
২৩ বছর বয়সি তরুণ পার্বন বড়ুয়া। স্বপ্ন ছিল দক্ষ শেফ হয়ে বিদেশের মাটিতে ক্যারিয়ার গড়া। সেই স্বপ্ন পূরণের আশায় ধার করে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাসে তার সেই আশা আজ বিষাদের গল্পে রূপ নিয়েছে। ভারতীয় সহকর্মীর রোষানলে পড়ে ফিজি নামের দূর দ্বীপরাষ্ট্র থেকে তিনি হঠাৎ করেই নিখোঁজ হন।
প্রায় দুই মাস পেরিয়ে গেলেও তার কোনো খোঁজ মেলেনি আজও। তিনি জীবিত না মৃত- সে সম্পর্কেও কোনো সঠিক তথ্য জানা যায়নি। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে দিশেহারা পরিবার দিন গুনছে প্রবাসী সন্তানের ফেরার অপেক্ষায়। পার্বন বড়ুয়ার বাড়ি রামু উপজেলার ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের মধ্যম মেরংলোয়া বড়ুয়াপাড়া গ্রামে। তিনি বাবুল বড়ুয়া ও শেলী প্রভা বড়ুয়ার ছেলে।
জানা যায়, বাংলাদেশে থাকাকালীন তিনি কাজ করতেন কক্সবাজারের সি-পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা হোটেলে। সেখানেই সহকর্মী হিসেবে পরিচয় হয় ময়মনসিংহের মিন্টু সাংমার সঙ্গে। পরে মিন্টু চলে যান ফিজিতে, আর সেখান থেকেই শুরু হয় পার্বনের বিদেশযাত্রার গল্প। ২০২৪ সালের ২১ আগস্ট, পাঁচ লাখ টাকা খরচ করে ফিজিতে পৌঁছান পার্বন। সেখানে মিন্টুর সহযোগিতায় তিনি টাপ্পো গ্রুপের নিউইয়র্ক পিজ্জা কিচেনে শেফ হিসেবে যোগ দেন। এই কিচেনে ভারতীয় নাগরিক প্রাভিন ও সুরেন্দ্র প্রধান শেফ হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পার্বন প্রাভিনের বাসায় সাবলেট হিসেবে থাকতেন। পরবর্তীতে ভারতীয় প্রধান শেফ সুরেন্দ্র, শেফ প্রাভিন, আকলেশ এবং ম্যানেজার মিন্টু সাংমার সঙ্গে তার সম্পর্ক ক্রমে অবনতি হতে থাকে।
পার্বনের পরিবারের দাবি, প্রাভিন প্রায়ই বাংলাদেশ ও সংখ্যালঘুদের নিয়ে পার্বনকে অস্বস্তিকর প্রশ্ন করতেন এবং জোরপূর্বক তার বক্তব্য রেকর্ড করতেন। এ নিয়ে প্রাভিন ও ম্যানেজার মিন্টুর সঙ্গে পার্বনের মনোমালিন্য তৈরি হয়। অবশেষে ২০২৫ সালের ৬ জুলাই পার্বন তার মাকে ফোন করে জানান- তার পাসপোর্ট ও ডেবিট কার্ড কেড়ে নেওয়া হয়েছে এবং তিনি জীবন নিয়ে চরম নিরাপত্তাহীনতায় আছেন। কথোপকথনের একপর্যায়ে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, যেকোনো সময় তাকে হত্যা করা হতে পারে। ওই ফোনালাপের পর থেকেই আর কোনো খোঁজ মেলেনি তার।
এরপর ৭ জুলাই ম্যানেজার মিন্টু সাংমা পার্বনের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, পার্বন নাকি পালিয়ে গেছেন। তবে এর বাইরে তিনি কোনো তথ্য দেননি। এরপর থেকেই পার্বনের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে দেন। পার্বনের মামা যতিসেন বড়ুয়া এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ জানিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দ্বারস্থ হন। তবে পরিবারের অভিযোগ, সরকারি পর্যায়ে কিছু প্রক্রিয়া শুরু হলেও এখনো পর্যন্ত কোনো কার্যকর অগ্রগতি হয়নি।
পার্বনের মা শেলী প্রভা বড়ুয়া বলেন, আমার ছেলেটা ফোন করে কাঁদছিল। বলছিল- মা, ওরা আমার পাসপোর্ট আর ডেবিট কার্ড নিয়ে নিয়েছে, আমি নিরাপদে নেই। কথার ফাঁকে ফাঁকেই বলছিল, আমাকে হয়তো আর জীবিত পাবে না। সেই থেকে আর কোনো খোঁজ নেই। আমি প্রতিদিন ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে আছি। পার্বনের বাবা বাবুল বড়ুয়া বলেন, আমার দুই ছেলের মধ্যে সে বড়। তার উপার্জনেই আমাদের সংসার চলত। এখন সে কোথায় আছে, বেঁচে আছে নাকি মারা গেছে- তা আমরা জানি না। এ ঘটনায় স্বজনেরা গভীর উদ্বেগ ও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তাদের দাবি, প্রবাসী ওই যুবকের সন্ধান দ্রুত বের করতে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালানো উচিত।

পাঠকের মতামত