বিবিসি বাংলা::
বাংলাদেশ সরকার ঢাকায় বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের সামরিক কর্মকর্তাদের রোহিঙ্গা শিবিরগুলোর অবস্থা দেখাতে আজ কক্সবাজারে নিয়ে যাচ্ছে।
যদিও কূটনীতিকদের বহুবার রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দুর্দশার চিত্র সরেজমিনে দেখানোর জন্য সেখানে নিয়ে গিয়েছে বাংলাদেশ, সামরিক এটাশেদের সেখানে নেয়ার উদ্যোগ এই প্রথম।
বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর তত্ত্বাবধানে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ভারত, পাকিস্তান, তুরস্ক, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা এবং সৌদি আরবসহ ১৪টি দেশের মিলিটারী এটাশে বা সামরিক কর্মকর্তাদের ১৪ই মে সোমবার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবিরে নেয়া হবে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সূত্রগুলো বলছে, চীনা দূতাবাসে কর্মরত মিলিটারী এটাশে ঢাকার বাইরে থাকায় যেতে পারছেন না। অন্যদিকে মিয়ানমারের মিলিটারী এটাশেকে নেয়া হচ্ছে না বা তাঁকে আমন্ত্রণই জানানো হয়নি।
বিভিন্ন দেশের মিলিটারী এটাশেরা দুদিনের সফরের সময় রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করে শরণার্থীদের বক্তব্য শুনবেন। এছাড়া সীমান্তের যে পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গারা বেশি এসেছে, সেই সীমান্ত এলাকা এবং বিজিবির একটি চৌকি এলাকা তারা পরিদর্শন করবেন।
সামরিক কর্মকর্তাদের এভাবে শরণার্থী শিবিরে নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ কেন?আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর বা আইএসপিআর এর পরিচালক লে: কর্ণেল আলমগীর কবির বলছেন, রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে বিভিন্ন দেশের সামরিক বাহিনীও যাতে জানতে পারে, সেজন্যই এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
“যেহেতু এটা আন্তর্জাতিক সমস্যা বিভিন্ন দেশের মিলিটারী এটাশেরা আমাদের দেশে আছেন। আর এই সমস্যাটা সরকার থেকে বিভিন্ন দেশের কাছে তুলে ধরা হয়েছে। এনজিওগুলোও এগিয়ে এসেছে। কিন্তু মিলিটারী যে লাইনটা আছে, তাদের কাছে সমস্যাটা উপস্থাপন করা হয়নি। তারাও অনেকে দেখার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। সেজন্যই এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।”বাংলাদেশ সেনাবিহিনীর অন্যান্য সূত্রগুলো বলছে, মিয়ানমার ইতিমধ্যেই দেশটিতে কর্মরত বিভিন্ন দেশের মিলিটারী এটাশে বা সামরিক কর্মকর্তাদের কয়েক দফা তাদের মতো করে পরিস্থিতি অবহিত করেছে। সেখানে মিয়ানমার তাদের নিরাপত্তা হুমকির বিষয় হিসেবে আরসা বা জঙ্গী গোষ্ঠীর তৎপরতার কথা তুলে ধরেছে।
বাংলাদেশের বিভিন্ন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে যে, বাংলাদেশ এ বিষয়ে তাদের অবস্থান বিদেশি দূতাবাসগুলোর কাছে তুলে ধরতে চায়। বিশেষ করে বাংলাদেশ মনে করে, জঙ্গী তৎপরতার কথা বলে মিয়ানমার লাখ লাখ রোহিঙ্গার পালিয়ে আসার বিষয়টি থেকে দৃষ্টি অন্যদিকে নিতে চায়। একই সঙ্গে বাংলাদেশ এই বিষয়টির ওপর জোর দিতে চায় যে, রোহিঙ্গাদের মধ্যে জঙ্গী থাকলে সেটাও মিয়ানমারের সমস্যা।
বাংলাদেশে অভিবাসন বিষয়ে কাজ করেন অধ্যাপক তাসনীম সিদ্দিকী।
তিনি বলছিলেন, “মিলিটারী এটাশেদের নিয়ে আসা মানে এই নয় যে বাংলাদেশ কোন সামরিক সমাধানের দিকে যাবে। বরং এই সামরিক কর্মকর্তাদের মাধ্যমেও বাংলাদেশ তাদের বক্তব্য তুলে ধরতে চাইছে। এই উদ্যোগ আন্তর্জাতিক সহায়তার ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে।”
পাঠকের মতামত