প্রকাশিত: ০১/১০/২০১৮ ৭:২৮ এএম

বিদেশ থেকে সঙ্গে না আসা (লেফট বিহাইন্ড ব্যাগেজ) লাগেজ সংগ্রহ করা নিয়ে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রীদের হয়রানির দিন ফুরাচ্ছে। এখন থেকে এ ধরনের লাগেজ যাত্রীর বাসায় ঠিকানায় পৌঁছে দেয়া হবে।

অক্টোবর থেকেই এই ‘হোম ডেলিভারি’ সেবা পুরোদমে শুরু হচ্ছে বলে শাহজালাল বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন আব্দুল্লাহ আল ফারুক জানিয়েছেন। বিডিনিউজ

আব্দুল্লাহ আল ফারুক বলেন, ‘ব্যাগেজ লেফট বিহাইন্ড হলে যাত্রীদের দুর্ভোগে পড়তে হয় সবচেয়ে বেশি। যাত্রীদের দুর্ভোগ কমাতে সবাই আলোচনা করেছে কীভাবে এই সমস্যা দূর করা যায়। পরে মন্ত্রণালয়ও বলেছে যেন হোম ডেলিভারি সেবা চালু করা হয়। এই সেবা চালুর ফলে বিমানবন্দরে আসা কোনো যাত্রীর ব্যাগ লেফট বিহাইন্ড হলে তার বাড়িতে ব্যাগ পৌঁছে দেবে সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইন্স। কোনো এয়ারলাইন্স হোম ডেলিভারি না দিলে সেই এয়ারলাইন্সকে গুণতে হবে জরিমানা।’

ব্যাগ না পেলে যাত্রীকে বিমানবন্দরে সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইন্সে অভিযোগ জানিয়ে নিজের ঠিকানা দিতে হবে। কোনো যাত্রীর ব্যাগে শুল্কযোগ্য পণ্য থাকলে সেক্ষেত্রে বিমানবন্দরে এসে তা পরিশোধ করে ব্যাগ সংগ্রহ করতে হবে।

কোনো এয়ারলাইন্স হোম ডেলিভারি দিতে ব্যর্থ হলে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন অনুসারে যাত্রী প্রতি ৫০ হাজার থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা দেওয়ার নিয়ম করেছে বিমান কর্তৃপক্ষ।

দেশের প্রধান এই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে প্রতিদিন ১৩০-১৫০টি ফ্লাইট ওঠানামা করে। বিভিন্ন দেশ থেকে এসব ফ্লাইটে বিদেশি, প্রবাসী বাংলাদেশিসহ হাজার হাজার যাত্রী ঢাকায় আসেন। এইসব যাত্রীদের তখনই বিপত্তিতে পড়তে হয় যখন ব্যাগেজ বেল্টের সামনে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে জানতে পারেন তার ব্যাগেজ একই ফ্লাইটে আসেনি।

এরপর সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইন্সে অভিযোগ জানিয়ে অপেক্ষা করতে হয় যাত্রীকে। ব্যাগেজ ফিরলে যাত্রীকেই ফের বিমানবন্দরে গিয়ে তার ব্যাগেজ সংগ্রহ করতে হয়। এতে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়তে হয় ঢাকার বাইরের যাত্রীদের।

লেফট বিহাইন্ড ব্যাগেজ নিয়ে যাত্রী হয়রানির কারণে বিভিন্ন সময়ে সালামএয়ার, কাতার এয়ারওয়েজ, এয়ার অ্যারাবিয়া, মালিন্দো, মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সসহ আরো কয়েকটি এয়ারলাইন্সকে জরিমানা করেছিল বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। সর্বশেষ গত ১২ সেপ্টেম্বর যাত্রীদের ব্যাগ দিতে না পারায় সালামএয়ারকে ১২ লাখ ২০ হাজার টাকা জরিমানা করে শাহজালালের ভ্রাম্যমাণ আদালত। সেদিন ফ্লাইটে ৬১ জন যাত্রীর ১০৮টি ব্যাগ লেফট বিহাইন্ড হয়।

‘লো কস্ট ক্যারিয়ার’ অর্থাৎ কমখরচে যাত্রী পরিবহন করা এয়ারলাইন্সগুলোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ব্যাগেজ লেফট বিহাইন্ড হওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) শাকিল মেরাজ বলেন, ‘ইচ্ছাকৃতভাবে কখনোই যাত্রীর ব্যাগ ফেলে রেখে আসা হয় না।… একটি গন্তব্যের ক্ষেত্রে জ্বালানি, যাত্রী, যাত্রীদের ব্যাগেজসহ বিমানের ওজন একটি নির্ধারিত মাত্রায় থাকে। অনেক সময় আবহাওয়া খারাপ থাকলে যাত্রাপথ দীর্ঘ হতে পারে। এ কারণে ব্যাগেজ কমিয়ে জ্বালানি তেল বেশি নেয়ার সিদ্ধান্ত নেন পাইলট। তখন কোনো কোনো যাত্রীর ব্যাগেজ লেফট বিহাইন্ড হয়। আবার কখনও যে দেশ থেকে যাত্রী আসছেন, সেই এয়ারপোর্টের সিকিউরিটি কোনো যাত্রীর ব্যাগ নিরাপত্তার কারণে চেকিংয়ে নিলেও লেফট বিহাইন্ড হতে পারে। চেকিংয়ের নির্ধারিত সময় পরে যখন যাত্রী আসেন তখন ব্যাগেজ হোল্ডে ক্লোজ হয়ে গেলে সেই যাত্রীর ব্যাগ লেফট বিহাইন্ড হতে পারে। যে দেশ থেকে যাত্রী আসছেন, সেই এয়ারপোর্টে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং অপারেটর যাত্রীদের ব্যাগ সময়মতো দিতে না পারলে, ভুল করে ফেলে রাখলে, অন্য ফ্লাইটে দিলেও লেফট বিহাইন্ড হয়।‘

শাহজালাল বিমানবন্দরের ভ্রাম্যমাণ আদালতে দেরিতে আসা ব্যাগেজ নিয়েই বেশি অভিযোগ আসে। দুই বছরের বেশি সময় ধরে এ সঙ্কট নিরসনে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বিমানবন্দরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ ইউসুফ।

তিনি বলেন, ‘এয়ারলাইন্সগুলোকে ব্যাগেজ লেফট বিহাইন্ড কমাতে নির্দেশনাও দেয়া হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে সাময়িক প্রতিকার হলেও ব্যাগেজ লেফট বিহাইন্ড বন্ধ করা যায়নি। বিভিন্ন এয়ারলাইন্স ন্যারোবডি (কম ধারণক্ষমতার) বিমান ব্যবহার করলেও ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতার কারণে যাত্রীদের ব্যাগেজ অ্যালাউইন্স বেশি দিতে হয়। কিন্তু ন্যারোবডি বিমানে সক্ষমতা না থাকার কারণে ব্যাগেজ লেফট বিহাইন্ড বেশি হয়। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য, সৌদি আরব ও মালয়েশিয়াসহ যেসব দেশে বাংলাদেশিরা বেশি, সেসব দেশের ক্ষেত্রে লেফট বিহাইন্ড বেশি হয়।‘

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো ব্যাগেজ হোম ডেলিভারি সেবা চালু করতে এয়ারলাইন্সগুলোকে ১ জুলাই পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়া হয়। পরবর্তী সময়ে এয়ারলাইন্সগুলো ১ অাগস্ট পর্যন্ত সময় বাড়ানোর অনুরোধ জানায়। এরপরও ব্যাগেজ লেফট বিহাইন্ড হওয়ার ঘটনা ঘটতে থাকায় জরিমানার পাশাপাশি হোম ডেলিভারি চালুর নির্দেশনাও দেয়া হয়।

এই সেবার বিষয়ে যাত্রীদের সচেতন করার কাজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চালাচ্ছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ ইউসুফ।

কোনো এয়ারলাইন্স যদি বিমানবন্দরে এসে যাত্রীকে ব্যাগ সংগ্রহ করতে বলে তবে ভ্রাম্যমাণ আদালতে যোগাযোগের অনুরোধও জানিয়েছেন তিনি।

পাঠকের মতামত

২ বাংলাদেশিকে গুলি করে মারল বিএসএফ, মরদেহ নিয়ে গেল ভারতীয় পুলিশ

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় খয়খাটপাড়া সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে দুই বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। পরে তাদের ...