উখিয়া নিউজ ডেস্ক::
তিন পার্বত্য জেলার নতুন আতঙ্ক ৯৬৯। বাংলাদেশ সংলগ্ন মিয়ানমার সীমান্তের দুর্গম পাহাড়ে তাদের ঘাঁটি। সম্প্রতি সংগঠনটি তৎপরতা শুরু করেছে বাংলাদেশের পার্বত্য জেলাগুলোতে। সেখানকার গরিব, অসহায় ও মামলায় পালিয়ে থাকা মানুষদের টার্গেট করে নিজেদের দলে টানছে। কারও কারও অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে অর্থের বিনিময়ে নিজেদের পক্ষে কাজ করতে বাধ্য করছে। ধর্মীয় উগ্রপন্থি হিসেবে ৯৬৯ পরিচিত হলেও তাদের রয়েছে সশস্ত্র গ্রুপ। সংগঠনটির ভাণ্ডারে রয়েছে হালকা থেকে ভারী অস্ত্রের বিশাল মজুত। সন্ত্রাসী সন্ন্যাসী আসিন উইরাথু এই সংগঠন বর্তমানে পরিচালিত করে। এদিকে তাদের সঙ্গে যোগসাজশ রয়েছে পাহাড়ের দুর্গম অঞ্চলে থাকা জনসংহতি সমিতি ও ইউপিডিএফ এর সশস্ত্র গ্রুপের। বাংলাদেশে তৎপর ওই দুই সশস্ত্র গ্রুপকে নতুন করে স্বপ্ন দেখানো হচ্ছে জুম্মু ল্যান্ড গঠনের। স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে জুম্ম ল্যান্ড গঠন করার জন্য বিভিন্ন রূপ রেখাও তৈরি করা হয়েছে। কি ধরনের সরকার হবে পাহাড়ে তারও একটি ছক সাজানো হয়েছে। পাহাড়কে এমন একটি অবস্থায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চলছে যে, বাংলাদেশ সরকার থেকে পাহাড়কে বিচ্ছিন্ন করে নিজেরাই সরকার গঠন করে স্বাধীন জুম্ম ল্যান্ড গঠন করবে। এ ধরণের কর্মকাণ্ড সরকার প্রশ্রয় না দেয়ায় পার্বত্য জেলাগুলোতে প্রতিনিয়ত সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো কোনো না কোনো কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে। সরজমিন পার্বত্য জেলার বিভিন্ন এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়। এদিকে সরকারের শীর্ষ এক গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনেও বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে ধর্মীয় উগ্রপন্থির লেবাসে থাকা সশস্ত্র ওই সংগঠনকে পার্বত্য জেলাগুলোর জন্য বড় ধরনের হুমকি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মিয়ানমারের ৯৬৯ নামের গ্রুপটি নতুন আতঙ্ক হিসেবে দেখা দিয়েছে। আগে এই গ্রুপের কোন কর্মকাণ্ড পাহাড়ে ছিল না। সম্প্রতি এই গ্রুপটি পাহাড়ের সর্বত্র কাজ করে যাচ্ছে। ধর্ম প্রচারের নামে এমন কর্মকাণ্ড করবে তা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কখনও কল্পনা করেনি। একজন উগ্রবাদী ভান্তেকে আটকের পর বিষয়টি নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক হয়ে ওঠে। কে আসল ভান্তে আর কে নকল ভান্তে এটা চিহ্নিত করতে সময় লেগে যাচ্ছে। তবে গ্রেপ্তার হওয়া ভান্তের দেয়া তথ্য মতে বেশ কয়েকটি জায়গায় অভিযান চালানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। পাহাড়ের স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, সরকারের খাস জমি দখল করে বিশাল এলাকা নিয়ে গড়ে তুলছে ‘ভাবনা কেন্দ্র’ বা কিয়াং। ভাবনা কেন্দ্রে বসেই উগ্র জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী ৯৬৯ উপজাতিদের নানা পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। ৩৫ জনের বেশি মিয়ানমারের নাগরিক এ কাজে জড়িত রয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। তারা ধর্মযাজক বা ভান্তে সেজে পাহাড়িদের মধ্যে বিষবাষ্প ছড়িয়ে দিচ্ছে। গত কয়েক মাসে তারা পার্বত্য এলাকায় ২৫ হাজারের বেশি অনুসারী তৈরি করেছে। সম্প্রতি মিয়ানমারের এক নাগরিক ভান্তে সেজে এমন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছিল। যৌথবাহিনী গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাকে মিয়ানমারের মুদ্রা এক লাখ ৫৫ হাজার কিয়াতসহ গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের পর যৌথবাহিনী তার কাছ থেকে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে। সে বলেছে, পাহাড়ে তার মতো প্রায় শতাধিক ভান্তে রয়েছে। তার তথ্যে বলা হয় পাহাড়ের উপজাতিরা যাতে বাঙালিদের উপর বিষিয়ে উঠে সে জন্য তারা কাজ করছে। এতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পাহাড়িরা লাভবান হবে। পুরুষ ভান্তেদের মতো মিয়ানমার থেকে আসা বেশ কয়েকজন নারী সদস্যও এখানে কাজ করে যাচ্ছে। গোয়েন্দারা এমন ২৫ জন নারীর সন্ধান পেয়েছে। যারা বান্দরবান, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়িতে কাজ করছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, ৯৬৯ তাদের সূদুরপ্রসারী তৎপরতার সঙ্গে যোগ করেছে অস্ত্র ব্যবসা। ৪ লাখ টাকায় একে-৪৭, আড়াই লাখ টাকায় একে-২২ এর মতো ভয়াবহ অস্ত্র বিক্রি করছে এদেশের সন্ত্রাসী ও জঙ্গিদের কাছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে আটক এমন এক সন্ত্রাসী সম্প্রতি জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, কয়েক মাসের মধ্যে সে প্রায় ৩৫টি অস্ত্র পৌঁছে দিয়েছে সন্ত্রাসীদের হাতে। এছাড়া প্রতিমাসে থানচি ও মিজোরাম এর অরক্ষিত বর্ডার দিয়ে ১৫ থেকে ২০ জন মিয়ানমারে ৯৬৯ এর কাছ থেকে অস্ত্রের প্রশিক্ষণ নেয়।
সুত্র, মানবজমিন
মিয়ানমারে চলমান সংঘাতের সুযোগে সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে মাদক পাচার বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশটির বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো নিজেদের ...
পাঠকের মতামত