প্রকাশিত: ১৬/১১/২০২১ ৯:৪২ এএম

এক শ বছরের পুরোনো চট্টগ্রামের কালুরঘাট সেতুকে ২০ বছর আগেই ঝুঁকিপূর্ণ বলে ঘোষণা দিয়েছিল খোদ রেলওয়ে। ওই ঘোষণায় বলা ছিল, ১২ টন ওজনের ভারবহন ক্ষমতার (লোড এক্সেল) বেশি ট্রেন এই সেতুতে কোনোভাবেই চালানো যাবে না। বার বার পাটাতনের কাঠ পাল্টানোয় ঝুঁকি বৃদ্ধি, বয়সের কারণে বড় পিলার, স্প্যান নড়বড়ে হয়ে পড়াসহ কয়েকটি সুনির্দিষ্ট কারণে ২০০১ সালেই এই ঘোষণা দেয় রেলওয়ে।

কিন্তু সেই জরাজীর্ণ রেলসেতু দিয়েই চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ট্রেন চালানোর পরিকল্পনা করছে সরকার। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের একটি পরামর্শকদল গত মাসে কালুরঘাট রেলসেতু পরিদর্শন করে গেছে। দলটি এই সেতুতে ভারবহন ক্ষমতার তুলনায় ৩-৪ টন বেশি অর্থাৎ ১৫-১৬ টন এক্সেল লোডের ট্রেন চালানোর উপযুক্ততা যাচাই করে গেছেন বলে রেল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। তবে এ নিয়ে কথা বলতে রাজি হননি পরামর্শক দলের প্রধান অধ্যাপক ড. আ খ ম সাইফুল আমিন।

রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন গত ২৩ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারের নির্মাণাধীন আইকনিক রেলস্টেশন পরিদর্শন করেন। সেখানে তিনি ঘোষণা দেন, আগামী বছরের ডিসেম্বরে অর্থাৎ ১৩ মাস পরই চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার ট্রেন চলাচল শুরু হবে। রেল কর্মকর্তারা বলছেন, ট্রেন চালাতে হলে পুরোনো সেই কালুরঘাট সেতু ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। পুরোনো সেতু বাদ দিয়ে নতুন সেতু বানাতে হলে সময় লাগবে অন্তত ৫-৬ বছর।

রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (সেতু) মো. আহসান জাবির আজকের পত্রিকাকে জানান, বুয়েটের পরামর্শক দল কালুরঘাট সেতু পরিদর্শন করে গেলেও কোনো আর্থিক ও কারিগরি প্রস্তাবনা দেননি। কালুরঘাট সেতু মেরামতের প্রস্তাবনা প্রক্রিয়াধীন। চট্টগ্রাম রেলওয়ের প্রধান প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে গত ২১ জুন বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগে দেওয়া এক পত্রে বলা হয়, ১৯৩১ সালে তৈরির পর থেকেই চট্টগ্রাম বোয়ালখালীর কালুরঘাট সেতুতে ট্রেন চলছে। প্রায় ৩০ বছর পর ১৯৬২ সালে সেতুটিতে পিচ ঢালাই করে ট্রেন ও সড়ক যান উভয় চলাচলের ব্যবস্থা হয়। বর্তমানে কালুরঘাট রেলওয়ে সেতুতে ১১ দশমিক ৯৬ টনের লোড নিয়ে ছোট ইঞ্জিন, ছোট কোচ ১০ কিলোমিটার গতিবেগে চলাচল করে। সম্প্রতি রেলের জন্য আমদানি করা আধুনিক ইঞ্জিনসমূহ ১৫-১৬ টনের এক্সেল লোড সমৃদ্ধ। যার কারণে নতুন সেতু নির্মাণ ছাড়াই বিদ্যমান সেতু দিয়ে ভারী ইঞ্জিন/কোচ চালানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। সেতুটি মেরামত করতে দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি কারিগরি ও আর্থিক প্রস্তাবনা দেওয়া হয় ওই পত্রে।

ঊর্ধ্বতন এক রেল কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে বলেন, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন নতুন। এতে ভারবাহন ক্ষমতা বাড়ানো আছে। তবে কালুরঘাট সেতুর ভারবাহন ক্ষমতা কম। তাই এখন প্রশ্ন উঠছে ২০২২ সালের মধ্যে যদি ট্রেন যায়, তাহলে এই সেতু দিয়ে নতুন ট্রেন কীভাবে যাবে? কারণ নতুন কোচ ও লোকোমোটিভের ভারবাহন ক্ষমতা বেশি। তাই ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেল চলাচলে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। জোড়াতালি দিয়ে ট্রেন চলাচল শুরু হলেও ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলযাত্রীদের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হবে।

কালুরঘাট সেতুর দৈর্ঘ্য ৬৩৮ মিটার, স্প্যান ১৯টি। বর্তমানে জরাজীর্ণ অবস্থায় সেতুটিতে ট্রেন ও যানবাহন চলাচল করছে। এই সেতুর সমান্তরালে ৮০ মিটার উজানে ৭২০ মিটার দীর্ঘ একটি নতুন রেল সেতু নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

প্রসঙ্গত এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) ও বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালে। সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্পটিতে আগস্ট পর্যন্ত কাজ শেষ হয় ৬২ শতাংশ। ২০২২ সালের জুনের মধ্যে এই প্রকল্পটির কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতা ও করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে প্রকল্পের নির্মাণ সময় বাড়িয়ে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়েছে। আজকের পত্রিকার সৌজন্যে

পাঠকের মতামত