প্রকাশিত: ০২/০৭/২০১৮ ৮:২৮ এএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ১:১৭ এএম

এম. বেদারুল আলম :
কাজোর মান ভালো না হওয়া, প্রকল্প বাস্তবায়নে নানা অনিয়ম , প্রাপ্ত বরাদ্দ ইচ্ছেমত ব্যবহার করায় জেলার ১২ ইউনিয়ন পরিষদের বরাদ্দ স্থগিত এবং উক্ত চেয়ারম্যানগণকে তলব করেছে স্থানিয় সরকার মন্ত্রণালয়। আগের বছরের বরাদ্দে চেয়ারম্যান ও মেম্বারগণ কাজের যে দক্ষতা বা মান বজায় রাখার নিয়ম ছিল তা পুরোপুরি বাস্তবায়ন না হওয়ায় উক্ত চেয়ারম্যানগণ গত ২০ জুন ব্যাখ্যা দিতে ঢাকায় হাজির হন। গত এপ্রিলে স্থানীয় সরকার সহায়তা প্রকল্পসহ ভূমি উৎসে কর প্রকল্পে নানা অনিয়ম পায় মন্ত্রণালয় নিয়োজিত অডিট টিম। ফলে জেলার ৭১ ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে উক্ত ১২ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে স্থানিয় সরকার মন্ত্রণালয়ে স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে কারণ ব্যাখ্যা করতে বলা হয়। দূর্নীতিগ্রস্থ এবং কাজে অনিয়ম হওয়ার কারনে ঢাকায় তলব করা চেয়ারম্যানগণ হলেন রামু উপজেলার ফতেখারকুলের ফরিদুল আলম, গর্জনীয়ার সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ঈদগড়ের ফিরোজ আহমেদ ভুট্টো, কচ্ছপিয়ার আবু নোমান মোহাম্মদ ঈসমাইল, কাউয়ারখোপের মোস্তাক আহমেদ, রশিদ নগরের এমডি শাহ আলম, রাজারকুলের মুফিজুর রহমান। চকরিয়ার শাহারবিলের মহসিন বাবুল, কোনাখালীর দিদারুল আলম, সুরাজপুর-মানিকপুরের সিরাজুল ইসলাম বাবলা, মহেশখালীর শাপলাপুরের চেয়ারম্যান নুরুল হক, উখিয়ার পালংখালীর চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী ।
স্থানিয় সরকার সহয়য়তা প্রকল্পের ডিষ্ট্রিক্ট ফ্যাসিলেটেটর আহসান উল্লাহ চৌধুরী মামুন জানান, এলজিএসপি এবং ভুমি হস্তান্তর কর প্রকল্পে স্থানিয় সরকার মন্ত্রনালয় নিয়োজিত অডিট টিম ‘এবি শাহা এন্ড কোং ’ পুরো জেলায় কাজের মান যাচাই এবং পরিষদের বিভিন্ন বিষয় তদন্ত করেন। তদন্তে ১২টি ইউনিয়নের কাজের বাস্তবায়নে নানা আপত্তি এবং অনিয়ম পায় উক্ত টিম। ফলে অনিয়মের কারনে ১২টি ইউনিয়ন পরিষদের এলজিএসপি প্রকল্পের বরাদ্দ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ১২ জন চেয়ারম্যানকে মন্ত্রণালয়ে এলজিএসপির প্রজেক্ট ডিরেক্টরের কাছে শুনানীতে তলব করা হয়। তিনি জানান, গত ২০ জুন উক্ত চেয়ারম্যানগণ ঢাকায় মন্ত্রণালয়ে উপস্থিত হয়ে শুনানীতে অংশ নেন। তাদের অনিয়ম প্রমানিত হওয়ায় অডিট আপত্তিতে প্রমান হওয়া টাকা ফেরত প্রদানের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। অনিয়ম ও আত্মসাৎকৃত অর্থ ফেরত প্রদান করলে তাদের বরাদ্দ ছাড় দেওয়া হবে বলে ও জানা গেছে। চেয়ারম্যানগণ শীগ্রই অডিট আপত্তির উক্ত টাকা ফেরত প্রদানের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে ও নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন চেয়ারম্যান জানিয়েছেন।
জানা যাায়, বাংলাদেশ সরকার এবং বিশ্বব্যাংকের যৌথ অর্থায়নে গ্রামিন অবকাঠামোগত উন্নয়ন, সামাজিক সুরক্ষা ,শিক্ষাখাতের উন্নয়ন, স্বাস্থ্য, স্যানিটেশন, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ, নারীর ক্ষমতায়ণ, পরিবেশগত উন্নয়ন, পয়নিস্কাশন, মানব সম্পদ উন্নয়ন, অসহায় নারীদের সেলাই মেশিন প্রদানসহ বিভিন্ন প্রকার সামাজিক অবকাঠামোগত সংস্কারে প্রতি বছর বিপুল পরিমানে বরাদ্দ দেওয়া হয়ে থাকে।
এ প্রকল্পে তদারকি এবং প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদের নিজস্ব ব্যাংক হিসাবে সরাসরি মন্ত্রণালয় থেকে প্রকল্পের অর্থছাড় দেওয়া। প্রকল্পের অন্যতম বৈশিষ্ট্য কাজের মান যথাযত না হলে তদারকি কর্মকর্তাগণ অভিযোগ প্রদান করলে বরাদ্দ সরাসরি আটক রাখা হয় এবং পরের বছর শাস্তিস্বরুপ বরাদ্দ বন্ধ করে দেওয়া। ফলে দূর্ণীতি করার সুযোগ কম থাকে। কাজের দক্ষতা ভিত্তিক মূল্যায়নের জন্য স্থানিয় সরকার পর্যায়ে গ্রামে উন্নয়ন কার্যত দৃশ্যমান হয়। পুরস্কারের আশায় জনপ্রতিনিধিগণ দূর্নীতি অনেকাংশে কম করে থাকেন। তবু জেলার ১২টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যানগণ অনিয়ম করায় হতবাক হয়েছেন অনেকে।
প্রকল্পের তদারকি কর্মকর্তা ডিস্ট্রিক্ট ফ্যাসিলেটেটর আহসান উল্লাহ চৌধুরী মামুন জানান, বাংলাদেশের অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প এলজিএসপি , গ্রামিন চেহারা আজ পাল্টে যাচ্ছে এ প্রকল্পের বাস্তবায়নের কারনে। এটি যেহেতু সরকারি – বেসরকারি ভাবে আলাদা তদন্ত হয় তাই এখানে দূর্নীতি করে কেউ অদ্যাবধি ছাড় পায়নি। এ প্রকল্পের দূর্নীতির কারনে সদরের একটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের পদ ৩ মাস স্থগিত হওয়ার নজির ও রয়েছে।

পাঠকের মতামত