পরিবেশ পুরস্কার ‘দি আর্থশট প্রাইজ ২০২৫’ জিতেছে বাংলাদেশের সামাজিক উন্নয়ন সংস্থা ফ্রেন্ডশিপ। ...

রোহিঙ্গার হাতে এনআইডি : নির্বাচন কর্মকর্তার সঙ্গে আসামি চসিকের কর্মচারীও

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) শুলকবহর ওয়ার্ড কার্যালয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে জন্ম নিবন্ধন এবং পরবর্তীতে এটি ব্যবহার ...

রোহিঙ্গা সংকটে মানবপাচার রোধে একসঙ্গে কাজ করবে আইওএম ও এইচসিআই

আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) এবং কানাডার প্রাচীনতম মুসলিম ত্রাণ সংস্থা হিউম্যান কনসার্ন ইন্টারন্যাশনাল (এইচসিআই) ও ...

উখিয়া অনলাইন প্রেসক্লাবের নবনির্বাচিত কমিটির শপথ গ্রহণ সম্পন্ন

উখিয়া অনলাইন প্রেসক্লাবের নবনির্বাচিত কার্যনির্বাহী কমিটির শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে। সোমবার (১০ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ...

রোহিঙ্গা নারীকে নাগরিকত্ব সনদ দেওয়ায় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বরখাস্ত

এক রোহিঙ্গা নারীকে অবৈধভাবে নাগরিকত্ব সনদ দেওয়ায় সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার ভদ্রঘাট ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ...