হুমায়ুন কবির জুশান, উখিয়া নিউজ ডটকম
প্রকাশিত: ২২/০৬/২০২৫ ৩:০৪ পিএম , আপডেট: ২২/০৬/২০২৫ ৩:০৬ পিএম

একসময় যিনি মাটির ঘরে বাস করতেন, ভাঙারি ব্যবসায় দিনযাপন করতেন, সেই ইলিয়াছ এখন বনভূমি দখল করে উখিয়ার অন্যতম বিতর্কিত কোটিপতি। স্থানীয়দের চোখে তার উত্থান ছিল যেমন আকস্মিক, তেমনি রহস্যময়। আর সর্বশেষ পুলিশি অভিযানে আটক হওয়ার পর রাতেই থানার ভেতর থেকে মুক্তি পাওয়ায় নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে এই বিতর্কিত ব্যবসায়ীকে ঘিরে। জানা গেছে, ২০০৫ সালের দিকে উত্তরাঞ্চল থেকে উখিয়ায় এসে ভাঙারি ব্যবসা শুরু করেন ইলিয়াছ। নিজেই ঘুরে ঘুরে পুরোনো লোহা, অ্যালুমিনিয়াম ও প্লাস্টিক সামগ্রী সংগ্রহ করতেন, সেগুলো ঢাকায় পাঠিয়ে অল্প অল্প করে পুঁজি গড়ে তোলেন। তার শ্রম ও নিষ্ঠা ছিল প্রশংসনীয়—এমনটাই বলছে স্থানীয়রা। কিন্তু ২০১০ সালের পর হঠাৎ করেই তার জীবনযাত্রায় আসে আমূল পরিবর্তন। যুক্ত হন ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে, হন অর্থদাতা, আর এই সুযোগে গড়ে তোলেন ইয়াবা পাচারের একটি সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট। স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, ভাঙারি ব্যবসার আড়ালে একই ট্রাকে চলতো ইয়াবা পাচার। আর্থিকভাবে ফুলে ফেঁপে উঠতে উঠতে বন বিভাগের জায়গা দখল করে নির্মাণ করেন ভবন, গড়ে তোলেন গুদামঘর, সুপারশপ, শোরুম ও ভাড়াবাসা। মাসিক আয় লাখ লাখ টাকায় পৌঁছে গেলেও এই টাকার উৎস নিয়ে নেই কোনো স্বচ্ছতা। প্রশাসনের চোখ এড়িয়ে তার সম্পদ বাড়ে প্রতিনিয়ত।
সবশেষ গত ১৮ জুন রাতে উখিয়া থানা পুলিশের বিশেষ অভিযানে ইলিয়াছসহ বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়। একই সময় ধরা পড়েন আওয়ামী লীগের এক সাংগঠনিক সম্পাদক ও ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি। কিন্তু রাত গভীরেই থানা থেকে ইলিয়াছকে ছেড়ে দেওয়া হয়, যা নিয়ে এলাকায় ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। একই সময় শুধু মাত্র আওয়ামী লীগের নেতার সাথে গ্রুপ ছবিতে থাকা এক নিরপরাধ দন্ত চিকিৎসককে থানায় নিয়ে আসে এবং বিস্ফোরক আইনে মামলা দিয়ে কক্সবাজার কারাগারে পাঠানো হয়েছে। উখিয়ার সচেতন নাগরিকদের প্রশ্ন শুধু মাত্র আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে ছবি থাকার কারণে যদি চিকিৎসককে কারাগারে যেতে হয় তাহলে আওয়ামী লীগের নেতার সাথে শুধু ছবি নয় অর্থ যোগানদাতা যিনি সেই বিতর্কিত ইলিয়াসকে গভীর রাতে থানা থেকে ছেড়ে দেয়ার হেতু কি? উখিয়াবাসী জানতে চায়। ইলিয়াসের সাথে আরো দুজনকে সেই রাতে থানা পুলিশ কিসের বিনিময়ে ছেড়ে দিলেন তা বুঝতে আর বাকি থাকেনা। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, একজন সাংবাদিক ও এক ‘মাঠ সমন্বয়কারীর’ মাধ্যমে প্রভাব খাটিয়ে ইলিয়াছকে মুক্ত করা হয়, আর এই মুক্তির পেছনে রয়েছে মোটা অঙ্কের লেনদেন। যদিও এসব অভিযোগের বিষয়ে স্পষ্টভাবে কেউ সামনে মুখ খুলতে চাননি। উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ আরিফ হোসাইন বলেন, ইলিয়াছের বিরুদ্ধে কোনো মামলা না থাকায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বাহির থেকে কেউ তদবির করেছে কি না, সে বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না বলে দাবি করেন। সেই ক্ষেত্রে এক পল্লী চিকিৎসক মুজিবুর বলেন, দন্ত চিকিৎসকের ও কোনো মামলা ছিল না তাহলে তাকে কেন ছেড়ে দেওয়া হলো না? দন্ত চিকিৎসককে জি আর ৪৯৬/২৪ মামলায় হয়রানি মূলক জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে। সেই মামলার বাদী মোর্শেদ বলেন, আমার মামলায় দন্ত চিকিৎসক জড়িত নয়, তাকে আমি চিনিও না। অন্যায়ভাবে আমার অগোচরে তাকে জড়ানো হয়েছে। ইলিয়াসের ঘটনায় উখিয়া জুড়ে এখন ঘুরে বেড়াচ্ছে একটাই প্রশ্ন—মাত্র এক দশকে এত উত্থান, ক্ষমতার ছায়ায় নিরাপদ চলাফেরা, আর থানা থেকে রাতারাতি মুক্তি—সবই কি কাকতালীয়, নাকি সত্যিই এর পেছনে রয়েছে কোনো শক্তিশালী মাফিয়া চক্র? সাধারণ মানুষ বলছে, কেবল সাংবাদিকতা কিংবা আলোচনার মাধ্যমে নয়, প্রয়োজন নিরপেক্ষ ও পেশাদার তদন্ত। তারা চায়, এই বিতর্কিত উত্থান, সম্পদের উৎস, রাজনৈতিক আশ্রয় ও প্রশাসনিক প্রভাব সবকিছুই প্রকাশ্যে আসুক। এবং প্রভাবশালী হলেই যেন কেউ আইনের ঊর্ধ্বে না থাকতে পারে—এই বার্তাটি সমাজে স্পষ্ট হোক।

পাঠকের মতামত

ঘুমধুম সীমান্তে ১ লাখ ২০ হাজার ইয়াবাসহ এক রোহিঙ্গা আটক করেছে ৩৪ বিজিবি

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্ত এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১ লাখ ২০ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ ...