প্রকাশিত: ২১/০৫/২০১৮ ১১:৫৭ পিএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ২:৩৯ এএম

ডেস্ক নিউজ : মাদকের থাবায় দেশ। গ্রাম থেকে শহর, ঘর থেকে বাইরে, কোথায় নেই মাদকের ছোবল! সর্বনাশা নেশার কবলে বিপর্যস্ত তারুণ্য। নেশার টানে সোনালি স্বপ্নগুলো কখন ধোঁয়াশায় মিলে যাচ্ছে, তা জানতেই পারছে না স্বপ্নবাজ তরুণরা। সাজানো ঘর ভেঙে তছনছ! বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, খুন, ছিনতাই, ধর্ষণ এসব অপরাধের মূলে রয়েছে মাদক।

মাদকবিরোধী অভিযান হয় পরম্পরায়। আবার মাদক নিয়েই রাজনীতি হয়, হয় ভয়ঙ্কর ব্যবসাও। মাদকের ছড়াছড়ি আর অভিযান যেন পরিপূরক। অভিযানকালেই মাদকের ব্যাপকতা সামনে আসে, আবার মাদকের বিস্তারেই অভিযান গুরুত্ব পায়। আর মাদকের ভয়াবহতায় সব অভিযানই যেন বুমেরাং হয়। গেল দু’দিনে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত ১৫ জনের অধিকাংশই মাদক পাচারকারী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়ার কথা বলার পরেই সাঁড়াশি অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ ও র‌্যাব। মাদকের বিরুদ্ধে কঠোরতা প্রকাশ করে র‌্যাবের মহাপরিচালকও বক্তব্য দিয়েছেন। মাদকবিরোধী এই অভিযানে স্বস্তি মিলছে জনমনে। প্রশংসা কুড়িয়েছেন অভিযান পরিচালনাকারীরা। আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে মাদক বিক্রেতা ও মাদকসেবীদের মধ্যে।

তবে প্রশংসা কুড়ালেও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে মাদকবিরোধী চলমান এই অভিযান নিয়ে। প্রশ্ন, তৃণমূলের অপরাধীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে আসলে কতটুকু সফলতা আসবে? ছিন্নমূল গোছের এই ব্যবসায়ীদের যারা পৃষ্ঠপোষক, তাদের কি হবে? রাজনীতিক, সংসদ সদস্য ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর যারা মাদক পাচারের সঙ্গে সম্পৃক্ত তাদের ব্যাপারে সরকারের সিদ্ধান্ত কী? পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ নুরুল আনোয়ারের সঙ্গে কথা হয় মাদকবিরোধী অভিযান প্রসঙ্গে। তিনি বলেন, ক্রসফায়ারে যদি অপরাধ নির্মূল করা সম্ভব হতো, তাহলে তো খুন, ধর্ষণের মতো অপরাধ সংঘটিত হতো না। ১৫ বছর আগে ক্রসফায়ার নীতি চালু হয়েছে। অথচ এত দিনে সমাজে অপরাধের মাত্রা বাড়ছে। তিনি বলেন, সরকার বা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী চাইলে এক পিস ইয়াবাও সীমানা পার হয়ে বাংলাদেশে আসবে না।

তবে অভিযানে জনমনে স্বস্তি মিলেছে বলে দাবি করেছেন মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক জামাল উদ্দীন আহমেদ। তিনি বলেন, যে কোনো উপায়ে মাদক নির্মূলে চেষ্টা অব্যাহত রাখব। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর কেন সাঁড়াশি অভিযান- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে আমরা শক্ত অবস্থান আগে থেকেই নিয়ে আসছি। তবে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। তৃণমূল ব্যবসায়ীদের সাজার আওতায় আনা হচ্ছে কিন্তু যারা মাদক পাচারকারীদের পৃষ্ঠপোষক বা বড় হোতা তাদের ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত? জবাবে জামাল উদ্দীন বলেন, চলমান অভিযান সর্বাত্মক। মাদকের ভয়াবহতা থেকে রক্ষা পেতে এমন অভিযানের বিকল্প ছিল না। যার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তার বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা। ক্রসফায়ারে মাদক বিক্রেতাদের নিহতের ঘটনায় সমাজে কোনো অস্থিরতা তৈরি করবে না বলেও মত দেন তিনি।

তবে এ ক্ষেত্রে ক্রসফায়ার কোনো সমাধান নয় বলে মন্তব্য করেছেন পুলিশের সাবেক মহপরিদর্শক মোহাম্মদ নুরুল আনোয়ার। তিনি বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে অভিযানের কথাও প্রধানমন্ত্রীকে বলতে হচ্ছে। তাহলে রাষ্ট্রের অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধানদের কাজ কী? ধরে আনার পর ক্রসফায়ারে যেসব মাদক বিক্রেতা মারা যাচ্ছেন, তারা আসলে মাদক রাজ্য নিয়ন্ত্রণে কতটুকু ভূমিকা রাখেন, তা ভাবনার বিষয়। মাদক পাচারের সঙ্গে সংসদ সদস্য ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু সদস্যের জড়িত থাকার অভিযোগ আসছে। গণমাধ্যমে প্রতিনিয়ত খবর আসছে এসব অভিযোগ নিয়ে। বিজিবি বা সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হাত ধরেই এ দেশে ইয়াবার প্রবেশ উল্লেখ করে পুলিশের সাবেক এই শীর্ষ কর্তা বলেন, ইয়াবার তো হাত-পা নেই। অবশ্যই কেউ না কেউ সীমানার ওপার থেকে বহন করে আনেন। আর সেটা সীমান্তরক্ষী বাহিনীর অজানা থাকার কথা নয়।

মাদক পাচার ও বেচাকেনার সঙ্গে পুলিশও সম্পৃক্ত দাবি করে মোহাম্মদ নুরুল আনোয়ার বলেন, কারা মাদক বিক্রেতা আর কে মাদক সেবন করছেন, তার বেশির ভাগ তথ্যই পুলিশের কাছে থাকার কথা। এক হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করলে বিশ পিসের হিসেব মেলে পুলিশের কাছে। মাদক উদ্ধার করে বাণিজ্য, মাদব বিক্রেতা আটক করে বাণিজ্য, ছেড়ে দিয়েও বাণিজ্য। পুলিশ বাণিজ্য করছে মাদকসেবীদের নিয়েও। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সবাই এই অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। কিন্তু যারা সম্পৃক্ত তাদের ব্যাপারে কী ব্যবস্থা নিচ্ছে সরকার? মাদক বিক্রেতাদের ক্রসফায়ারে নিহত হওয়ার প্রসঙ্গে বলেন, এটি সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টি করবে। ছোট অপরাধের জন্য বড় সাজা কোনো সফলতা আনতে পারে না। ব্যক্তিগত রেষারেষি থেকেও অনেকে এই ক্রসফায়ার ইস্যু ব্যবহার করার সুযোগ খুঁজবেন। মাদক নির্মূলে সমস্যার মূলে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, শুধু প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা কুড়ানোর জন্য অভিযান পরিচালনা করলে সমাধান মিলবে না। সর্বস্তরের অপরাধীর ব্যাপারেই কঠোর হতে হবে। সবার আগে সামাজিক সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। মনে রাখতে হবে ইয়াবা আসার পর মাদকের ধারণা পাল্টে গেছে। এখনই এর ভয়াবহতা নিয়ে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ- এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, মাদকের ভয়াবহতা আমরা ইতোমধ্যেই লক্ষ্য করছি। মাদক নির্মূলে কঠোর অবস্থানের কোনো বিকল্প নেই। ক্রসফায়ার প্রসঙ্গে বলেন, প্রত্যেক অপরাধীকে আইনের আওতায় আনা রাষ্ট্রীয় নীতি। কিন্তু আত্মপক্ষ সমর্থন করাও নাগরিকের মৌলিক অধিকার। একজন খুনিও বিচারের মুখোমুখি হওয়ার সুযোগ পাওয়ার অধিকার রাখেন। বিনা বিচারে সাজা বা হত্যা সমাজের জন্য কোনো শুভ খবর না।

পাঠকের মতামত

মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির আশা বাংলাদেশ-গাম্বিয়ার

রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে করা মামলার দ্রুত নিষ্পত্তিতে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে বাংলাদেশ ও গাম্বিয়া। ...

কারামুক্ত হলেন মামুনুল হক

হেফাজতে ইসলামের সাবেক কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক কারামুক্ত হয়েছেন। শুক্রবার (৩ মে) সকাল ...

সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী উখিয়ায় হবে উন্মুক্ত কারাগার, শিগগির নির্মাণ শুরু

উন্নত দেশের ন্যায় বাংলাদেশে উন্মুক্ত কারাগার নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ...