উখিয়া নিউজ ডটকম
প্রকাশিত: ১৬/১১/২০২৫ ৯:৩২ এএম

মাহাবুবুর রহমান
রামু চাকমারকুল এলাকার বাসিন্দা প্রবাসী আবদুর রশিদ জানান,আমি ৯ বছর ধরে প্রবাসে আছি, সম্প্রতি আমার পেট ব্যাথা এবং পায়খানার রাস্তা দিয়ে রক্ত পড়ার কারনে আমি দেশে চিকিৎসা করতে এসেছি। প্রথমে কক্সবাজারের একজন মেডিসিন ও একজন সার্জারী ডাক্তারের পরামর্শে কিছুদিন ঔষধ খেয়েছি। এ সময় প্রায় ১৮ হাজার টাকা দিয়ে বিভিন্ন সময় আমি ১৭ টির মত প্যাথলজি পরীক্ষা করিয়েছি।

ডাক্তার বলেছে রিপোর্টে তেমন সমস্যা নাই। আগে ঔষধ খেয়ে দেখেন না হলে পরে অপারেশন লাগবে। এর মধ্যে এক আত্মীয়ের পরামর্শে ঢাকা গিয়ে আবার চিকিৎসা শুরু করি। সেখানেই পরীক্ষা করে তারা বলেছে গ্যাসট্রিক এবং আলসারের সমস্যা আছে। এখন ঔষধ খাচ্ছি কিছুটা ভাল লাগছে। আগের ঔষধের সাথে ঢাকায় দেওয়া ঔষধের কোন মিল নেই।

টেকপাড়া এলাকার বাসিন্দা রোকসানা আক্তার বলেন, দুই বছর আগে আমি ৫ মাসের অন্তসত্ত্বা অবস্থায় আমি ডিজিটাল হাসপাতাল থেকে একটি আলট্রসনোগ্রাফি করিয়েছিলাম ডাক্তার লামারী থেকে তার রিপোর্টে এসেছে বাচ্চা পেটের ভেতরে মারা গেছে, আর আমার পিত্রথলিতে পাথর আছে। আমাকে এবরশন করার পরামর্শ দিয়েছিল। পরে বাসায় এসে দেখি বাচ্চার নড়াচড়া বুঝা যাচ্ছে। পরের দিন হাসপাতালে গিয়ে ডাক্তার ওসমানুর রশীদ থেকে আবার আলট্রাসনোগ্রাফি করিয়েছি,রিপোর্টে এসেছে বাচ্চা সুস্থ আছে, পাথর ও নাই। তাহলে ডাক্তার লামারী আমাকে কিভাবে এরকম ভুল রিপোর্ট দিয়েছে বুঝে আসেনা।

বর্তমানে কক্সবাজার জেলা সদর হাপসাতালে ভর্তি রোগি মহেশখালী রমিজা বেগম বলেন,আমাকে কালারমারছড়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভুল রিপোর্টে শেষ করে দিয়েছে। সেই হাসপাতালে ৪/৫ টি প্যাথলজি পরীক্ষা করিয়েছি সব এখানে ভুল প্রমানিত হয়েছে। তিনি বলেন,মহেশখালীতে মাতারবাড়ির ডিজিটাল হাসপাতাল,জেনারেল হাসপাতাল,মহেশখালী থানার পাশে নিউরন,মহেশখালী আইল্যান্ড হাসপাতাল,হেলথ ডায়াগনস্টিক সবাই বেশির ভাগ সময় ভুল রিপোর্ট দিয়ে সাধারণ মানুষকে চরম ক্ষতিগ্রস্থ করছে।

এদিকে কক্সবাজার প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি এম জাবের বলেন,শিক্ষা এবং চিকিৎসা দুটি মহৎ পেশা হলেও বর্তমানে সেগুলো ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। কক্সবাজারের যে কয়েকটি নামী দামী হাসপাতাল আছে সেখানে কি আদৌ অভিজ্ঞ ডাক্তার বা প্যাথলজিস্ট দিয়ে পরীক্ষা নিরিক্ষা করা হয়। বরং খোঁজ নিলেই নিশ্চিত ধরা পড়বে কম বেতনে চুক্তি ভিত্তিক অনভিজ্ঞ লোকজন নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ডাক্তারের সীল মেরে দিচ্ছে।
এ ব্যাপারে চকরিয়া থানা রোড় এলাকার ব্যবসায়ি আসিফুল ইসলাম বলেন,চকরিয়াতে জমজম হাসপাতালের ডায়াগনস্টিক বিভাগ সিভিল সার্জন অফিস বন্ধ করে দিয়েছি পরে শুনেছি হাইকোর্ট থেকে আদেশ নিয়ে আবার চালু করেছে। এখানে ম্যাক্স হাসপাতাল ভুল রিপোর্ট দেওয়ার জন্য বিখ্যাত। এছাড়া চকরিয়ার শেভরন থেকে শুরু করে প্রতিটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে আমার জানা মতে কোন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করানো হয় না। এরা মাসে মাসে সিভিল সার্জন অফিসকে টাকা দিয়ে সব জায়েজ করে নেয়।

উখিয়া উপজেলার মরিচ্যা আল বারাকা হাসপাতালের এক কর্মকর্তা বলেন,সত্যি কথা বলতে জেলার কোন প্রাইভেট হাসপাতালে শতভাগ পরিপূর্ন নাই। সব কাগজে আছে বাস্তবে নাই।

এ ব্যাপারে উখিয়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহামদ বলেন, উখিয়া উপজেলার মধ্যে ওরিয়ন, অরজিন, পালং জেনারেল, ডিজিটাল হাসপাতাল, পালংখালী তাজমান,আলীফ হাসপাতাল,আলদীন সহ প্রতিটি স্টেশনে অনেক ডায়াগনস্টিক সেন্টার খোলে বসেছে। তবে আমার জানা মতে অনেকেরই লাইসেন্স নাই। কিন্তু ঠিকই পরীক্ষা নিরীক্ষা করাচ্ছে টাকা আয় করছে। এগুলো তদারকি করা সিভিল সার্জন অফিসের দায়িত্ব উনারা কিভাবে কি করে সেটা বোধগম্য নয়। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,প্রায় সময় ভুল রিপোর্টের কারনে রোগিরা বিপাকে পড়ছে এরকম খবর শুনতে হয়।

এ ব্যাপারে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডা: নুরুল আলম বলেন,ভুল ডায়াগনস্টিক রিপোর্ট শুধু রোগির ক্ষতি হচ্ছে তা নয়,ডাক্তারের চরম অসুবিধা হয়। কারন ভুল ঔষধ লিখে দিলে রোগির জীবন সংকটও হতে পারে। তাই এই গুরুত্বপূর্ন বিষয়ে সবাইকে সচেতন থাকা দরকার।

জেলা সদর হাসপাতালের সাবেক তত্বাবধায়ক ডা: বিধান পাল বলেন,সম্প্রতী মরিচ্যার রোমানা আক্তার নামের এক মহিলার টুইন বেবী আর সিঙ্গেল বেবী নিয়ে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে বেশ আলোচিত হচ্ছে। সেই অপারেশনের সময় আমি নিজে ছিলাম। আসলেই সেই মহিলার সিঙ্গেল বেবী ছিল। সেটা শিশুর পিতাও দেখেছে। সেই মহিলার ৩ বা ৪ টি আলট্রা রিপোর্ট ছিল সব খানে সিঙ্গেল বেবী কিন্তু একটি রিপোর্টে টুইন বেবী। এখানে একটি বিষয় আমি বলতে চাই ডায়াগনস্টিক শতভাগ সঠিক হবে সেটা কিন্তু কখনো নয়। আল্লাহর উপরে বিশ্বাস থাকতে হবে। তবে এ সব বিষয়ে যথাযত কর্তৃপক্ষ আরো নজরদারী এবং যারা দায়িত্ব নিয়ে কাজ করছেন উনাদের আরো দায়িত্ববান হওয়া উচিত। কারন একটি ভুলের উপর অনেক কিছু নির্ভর করে।

এ ব্যাপারে কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা: মাহমুদুল হক বলেন, কোন ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ভুল রিপোর্ট বা এজাতীয় কোন বিষয়ে কেউ অভিযোগ করলে আমরা ব্যবস্থা নিতে সুবিধা হয়।

তবে সিভিল সার্জনের এমন বক্তব্য প্রত্যাখান করে সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন জেলা কমিটির সহ সভাপতি হোসাইনুল ইসলাম মাতবর বলেন,প্রতিটি প্রাইভেট হাসপাতালে অভিজ্ঞ এবং নিয়োগপ্রাপ্ত ডাক্তার নিয়ে প্যাথলজি রিপোর্ট হচ্ছে কিনা সেটা দেখার দায়িত্ব সিভিল সার্জনের,কেন মানুষ অভিযোগ করবে উনাদের দায়িত্ব উনারা পালন করাটা উচিত ।

পাঠকের মতামত